আগামী নির্বাচন ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের মতো হলে মানুষ বিক্ষুব্ধ হবে - দৈনিকশিক্ষা

আগামী নির্বাচন ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের মতো হলে মানুষ বিক্ষুব্ধ হবে

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট রাজনৈতিক দলগুলোকেই সমাধান করতে হবে বলে মনে করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ। তিনি বলেন, কোনো বিদেশি শক্তির কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে খুব বেশি কিছু করার নেই। তারা বিভিন্ন পরামর্শ দিতে পারে কেবল। তাই নিজেদের রাজনৈতিক সংকট নিজেদেরই সমাধান করতে হবে। তার জন্য দেশের বড় দুই রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে আলাপ-আলোচনা হতে পারে। এর জন্য বিএনপিকে এক রোখা মনোভাব থেকে সরে আসতে হবে। সরকারের পদত্যাগসহ তাদের দাবিগুলো যদি মানাই হয় তাহলে তো সংলাপের প্রয়োজন নেই। তাই আগে সহনশীল মনোভাব দেখাতে হবে। আর আগামী নির্বাচন ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের মতো হলে মানুষ বিক্ষুব্ধ হবে। তাই সরকারকে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। ৫ মে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে এ তথ্য জানা যায়। 

 

তিনি বলেন, অন্যদিকে বিএনপি যদি ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের মতো নির্বাচন বর্জন করে তাহলে দল হিসেবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেবে। 

বাংলাদেশের রাজনীতির স্বরূপ বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, এ দেশের রাজনীতির স্বরূপ সাংঘর্ষিক। এর মূলে রয়েছে ১৯৭১ ও ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দ। ’৭১ ছিল মুক্তিযুদ্ধে জাতির জন্য দেশপ্রেমের সর্বোচ্চ পরীক্ষা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে সময় কতিপয় দল ও ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে। শুধু বিরোধিতা করেই ক্ষান্ত হয়নি। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়ে গণহত্যায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে। ’৭১-এ অধিকাংশ মানুষ মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার পক্ষে থাকলেও সংখ্যায় কম হলেও একটা গোষ্ঠী এর বিরোধিতা করেছে। দ্বিতীয় বিভাজনটা ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা। শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি; বিচার না হওয়ার জন্য ইনডেমনিটি আইন করেছে। পরবর্তীতে ৩রা নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা হয়। 

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হারুন-অর-রশিদ বলেন, দেশে যে রাজনৈতিক শক্তি রয়েছে এর মূল ভিত্তি হলো আদর্শিক। যখন দ্বন্দ্বটা আদর্শের তখন এদের মধ্যে ঐক্যের কোনো সম্ভাবনা দেখি না। দুই দলের মধ্যে সাংঘর্ষিক সম্পর্ক হওয়ায় সমঝোতার কোনো পথ নেই। কখনো কখনো শেখ হাসিনা হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বিএনপি সেটি গ্রহণ করেনি। এখনো বিএনপি বলছে- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, সরকারকে পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা। এতগুলো দাবি তুলে ধরার অর্থ হলো সংলাপের পথ বিএনপি নিজেই বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ সে নিজেই একটা উপসংহার টেনে দিয়েছে। যদি এসব করাই যায়, তাহলে সংলাপের প্রয়োজন হয় না। 

তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থাকে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানই ধ্বংস করেছে। জেনারেল জিয়া ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে আইয়ুব খানের আদলে হ্যাঁ/না ভোট করেছেন। সেই ভোটে অন্য কোনো প্রার্থী ছিল না। দেখা গেল তিনি প্রায় ৯৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। যেটি অবিশ্বাস্য। এর অর্থ হলো যে, নির্বাচন ব্যবস্থা আজকে যে বলি আমরা সংকটে নিমজ্জিত এটার সূচনা কিন্তু জিয়াউর রহমানের সময়ে। পরবর্তীতে ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং ১৯৭৯ তে সংসদ নির্বাচন। যেটাকে নীল নকশার নির্বাচন বলা হয়। এসব নির্বাচনে জনগণের ভোটের প্রতিফলন হয়নি। কেবল আসন ভাগাভাগি হয়েছে। 

