আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ও করণীয় - দৈনিকশিক্ষা

আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ও করণীয়

আজহারুল ইসলাম, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

এই মুহূর্তে ঠিক এমন একটা সময় মনে পড়ছে যখন ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে এইচএসসি পরীক্ষায় বাধ্যতামূলকভাবে পরীক্ষার্থী হিসাবে নিজ গ্রামের/পাড়ার একজন অসাক্ষর/নিরক্ষর ব্যক্তিকে অ আ ক খ থেকে সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে হবে। তারপর নিজের নাম ঠিকানাসহ কিছু লিখতে ও পড়তে পারা অবস্থায় নিজ খরচে কলেজ পরীক্ষা কর্তৃপক্ষের নিকট উপস্থাপন করা, যার জন্য কোনো নম্বর ছিলো না। কিন্তু আত্মতৃপ্তি ছিলো যা আজো স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছে।

একজন মাধ্যমিক শিক্ষক হিসেবে যদিও সাক্ষরজ্ঞান শেখাতে হয় না তবে একটা উপলব্ধি কাজ করে, সেটা হচ্ছে সাক্ষরতার সংজ্ঞা কিন্তু শুধু সাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন করে তোলা নয় অথবা শুধু লিখতে পড়তে পারা নয় বরং ব্যপক অর্থে আর্থ-সামাজিকভাবে রাজনৈতিকভাবে মনস্তাত্ত্বিকভাবে রাষ্ট্রের উপযুক্ত করে গড়ে তোলাও কিন্তু সাক্ষরতার অন্যতম লক্ষ্য। প্রতিবছর সারা বিশ্বে ইউনেস্কোর অধীনে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালিত হয়ে আসছে বহু বছর ধরে।

বাংলাদেশ তারই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলছে বিধায় নাগরিক হিসেবে প্রতিটি মানুষের কিছু না কিছু কর্তব্য থেকেই যায় এই দিনটিকে সত্যিকার অর্থেই জনগণের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার। সেক্ষেত্রে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আমাদের এই জনগোষ্ঠীকে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে ধর্মীয় সামাজিক রাজনৈতিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। নেট জগতের এই বিশ্বায়নের যুগে একজন দক্ষ মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন বিশ্ব নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে জাতিকে। নিয়ে যেতে হবে বিশ্বপ্রতিযোগিতার দৌড়ে টিকে থাকার। সেটা হতে পারে বাংলাদেশের কোনো অজপাড়াগাঁয়ের কোনো নিভৃত পল্লীর সূযোগ-সুবিধা বঞ্চিত সেই ছোট্ট শিশুটি থেকে রাজধানীর ছোঁয়ায় গড়ে ওঠা বিলাসবহুল জীবনযাপন করা ব্যক্তি পর্যন্ত। কারণ, ওই যে বিলাসবহুল্যে লালিত সেই ব্যক্তিটিরও হয়তো কোনো এক সাক্ষরতার অভাব থাকতে পারে, যার জন্য হয়তো দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বাধার সম্মুখীন হতে হয় প্রতিনিয়তই।

একটা কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, একদিকে যেমন সাক্ষরতার ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত যে মানুষটি তার ভেতরে শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে দেয়া, ঠিক তেমনি প্রতিটি নাগরিক তথা কৃষক দিনমজুর থেকে শুরু করে সর্বস্তরের নাগরিকদের ডিজিটাল সাক্ষরতা জ্ঞান প্রসারে রাষ্ট্রীয়ভাবে সামাজিকভাবে এমনকি ব্যক্তিগতভাবে অথবা সম্মিলিতভাবে করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বনামধন্য বিশ্ব নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ ও বিশ্বের গর্ব বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের কথা। যখন দেখেছি মাত্র একজন অসহায় হতদরিদ্র নারীকে ঋণ দিয়ে তার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হতে এবং সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের অনেক দেশে ঠিক সেভাবেই অর্থনৈতিক সামাজিক ডিজিটাল সাক্ষরতাসহ মানবীয় গুণাবলীসম্পন্ন সত্যিকার অর্থেই একজন মনুষ্যত্ববোধ জ্ঞান সাক্ষরতাসম্পন্ন হওয়ার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে সাক্ষরতার অর্থ যেখানে এখন ব্যাপক, সেখানে সাক্ষরতা সার্বিক জ্ঞান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বস্তরের নাগরিকদের মাঝে জনসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে জাগিয়ে তুলতে হবে। সর্বোপরি সাক্ষরতা বিষয়ে ইউনেসকো স্বীকৃত নীতিমালা লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এখানে উল্লেখযোগ্য।

‘আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস হলো ইউনেসকো-ঘোষিত একটি আন্তর্জাতিক দিবস। ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ অক্টোবর ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনের ১৪তম অধিবেশনে ৮ সেপ্টেম্বর ‘আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রথমবারের মতো দিবসটি উদযাপিত হয়। দিবসটির লক্ষ্য, ব্যক্তি, সম্প্রদায় এবং সমাজের কাছে সাক্ষরতার গুরুত্ব তুলে ধরা। বর্তমানে জাতিসংঘের সব সদস্য রাষ্ট্র এই দিবসটি উদযাপন করে থাকে।’

তাই বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকসহ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী থেকে শুরু করে বিশেষ সুবিধাবঞ্চিত নাগরিকদের সামাজিক দায়িত্ববোধ জাগ্রত করার মানসে গড়ে তুলতে হবে। সেই সঙ্গে পেশাভিত্তিক ও ডিজিটাল সাক্ষরতা জ্ঞান পরিধি বাড়িয়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।

লেখক: শিক্ষক, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার কলেজিয়েট ইনস্টিটিউট, পঞ্চগড়

শিক্ষক লাঞ্ছিত ও পদত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদ, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি বিটিএর - dainik shiksha শিক্ষক লাঞ্ছিত ও পদত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদ, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি বিটিএর মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি - dainik shiksha মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি আন্দোলনে অসুস্থ ১১ নার্সিং শিক্ষার্থী - dainik shiksha আন্দোলনে অসুস্থ ১১ নার্সিং শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষককে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই - dainik shiksha প্রধান শিক্ষককে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই জলবায়ু পরিবর্তন মারাত্মক প্রভাব ফেলছে শিক্ষা খাতে - dainik shiksha জলবায়ু পরিবর্তন মারাত্মক প্রভাব ফেলছে শিক্ষা খাতে বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশ - dainik shiksha বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশ এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য - dainik shiksha এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য, আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা - dainik shiksha অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য, আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা ভুয়া নিয়োগে এমপিও: এক মাদরাসার ১৫ শিক্ষকের সনদ যাচাই করবে অধিদপ্তর - dainik shiksha ভুয়া নিয়োগে এমপিও: এক মাদরাসার ১৫ শিক্ষকের সনদ যাচাই করবে অধিদপ্তর বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন - dainik shiksha বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতেন মাদরাসা কর্মচারী - dainik shiksha একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতেন মাদরাসা কর্মচারী কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036170482635498