দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ মঙ্গলবার তিন সহস্রাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নতুন ভবন উদ্বোধন করবেন। সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে তিনি ২ হাজার ২৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১ হাজার ২৫৯টি মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নতুন ভবন উদ্বোধন করবেন তিনি। একইসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ১৫ তলা বিশিষ্ট প্রধান কার্যালয়, কক্সবাজারের ১০ তলা বিশিষ্ট লিডারশিপ ট্রেনিং সেন্টার এবং চারটি প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের (পিটিআই) নবনির্মিত মাল্টিপারপাস অডিটোরিয়াম উদ্বোধন করবেন সরকার প্রধান।
গতকাল সোমবার রাতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং সন্ধ্যায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়ের এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন রাতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্মাণ করা দেশব্যাপী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ২৫৯টি ভবন একযোগে উদ্বোধন করবেন। এসব ভবনের ১১ হাজার ২৩১টি শ্রেণিকক্ষে ৫ লাখ ৬১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর আধুনিক ও উন্নত পরিবেশে পাঠ গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
অধিদপ্তর বলছে, ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে শুরু করে বিগত ১৫ বছরে বর্তমান সরকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ৪১টি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৪০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ১৫ হাজার ৩৪৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৮৮ হাজার ৪৭৫টি শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছে। ফলে, ৪৪ লাখ ২৩ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর আধুনিক ও উন্নত পরিবেশে শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বিগত ১৫ বছরে ১৩ হাজার ৪২টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মোট ২ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকার মেরামত ও সংস্কার করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে বর্তমানে ৩৬টি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান আছে। এ সকল প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হলে আরো ১০ হাজার ৯৬৮টি শ্রেণিকক্ষে ৫ লাখ ৪৮ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পাঠ গ্রহণের সুযোগ পাবে।
জানা গেছে, নির্মিত ভবনগুলোর ছেলে ও মেয়েদের জন্য পৃথক টয়লেট, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য র্যাম্প ও পৃথক টয়লেট রয়েছে। বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতির বৈচিত্র বিবেচনায় ভবনগুলো পরিবেশ উপযোগী করে নির্মাণ করা হয়েছে। এসব ভবনে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশুদ্ধ সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা, বজ্রপাত নিরোধকের ব্যবস্থা রয়েছে।
এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে দুই সহস্রাধিক প্রাইমারি স্কুলের নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ২ হাজার ২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণে প্রায় ১ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। নতুন ভবন উদ্বোধন ঘোষণার পর স্কুলগুলোর ৬ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী নতুন ও আকর্ষণীয় শ্রেণিকক্ষে পাঠ গ্রহণের সুবিধা পাবে। এছাড়া বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি, শিক্ষক, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা নতুন ভবনগুলোর সুবিধা পাবেন। নবনির্মিত বিদ্যালয় ভবনগুলোতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য জেন্ডারের ভিত্তিতে আলাদা ওয়াশ ব্লক নির্মিত হয়েছে ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা রয়েছে।
জানা গেছে, প্রায় ১০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ১৫ তলা বিশিষ্ট প্রধান কার্যালয় ভবন তৈরি করা হয়েছে। প্রায় ১ লাখ ৭৮ হাজার বর্গফুটের এ ভবনে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত ৫ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিস করবেন। বেইজমেন্ট ও ক্যাম্পাসে ৪৪টি গাড়ি রাখার সুবিধা রয়েছে। নতুন কার্যালয়ের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে ৪ লক্ষাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সেবা দেয়া আরো সহজ হবে বলে আশা করছে মন্ত্রণালয়।
প্রধানমন্ত্রী আজ কক্সবাজারে লিডারশিপ ট্রেনিং সেন্টার ভবন ও চারটি পিটিআইয়ে মাল্টিপারপাস অডিটোরিয়ামও উদ্বোধন করবেন। গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রায় ৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১০ তলা বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক মানের লিডারশিপ ট্রেনিং সেন্টার ভবন নির্মিত হয়েছে। নবনির্মিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিতে কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ের সব স্তরের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য চাহিদাভিত্তিক, আধুনিক ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি ভবনে ৮০ জন পুরুষ ও ৮০ জন মহিলাসহ মোট ১৬০ জন প্রশিক্ষণার্থীর আবাসনের সুব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণের আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে।
আর সিলেট, বরিশাল, রংপুর ও যশোর পিটিআইয়ে মাল্টিপারপাস অডিটোরিয়াম নির্মাণে প্রায় ৪৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণায়লয়। মন্ত্রণালয় বলছে, ৩৫০ আসন বিশিষ্ট প্রতিটি অডিটোরিয়ামে আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা রয়েছে এবং প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণসহ শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, কর্মশালা ইত্যাদি আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিটি পিটিআইতে প্রতি বছর ২ শতাধিক প্রশিক্ষণার্থী দীর্ঘ মেয়াদি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকে। এছাড়াও, সেখানে বিভিন্ন স্বল্প মেয়াদী প্রশিক্ষণ পরিচালিত হয়।