তার মতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভিত্তি মূলে কুঠারাঘাত করেছে বিএনপি। যার কারণে মানুষ তাদের ডাকে সাড়া দিচ্ছে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর মানুষের আস্থা বিনষ্ট হয়েছে। প্রসঙ্গ টানেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের আগে সংসদে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি সংসদীয় কমিটি গঠন করার বিষয়েও। বলেন, যেখানে বিএনপি’র জন্য দু’টি পদ রাখা হয়েছিল। তখন তারা সেখানে যায়নি। যদি গিয়ে পক্ষে অবস্থান নিতো তাহলে আজকের দাবির সঙ্গে সংগত হতো। তখন এর একটা গ্রহণযোগ্যতা লাভ করতো।

দেশের রাজনীতিতে বিদেশিদের আগ্রহের বিষয়ে প্রফেসর হারুন বলেন, বিএনপি দেশের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে আবার বিদেশিদের কাছেও ধরনা দিচ্ছে। সেখানে লবিস্ট নিয়োগ করে প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করছে। যেন বিদেশিরা একটা প্রেসার তৈরি করে। কিন্তু বিদেশিদেরও চাপ প্রয়োগের একটা সীমাবদ্ধতা আছে। কোনো বিদেশি রাষ্ট্র বলবে না তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করো। তারা বলবে অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা। 

২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে জাতিসংঘ ও কমনওয়েলথের প্রতিনিধি প্রেরণের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, অতীতে বিদেশিদের সমঝোতার উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়নি। তাই আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংকট আমাদেরই সমাধান করতে হবে। সমাধানের জন্য স্কোপ রাখতে হবে। বাস্তবসম্মত দাবি- দাওয়া তুলে ধরতে হবে। 

নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বিভিন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন পরীক্ষা দিয়েছে। বিগত নির্বাচন কমিশনগুলো থেকে অনেক ভালো করেছে। তাই তাদের কেন পরীক্ষা দিতে হবে। বরং রাজনৈতিক দলগুলোর বিশেষ করে বিএনপিকে পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে জনগণের সামনে। 

তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থান ছাড়া কোনো সরকারকে হটানো যায় না। এর জন্য জনগণের সম্পৃক্ততা জরুরি। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের সম্ভাবনা দেখি না। জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। এর মধ্যে কে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে? এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলের উচিত মাঠের অবস্থা পর্যালোচনা করে কর্মসূচি নির্ধারণ করা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাওয়া। নির্বাচনে গিয়ে দেখা ২০১৮ বা ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের মতো নির্বাচন হয় কিনা। সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী স্বচ্ছ নির্বাচন হয় কিনা। 

হারুন-অর-রশিদ বলেন, গণতন্ত্র ও নির্বাচনের মাধ্যমে একটা দল বিকশিত হয়। কিন্তু বিএনপি এ পথ রুদ্ধ করে মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। তাদের কর্মীদের মধ্যে প্রতিহিংসার আগুন জ্বলছে। এমন অবস্থায় সরকার পরিবর্তন হলে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। এভাবে সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চা সম্ভব নয়। কারণ এখানে কেবল ক্ষমতা হারানো না বরং জীবন হারানোর কথা আসে। এ অবস্থা বিদ্যমান থাকলে সুষ্ঠু স্বাভাবিক পাশ্চাত্যের গণতন্ত্রের চর্চা সম্ভব না। 

২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে অসঙ্গতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই নির্বাচনে এক এক প্রার্থী বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছে। নানা কারণে সেটা হয়েছে। অতি উৎসাহীরা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। এটা অস্বীকার করা যাবে না। যার সঙ্গে প্রশাসনের কোনো কোনো অংশ যুক্ত হয়েছে। যেটা হওয়ার আবশ্যকতা ছিল না। যেকারণে আমার ধারণা আগামী নির্বাচন ২০১৮ কিংবা ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচন হবে না। অপেক্ষাকৃত সুষ্ঠু স্বচ্ছ নির্বাচন হবে। সুষ্ঠু না হলে মানুষ বিক্ষুব্ধ হবে। অসন্তোষ বাড়বে। 

বিএনপি নির্বাচনে না এলে দেশে রাজনৈতিক সংকটেরও কোনো সম্ভাবনা দেখেন না জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই ভিসি। তিনি বলেন, বিএনপি বর্জন করলেও নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার গঠন হলে স্বাভাবিকভাবেই দেশ চলবে। তবে দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। ঘুষ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকা- নেতাকর্মীদের দ্বারা হয়েছে। তাই জনগণের মধ্যে যেন ক্ষোভের সৃষ্টি না হয় সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032000541687012