আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চোখ ২০০ আসনে, লক্ষ্য ১৬০ - দৈনিকশিক্ষা

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চোখ ২০০ আসনে, লক্ষ্য ১৬০

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আগামী সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার চাপ রয়েছে। বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করছে। অন্যদিকে বিদেশিরা জোর দিচ্ছে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ওপর। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়েই দেখছে। আগের দুবারের মতো এবার যে আর নির্বাচন করা যাবে না সেই বার্তাও ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বকে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ ওই দুবারের ফলাফল বাদ দিয়ে আগের নির্বাচনগুলোর ফল বিশ্লেষণ করেছে। চালিয়েছে দুটি জরিপ। এ জরিপ ও বিশ্লেষণ ধরে ২০০ আসনে নজর দিয়েছে দলটি। এর মধ্যে তাদের লক্ষ্য অন্তত ১৬০ আসন। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের চার নেতার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানা গেছে। সোমবার (৩ এপ্রিল) দেশ রুপান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এথ্য জানা যায়।  প্রতিবেদনটি লিখেছেন পাভেল হায়দার চৌধুরী।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, নবম সংসদ নির্বাচন ২০০৮ সালে ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বড় বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ। এরপর দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে। কিন্তু দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে ফলাফল কোনো মানদ-েই ফেলছে না দলটি। দুটি নির্বাচনের ফল আমলে আনছে না ক্ষমতাসীনরা।

দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের চার নেতা বলেন, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মাঠপর্যায়ে দুটি জরিপ হয়েছে। এ ছাড়া আগের নির্বাচনগুলোর ফল বিশ্লেষণ করে ভোটের চিত্র দেখা হয়েছে। দশম (২০১৪) ও একাদশ (২০১৮) নির্বাচনের যে ফলাফল তা বিবেচনায় না এনে আমলে নেওয়া হচ্ছে ১৯৯১, ১৯৯৬ (জুন), ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনের ফলের ওপর। কারণ ওই দুটি নির্বাচনের ফলাফল ছিল অস্বাভাবিক। তা আমলে নিলে বিচার-বিশ্লেষণ নির্মোহ হবে না বলে দাবি করেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ওই নেতারা।

তারা বলেন, মাঠপর্যায়ে একেবারেই নতুন করে খুব অল্প সময়ে আসনভিত্তিক দুটি জরিপ কাজ শেষ হয়েছে। তার ভিত্তিতে তারা ২০০ আসন টার্গেট করেছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘একাধিক উপায়ে জরিপ চলে। এগুলো সর্বোচ্চ পর্যায়ে থেকে দেখভাল করা হয়।’

সভাপতিম-লীর আরেক সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘জরিপ একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময়ে আপডেট থাকতে চান। কোথায় কী অবস্থা তা পরিষ্কার করে জানতে অনেক মাধ্যম ব্যবহার করা হয়।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, এই মুহূর্তে ১৮০ থেকে ২০০ আসনের জয়ের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। তাই নিশ্চিত আসন ও অল্প ঝুঁকির আসনগুলো জরিপ করে চিহ্নিত করা হয়েছে। জরিপে অভিজ্ঞ দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান এ কাজ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব একটি টিমও জরিপ করেছে। জরিপ কাজ সরাসরি মনিটরিং করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থাও নিজস্ব কৌশল ব্যবহার করে জরিপ চালাচ্ছে।

ওই নেতা বলেন, ‘১৯৯১ সালের পর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে আসন ভিত্তিক ফলাফলের ওপর জরিপ ও গবেষণা চলছে। এ ক্ষেত্রে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলে কোথায় বড় ব্যবধানে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন, কোথায় অল্প ব্যবধান ছিল সেটাও দেখা হচ্ছে। আবার কোন কোন নির্বাচনে অল্প ব্যবধানে হেরেছে আবার বড় ব্যবধানে হেরেছে তা নিয়েও কাজ চলছে। তবে ঢাকা বিভাগ, রংপুর বিভাগ, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে একচেটিয়া জয়লাভ করবে, এমন আভাস পাওয়া গেছে জরিপে। অন্য তিনটি বিভাগ চট্টগ্রাম, রাজশাহী খুলনা বিভাগেও আসন পাওয়া যেতে পারে। তবে সংখ্যায় কম।

অন্য একটি সূত্র জানায়, অল্প ও বড় ব্যবধানে জেতা এবং একেবারে কম ব্যবধানে পরাজিত আসন ধরে ২০০ আসনে আওয়ামী লীগের জয়ের সম্ভাবনা আছে। ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে যেসব আসনে ওই চারটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছে সেসব আসনকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।

ওই সূত্র জানায়, ২০০ আসনে ভালো ফলাফলের সম্ভাবনা দেখলেও এর মধ্যে ১৬০ বা তার অধিক আসন নিয়ে সন্তুষ্ট থেকেই সামনে এগোবে সরকারি দল।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, জরিপে দেখা গেছে, ১৬০ আসনে ভালোভাবে জেতার সম্ভাবনা আছে। বাকি আসনে কোনোরকমে জিততেও পারে অথবা হারতেও পারে। ১৬০ আসন পেতেই হবে, সে লক্ষ্যে জোরালো প্রস্তুতি ও গুরুত্বসহকারে কাজ করার পরিকল্পনা সবই নেওয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বলেন, ‘সম্ভাবনা দেখতে পাওয়া আসনগুলোকে লক্ষ্য করে এবার আমরা বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা রেখেছি। এর মধ্যে মনোনয়নের ব্যাপারটিতে সংবেদনশীল থাকবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড। যেসব এলাকায় সংসদ সদস্যদের বদনাম আছে তাদের পরিবর্তন করে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নতুন প্রার্থী দেওয়া হবে।’

