আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন আজ। রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করা হয়েছে এর আয়োজন। দলটির এবারের সম্মেলনে ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় তুলে ধরা হবে। বিষয়টি সামনে রেখেই এবারের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে—‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়’।
দলের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি সূত্রে জানা গেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সকাল সাড়ে ১০টায় শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের পর কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে আসবেন। তার পরই শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পরে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করবেন দলের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ওবায়দুল কাদের। স্বাগত বক্তব্য দেবেন অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম। সভাপতির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন।
উদ্বোধনী পর্বের পর বিকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শুরু হবে কাউন্সিল অধিবেশন। সেখানেই দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করবেন কাউন্সিলররা। নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য আগেই তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। সেই দায়িত্বে আছেন ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ও মশিউর রহমান।
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে কাজ করছে মোট ১১টি উপকমিটি। প্রথা অনুযায়ী, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ও সদস্য সচিব সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আয়োজন সফল করতে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কাজ করছেন। দাওয়াতপত্র বিতরণ, গঠনতন্ত্র সংযোজন-বিয়োজন, ঘোষণাপত্র পরিমার্জন, মঞ্চ সাজসজ্জাসহ আনুষঙ্গিক সব কাজই শেষ করেছেন তারা। দলের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে সারা দেশ থেকে প্রায় সাত হাজার কাউন্সিলর ও লক্ষাধিক নেতাকর্মী অংশ নেবেন।
আওয়ামী লীগের মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপকমিটির সদস্য সচিব ও দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুর ওপর নৌকার আদলে ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪৪ ফুট প্রস্থের মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। মঞ্চটির উচ্চতা ৭ ফুট। মূল মঞ্চে চেয়ার সাজানো হচ্ছে চার ভাগে। প্রথমে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বসবেন। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, জ্যেষ্ঠ নেতা ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা বসবেন পরের ধাপে। বাকি দুই ভাগে বসবেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। মোট ১২০টি চেয়ার রাখা হবে। এছাড়া পর্যাপ্ত এলইডি মনিটর থাকবে, যেখানে সম্মেলনের সব কার্যক্রম দেখা যাবে।
সম্মেলনের মূল মঞ্চের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক পর্বের জন্য তৈরি করা হয়েছে আলাদা মঞ্চ। এছাড়া আওয়ামী লীগের ৭৩ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার ২২তম সম্মেলনে যুক্ত হয়েছে ‘থিম সং’। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত গীতিকবি জুলফিকার রাসেলের গীতিকাব্যে এ থিম সংয়ে সুর তুলেছেন দেশের খ্যাতনামা কয়েকজন কণ্ঠশিল্পী। ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার পরিকল্পনায় গানটির সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন পাভেল আরিন। এতে মোহনবীণা বাজিয়েছেন গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী ভারতের কিংবদন্তি শাস্ত্রীয় সংগীত ব্যক্তিত্ব পণ্ডিত বিশ্ব মোহন ভাট। কণ্ঠ দিয়েছেন পান্থ কানাই, চন্দনা মজুমদার, দিলশাদ নাহার কণা ও মাশা ইসলাম। ইয়াসির মাহমুদ খানের সমন্বয়ে চিত্র পরিচালনা করেছেন ইশতিয়াক মাহমুদ। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল, যার নেতৃত্বে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। দলের দীর্ঘ ৭৩ বছরের ইতিহাসে অসংখ্য জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। খুঁজলে একেকটি সম্মেলনে একটি ব্যতিক্রমী আয়োজন যে কারো চোখে পড়বে। তবে এবারই প্রথম দলের দপ্তর বিভাগ থেকে একটি থিম সং করা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের গত কয়েকটি সম্মেলন হয়েছে দুদিনব্যাপী। সর্বশেষ সম্মেলনটিও হয় ২০১৯ সালের ২০ ও ২১ ডিসেম্বর। তবে এবার বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কিছুটা কৃচ্ছ্রসাধনের লক্ষ্যে সম্মেলন করা হচ্ছে একদিন, অনেকটাই সাদামাটা। এ আয়োজনের বাজেট ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা। তাই এ বছর আর বিদেশের কোনো প্রতিনিধিকে দাওয়াত করা হচ্ছে না। তবে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন গতকাল দুপুর ১২টার দিকে নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেন। বিএনপির পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স তা গ্রহণ করেন।
পরে সায়েম খান সাংবাদিকদের কাছে বলেন, ‘আমরা প্রত্যেক রাজনৈতিক দলকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। বিএনপির তিনজন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খানকে আজকে (গতকাল) আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তাদের কার্ড আমরা পৌঁছে দিয়েছি।’
এছাড়া জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ, জাতীয় পার্টি (জেপি), সাম্যবাদী দলসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব দলকেই তাদের সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে অভ্যর্থনা উপকমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিদেশের কোনো প্রতিনিধিকে দাওয়াত না করা হলেও বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এদিকে সম্মেলন ঘিরে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে অংশগ্রহণকারীদের ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষে ঢাকা মহানগরের যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। ডিএমপির নির্দেশনা অনুযায়ী, ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিতব্য উদ্বোধনী অধিবেশনে আমন্ত্রিত অতিথি, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধি, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্যরা এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন-সংলগ্ন অথবা ‘শিখা চিরন্তন’ গেট দিয়ে প্রবেশ করবেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মধ্যে কোনো প্রকার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় সবার ব্যক্তিগত গাড়ি ডিএমপির নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত স্থানে পার্ক করতে হবে। এছাড়া সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সব কাউন্সিলর, ডেলিগেট ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রবেশ করতে হবে বাংলা একাডেমি, রমনা কালীমন্দির, টিএসসি ও চারুকলা অনুষদসংলগ্ন গেট দিয়ে।
পার্কিং এলাকা : মুহসীন হল মাঠ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ভিআইপি); মল চত্বর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; পলাশী ক্রসিং থেকে ভাস্কর্য ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে; ফুলার রোড রাস্তার দুই পাশে; দোয়েল চত্বর ক্রসিং থেকে শহীদুল্লাহ হল ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে; সবজিবাগান থেকে নেভাল গ্যাপ পর্যন্ত; সুগন্ধা থেকে অফিসার্স ক্লাব ক্রসিং পর্যন্ত; হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল গলি; নেভাল গেট এলাকা; ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের বিপরীত পাশে; মিন্টো রোড ক্রসিং থেকে পুলিশ ভবন ক্রসিং এবং দিলকুশা ও মতিঝিল এলাকার রাস্তার দুই পাশে।
সম্মেলন ঘিরে যেসব রাস্তা বন্ধ থাকবে: আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের কিছু এলাকায় রাস্তা বন্ধ থাকবে। আবার কিছু এলাকায় রোড ডাইভারশন দেয়া হবে বলে জানিয়েছে ডিএমপি। এর মধ্যে কাঁটাবন, ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল, কাকরাইল মসজিদ, কাকরাইল চার্চ, ইউবিএল, হাইকোর্ট, দোয়েল চত্বর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার, জগন্নাথ হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভাস্কর্য ও উপাচার্য ভবন ক্রসিং এলাকায় রাস্তা বন্ধ ও রোড ডাইভারশন দেয়া হবে। এদিন নগরবাসীকে এসব এলাকার রাস্তায় চলাচল না করে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করতে অনুরোধ করেছে ডিএমপি।