আদম-হাওয়া নিয়ে ভাইরাল বইয়ের পৃষ্ঠা পাঠ্যবইয়ের নয় - দৈনিকশিক্ষা

আদম-হাওয়া নিয়ে ভাইরাল বইয়ের পৃষ্ঠা পাঠ্যবইয়ের নয়

দৈনিকশিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

আদম-হাওয়া পাপ করলো শিরোনামে যে পৃষ্ঠাটির ছবি ভাইরাল হয়েছে তা পাঠ্যবইয়ের নয়। পাঠ-৫ মানুষের পাপে পতন আদম হাওয়া পাপ করল শীর্ষক বইয়ের পৃষ্ঠার ছবি নিয়ে তোলপাড় চলছে। ওই পৃষ্ঠাটি তৃতীয় শ্রেণির ইসাম শিক্ষা শিক্ষা বইয়ের বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে। অনেকে এটি ধর্ম অবমমানা বলে অভিযোগ তুলেছেন। তবে বাস্তবতা হলো, প্রাথমিক বা প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির কোনো বইয়ের অংশ ওই পৃষ্ঠাটি নয়। 

গত ১ জানুয়ার বিকাল থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বইয়ের পৃষ্ঠার ছবি দিয়ে সেটি নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রমের বলে দাবি করা হচ্ছে।

গতবছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হলে পাঠ্যবই নিয়ে নানা অপপ্রচার করা হয়। চলতি বছর দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণি এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। আর বছরের প্রথম দিন বই ্বিতরণ শুরু হওয়ার পর পরই পাঠ্যবই নিয়ো বিভ্রান্তিকর তথ্য ছাড়ানো শুরু হয়েছে।

 

ভাইরাল হওয়া পৃষ্ঠাটির প্রকাশ করে কোনো কোনো পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, পৃষ্ঠাটি তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা বইয়ের। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল বইয়ের পৃষ্ঠাটিতে পৃষ্ঠা নম্বর উল্লেখ রয়েছে ১২। এতে লেখা রয়েছে, পাঠ-৫ মানুষের পাপে পতন। আদম হাওয়া পাপ করল। পৃষ্ঠাটিতে উল্লিখিত পাঠের বিবরণ দেখে বোঝা যাচ্ছে, এখানে বর্ণমালা ও আ-কারের ব্যবহার শেখানো হচ্ছে। 

২০২৪ শিক্ষাবর্ষের প্রাক প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক যাচাই করে দেখা যায়, এই শ্রেণিতে এসো লিখতে শিখি, ব্যঞ্জণ ও স্বরবর্ণের চার্টসহ মোট ছয়টি পাঠ্যপুস্তক আছে। এর মধ্যে ব্যঞ্জণ ও স্বরবর্ণের চার্ট দুটি এক পৃষ্ঠার। তবে এই চার্টগুলোর সঙ্গে ভাইরাল বইয়ের পৃষ্ঠাটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া অন্য পাঠ্যপুস্তকগুলোতেও এমন কোনো পাঠ বা পৃষ্ঠা খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

প্রাক প্রাথমিকের বই ছাড়াও ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বইগুলো যাচাই করে দেখা হয়। পৃষ্ঠাটিতে উল্লিখিত পাঠের বিবরণ অনুযায়ী, প্রথমেই এই শ্রেণিগুলোর বইগুলোর মধ্যে বাংলা বইগুলো খুঁজে দেখা হয়। প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে ১২ নম্বর পৃষ্ঠার পাঠ হলো ‘বাঘ ও রাখালের গল্প’। বর্ণ শিক্ষা বিষয়ক পাঠ রয়েছে ১৫ থেকে ৫৬ নম্বর পৃষ্ঠা পর্যন্ত। তবে এই পাঠগুলোতে ভাইরাল বইয়ের পৃষ্ঠাটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রথম শ্রেণির বাকি দুইটি বই হচ্ছে ইংলিশ ফর টুডে ও প্রাথমিক গণিত। 

দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে বাংলা বইয়ের ১২ নম্বর পৃষ্ঠায় আলোচিত পাঠটির মতো কোনো পাঠ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ১৩ থেকে ১৫ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘আবার পড়ি বর্ণমালা’ একটি পাঠ খুঁজে পাওয়া যায়। ১৭ থেকে ১৮ নম্বর পৃষ্ঠাতে ‘কার চিহ্ন দিয়ে শব্দ বানাই’ একটি পাঠ খুঁজে পাওয়া যায়। তবে এসব পাঠসহ বইটির অন্যান্য পাঠে ভাইরাল বইয়ের পৃষ্ঠাটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় শ্রেণির বাকি দুটি বই হচ্ছে ইংলিশ ফর টুডে ও প্রাথমিক গণিত। 

তৃতীয় শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে বাংলা বইয়ের ১২ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘আবার পড়ি ফলাচিহ্ন’ একটি পাঠ খুঁজে পাওয়া যায়। এতে ভাইরাল পৃষ্ঠাটির মতো কোনো পাঠের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া পুরো বইটির অন্য পাঠগুলো খুঁজেও দাবিটির পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। 

যেহেতু স্যোশাল মিডিয়ার কোনো কোনো পোস্টে দাবি করা হয় যে, ভাইরাল পৃষ্ঠাটি তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ে আছে কি না তা খুঁজে দেখা হয়। বইটির ১২ নম্বর পৃষ্ঠায় এমন কোনো পাঠের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বরং দেখা যায়, পৃষ্ঠাটি ওজু ও গোসলের পাঠের অনুশীলনের। 

চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বইসহ ইবতেদায়ীর বইগুলো যাচাই করেও ভাইরাল বইয়ের পৃষ্ঠাটির ন্যায় মতো কিছু খুঁজে পাওয়া যায়নি। যেহেতু পৃষ্ঠাটিতে উল্লিখিত পাঠের বিবরণ অনুযায়ী, এটি বর্ণমালা ও আ-কারের ব্যবহার সংক্রান্ত পাঠ। তাই স্বাভাবিকভাবেই মাধ্যমিকের শিক্ষাক্রমে এমন কোনো পাঠ থাকার সম্ভাবনা নেই। 

ভাইরাল বইয়ের পৃষ্ঠাটির প্রকৃত উৎসের খুঁজে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অনুসন্ধানে ফেসবুকে গত পহেলা জানুয়ারি মুহাম্মদ কামরুজ্জামান রানা নামের এক ফেসবু ক পেজে একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টটি যাচাইয়ে প্রতীয়মান হয়, ভাইরাল এই পৃষ্ঠাটি সম্পর্কিত এটিই সম্ভাব্য প্রথম পোস্ট।  ওইদিন দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে দেওয়া পোস্টটিতে ভাইরাল বইয়ের পৃষ্ঠাটিসহ আরেকটি পৃষ্ঠা খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টটি ১ হাজার ২০০ বার শেয়ার করা হয়েছে। 

এতে লেখা রয়েছে, ‘আলোর দিশারি শিক্ষার্থীদের অনুশীলন বই-১, ব্যবহারিক সাক্ষরতা প্রথম পর্যায়’। বইটির প্রথম প্রকাশকাল উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর এবং অষ্টম বা সবশেষ প্রকাশকাল ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর। বইটি প্রকাশনায় ছিল লাইট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তবে বিস্তারিত অনুসন্ধানে লাইট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া গেলেও ওইসব প্রতিষ্ঠানের লোগোর সঙ্গে আলোচিত প্রতিষ্ঠানের লোগোর মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে পেশাজীবীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম লিংকডইনে লাইট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীর প্রোফাইল খুঁজে পাওয়া যায়। প্রোফাইলটিতে লাইট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশকে নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক আইএনজিওয়ের সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।  

একাদশ-দ্বাদশ বাংলা-ইংরেজির সিলেবাস প্রকাশ - dainik shiksha একাদশ-দ্বাদশ বাংলা-ইংরেজির সিলেবাস প্রকাশ ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ঠুঁটো জগন্নাথ অধ্যাপকের পকেটে ৬০ লাখ টাকা - dainik shiksha ঠুঁটো জগন্নাথ অধ্যাপকের পকেটে ৬০ লাখ টাকা সব কয়টারে গু*লি কইরা মা*রমু - dainik shiksha সব কয়টারে গু*লি কইরা মা*রমু স্কুলে ভর্তি: সরকারিতে জোয়ার, বেসরকারিতে ভাটা - dainik shiksha স্কুলে ভর্তি: সরকারিতে জোয়ার, বেসরকারিতে ভাটা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণের দাবি যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা - dainik shiksha স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণের দাবি যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036349296569824