বিশ্বজুড়ে দ্রুত গলছে অনেক হিমবাহ। উপমহাদেশের হিমালয়ের কোলেও রয়েছে এ রকম বহু হিমবাহ। সেগুলোও গলছে। গলে তৈরি হচ্ছে বিপুল জলভান্ডার। হিমবাহ গলে নামছে ধস। আর এসব পানি পাহাড়ি নদীর মধ্যদিয়ে নেমে এসে ঘটাচ্ছে বন্যা, ফ্ল্যাশ ফ্লাড। আর তার চেয়েও বড় ও ভয়ংকর যেটা ঘটতে পারে, সেটা হলো ক্রমশ নদী ও সমুদ্রের পানিস্তর বৃদ্ধি এবং তার থেকে প্লাবন। তখন ডুববে নগর-গ্রাম-জনপদ। আর এ বিপদ আমরা প্রতিনিয়তই অনুভব করছি। তবে বিজ্ঞানীরা হিমবাহ গলার কারণে আরো ভয়ংকর বিপদ অপেক্ষা করছে বলে জানাচ্ছেন। তারা বলছেন, হিমবাহে জমে থাকা বরফেই লুকিয়ে রয়েছে ভয়ংকর এক অন্য বিপদ। লুকিয়ে আছে হাজার হাজার প্রাচীন ভাইরাস! এর কয়েকটি তো প্রায় ৪১ হাজার বছরের পুরনো!
উত্তর-পশ্চিম তিব্বত মালভূমিতে গুলিয়া হিমবাহ থেকে বরফের কোর সংগ্রহ করেছিল চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ৬০ জন গবেষকের একটি দল। সেই বরফের নমুনাগুলো থেকেই ১৭০০টিরও বেশি ভাইরাস জিনোম পাওয়া গেছে। যেগুলোর অধিকাংশ সম্পর্কেই বিজ্ঞানীদের এর আগে কিছু জানা ছিল না। ‘নেচার জিওসায়েন্স’ জার্নালে এ গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে। জানা গেছে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬ হাজার মিটার ওপরে অবস্থিত ওই হিমবাহটিতে যুগে যুগে এসব ভাইরাস সংরক্ষিত হয়েছে। অন্তত নয়টি আলাদা আলাদা প্রাচীন যুগ থেকে এসেছে এসব ভাইরাস।
গবেষকরা জানিয়েছেন, হিমবাহগুলো গলে এসব ভাইরাস যদি পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে তা মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে এবং করোনার মতো মহামারি সৃষ্টি করতে পারে। আগামী দিনে এগুলো যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য আরো তন্নিষ্ঠ গবেষণা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তারা। এ গবেষণায় জলবায়ু-পরিস্থিতির ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় ভাইরাসগুলোর মধ্যেও কী পরিবর্তন ঘটেছে তা-ও পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এ অর্জিত জ্ঞানও এ-সংক্রান্ত নতুন গবেষণায় আগামীদিনে কাজ হবে।