প্রবীণ এ নেতা আরও বলেন, প্রত্যেক নির্বাচনেই প্রার্থী দেখলে বোঝা যায় প্রার্থী পরিবর্তন থাকেই। এবার অন্যবারের চেয়ে প্রার্থী বদলানো বাড়তে পারে। কারণ বিতর্কিত প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হলে তাদের সমালোচনা যেমন হয় ওই সমালোচনা নির্বাচনে দলের বিরুদ্ধেও যায়। কিন্তু প্রার্থী বদলে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির প্রার্থী বেছে নিলে বিতর্কিত প্রার্থীর সমালোচনা ভুলে নতুন প্রার্থীর আলোচনা সামনে চলে আসে। সমালোচনা ভুলে গিয়ে আলোচনায় আসাটাকে পুঁজি করতে নতুন প্রার্থীর ব্যাপারে ইতিবাচক শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দলীয় মনোনয়ন বোর্ড। ফলে গুরুতর সমালোচনা ও বদনাম থাকা প্রার্থীর মনোনয়ন অনিশ্চিত এটাই দলীয় সিদ্ধান্ত।

সম্পাদকম-লীর এক সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করছে, বিতর্কিতদের বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে মানুষ পুরনো কথা এমনিতেই ভুলে যাবে। বরং প্রার্থী চমক থাকলে তাকে নিয়েই আলোচনায় মেতে থাকবে মানুষ। জাতীয়ভাবেও সেটা আলোচনার জন্ম দেবে। বিতর্কিত সংসদ সদস্যকে বাদ দিলে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড আলোচনায় থাকে না। তাই প্রার্থী পরিবর্তন করে সুফল নিতে চায় আওয়ামী লীগ।

দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের এক বৈঠকে এমন আলোচনার কথা তুলে ধরে সভাপতিম-লীর আরেক সদস্য বলেন, বিতর্কিতদের মনোনয়ন দেওয়া হলে তাদের কর্মকা- নিয়ে গণমাধ্যম ও স্থানীয় লোকজন সমালোচনা করবে। তার প্রভাব পড়বে ভোটের মাঠে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের তিন নেতা বলেন, উপনির্বাচনগুলোতে পরীক্ষামূলক নতুন প্রার্থীদের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মূলত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে। তাতে ফলও ভালো এসেছে বলে মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। সর্বশেষ চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন এরই নজির।

দলীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের বিগত সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া নিয়ে কথা হয়। সেখানে একাধিক সদস্য দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে বলেছেন, যার বদনাম আছে, দলের সঙ্গে ঝামেলা আছে তাকে মনোনয়ন না দিয়ে আরেকজনকে যেন দেওয়া হয়।

দলের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য দলীয় প্রধানের উদ্ধৃতি দিয়ে  বলেন, দলীয় কোন্দলের বিষয়টি শেখ হাসিনার মাথায় আছে। তিনি বারবার দলীয় কোন্দল মেটাতে বলেছেন। না হয় কোন্দলে জড়িত পক্ষের কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। সে ক্ষেত্রে তৃতীয় একজনের মনোনয়ন পাওয়ার সুযোগ বেশি।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ রাজনীতির স্বার্থেই একটা ভালো নির্বাচন চায়। কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শক্তিশালী বিরোধী দল প্রয়োজন। সেটা এখন নেই। আমরাও এখন চাই একটি শক্তিশালী বিরোধী দল। তাহলে অনেক ক্ষেত্রে না চাইলেও কম্প্রোমাইজ (আপস) করতে হচ্ছে সরকারকে।’

সভাপতিমণ্ডলীর ওই সদস্য বলেন, ‘আমাদের সরকার এখন একটা ভালো নির্বাচন চায়। সে ক্ষেত্রে ক্ষমতায় থাকতে পারার মতো আসন পেলেও চলবে, এ নীতি নিয়ে এগোনো হচ্ছে। তবে সংসদে আস্থা-অনাস্থার সম্ভাবনা যাতে না থাকে তার জন্য দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন পক্ষে থাকলে নিশ্চিত থাকা যায়।’

জঙ্গি ছাত্রশিবির, ছাত্রদল সব নষ্টের চেষ্টা করেছে: আইনমন্ত্রী - dainik shiksha জঙ্গি ছাত্রশিবির, ছাত্রদল সব নষ্টের চেষ্টা করেছে: আইনমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ভর করে ধ্বংসযজ্ঞ: নৌবাহিনী প্রধান - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ভর করে ধ্বংসযজ্ঞ: নৌবাহিনী প্রধান কোটা সংশোধনের প্রজ্ঞাপন জারি: সব গ্রেডের চাকরিতে কোটায় ৭ - dainik shiksha কোটা সংশোধনের প্রজ্ঞাপন জারি: সব গ্রেডের চাকরিতে কোটায় ৭ তিন শতাধিক পরীক্ষা পেছানোয় শিক্ষায় স্থবিরতা - dainik shiksha তিন শতাধিক পরীক্ষা পেছানোয় শিক্ষায় স্থবিরতা শিক্ষা ক্যাডারদের এমপিওর তথ্য মেলেনি আজও - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারদের এমপিওর তথ্য মেলেনি আজও দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে  - dainik shiksha please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0056400299072266