‘অনেক সময় বলেছি আমি একটা বন্দী জীবনে আছি, এর থেকে আমি মুক্তি পাচ্ছি। এখন আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে ফ্রিলি একটু ভোগ করতে পারবো। এটাই আমার সবচেয়ে বড় আনন্দ।’
সোমবার (২৪ এপ্রিল) নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের শপথ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ একথা বলেন।
সাংবাদিকদের অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আরও কথা হবে, এখনও তো বঙ্গভবন থেকে বের হতে পারিনি। বের হলে অনেক কথা হবে। আপনার আইসেন সময় সময়, তখন প্রাণ খুলে, মন খুলে কথা বলবো।
‘দেশের মানুষ বলে আপনি একজন মাটি ও মানুষের রাষ্ট্রপতি ছিলেন’ এর জবাবে আবদুল হামিদ বলেন, দেখেন আমি সারা জীবন রাজনীতি করেছি মানুষের জন্য। সুতরাং মানুষের বাইরে আমার কোনো চিন্তা ছিল না এবং কোনদিন থাকবেও না। আমি সকল রাজনীতিবিদদের এই কথাই বলবো এই দেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবেসে তারা যেনো রাজনীতি করে। তাহলেই রাজনীতিটা আরও সুন্দর হবে। এবং সেটা দলমত নির্বিশেষে সকলের কাছে আমি প্রত্যাশা করি।
নতুন রাষ্ট্রপতির কাছে আপনার কোনো মেসেজ আছে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে আবদুল হামিদ বলেন, ‘নতুন রাষ্ট্রপতির প্রতি আমার মেসেজ কি, ওনি ওনার সাংবিধানিক দায়িত্ব যথাযথভাবে সুষ্ঠুভাবে পালন করবে এটাই সারা জাতির প্রত্যাশা, আমারও।’
দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা বাংলাদেশে হয় নাই, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে দুইবার হইছে কিন্তু ১০ বছর কেউ ছিল না। আবার পাকিস্তানেও পাঁচ বছরের ওপর কেউ ছিল না। সুতরাং এই উপমহাদেশে আমি মনে হয় সবচেয়ে বেশি রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। কারণ ১০ বছর ছাড়াও আরও মনে হয় ৪১ দিন বেশি আছে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি। এই হিসেবে আরও ৪১ দিন বেশি আছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি স্পিকার ছিলাম। আমার এখানে আশার ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু আমি আসছি আরকি। কারণ আমি পার্লামেন্টে স্বাচ্ছন্দ বোধ বেশি করতাম। কারণ ওখানে নিজেকে একটু মুক্ত বলে মনে হতো। আমি জানি এখানে (বঙ্গভবন) আসলে অনেকটা বেড়াজালের ভিতর পড়ে যেতে হবে। যাইহোক তবুও ১০ বছর পার করে ফেলেছি।’
২০১৩ সালের মার্চ মাসে অস্থায়ী এবং ২৪ এপ্রিল প্রথম দফায় দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন কিশোরগঞ্জের সন্তান আবদুল হামিদ।
টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ১০ বছর ৪১ দিন কাটিয়ে অবসরে যাচ্ছেন আবদুল হামিদ। প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্য আবদুল হামিদ পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন।
এর আগে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন তিনি। জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ২০১৩ সালের ২০ মার্চ তিনি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হন। পরে আবদুল হামিদ ২০১৩ সালের ২২ এপ্রিল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
রাষ্ট্রপতি হামিদ ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার কামালপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৯ সালে ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ১৯৬৯ সালের শেষ দিকে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। আবদুল হামিদ নবম সংসদে স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি ডেপুটি স্পিকার ছিলেন। আবদুল হামিদ ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর থেকে সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।