বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আন্দোলনে আমরা একা নই। আমাদের সঙ্গে গণতান্ত্রিক বিশ্ব আছে।’ তাই তিনি সবাইকে একযোগে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসে শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে খালেদা জিয়াসহ নেতাদের ‘মিথ্যা’ মামলায় সাজার প্রতিবাদে এক সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথা বলেন।
সমাবেশে বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব সম্প্রতি দুর্নীতি ও ফৌজদারি মামলায় ইকবাল হাসান মাহমুদ, আমানউল্লাহ আমানসহ অনেক নেতাকে সাজা দিয়ে কারাবন্দী করার ঘটনা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘তরুণদের জেগে উঠতে হবে। এখানে শুধু স্লোগান দিলে হবে না। সামনে বেরিয়ে আসতে হবে। গুলি, আক্রমণ সবকিছুকে সামনে নিয়ে দেশকে যদি বাঁচাতে চাই, আমাদের সামনে এগিয়ে আসতে হবে। আর কালবিলম্ব নয়। এখনই সময় আমাদের ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’
‘নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন কেন?’ প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যকে বছরের শ্রেষ্ঠ কৌতুক বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এই বছরে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ কৌতুক হচ্ছে গতকাল প্রধানমন্ত্রী একটু আক্ষেপের সুরে বলেছেন, আমি এত ভালো ভালো নির্বাচন করি, আর দেশে-বিদেশে প্রশ্ন করে নির্বাচন ভালো হয় না।’
গত বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় সংসদের ২৪তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন নির্বাচন নিয়ে কেন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। আজকে যখন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আমরা করছি, তখনই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করা, এর অর্থটা কী?’
এই বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, শেখ হাসিনা ভালো নির্বাচন করে, আওয়ামী লীগ ভালো নির্বাচন করে—এ কথা ঘোড়ায়ও বিশ্বাস করে? ঘোড়ায় শুনলেও হাসে। এই হচ্ছে অবস্থা।
সমাবেশের উল্টা পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রিকশাশ্রমিকদের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই যে শ্রমিক ভাইয়েরা কাজ ফেলে দাঁড়িয়ে আছেন কেন। একটামাত্র কারণ, তাঁদের জীবন আর চলছে না। তাঁরা চাল কিনতে পারছেন না, ডাল কিনতে পারছেন না। তাঁরা ছেলেমেয়েদের কাপড় দিতে পারেন না, স্কুলে পাঠাতে পারেন না যে দ্রব্যমূল্য এত বেশি বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, আজকে বিদ্যুতের দাম, সারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে, জ্বালানির দাম বেড়েছে, স্বাস্থ্য-শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে, ডেঙ্গুতে মানুষ মারা যাচ্ছে, সেদিকে তাদের কোনো খেয়াল নাই। একটিমাত্র খেয়াল, যে করেই হোক ক্ষমতায় টিতে থাকতে হবে। দেশকে শোষণ করতে হবে।
সরকারকে আবারও পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দেওয়ার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, এটা ওরা দিতে চায় না। দিতে চায় না কারণ, তারা জানে যদি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়, যদি জনগণ ভোট দিতে যেতে পারে, তারা ১০টা আসনও পাবে না। এ প্রসঙ্গে গতকাল স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর একটি বৈঠকের উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘ভোটার আনার জন্য কী করছে, গতকাল গণভবনে স্থানীয় সরকারের নেতাদের একটা মিটিং করেছে। চেয়ারম্যান, মেয়র, কাউন্সিলর—সবগুলো নিয়ে মিটিং করে বলেছে ভোট করতে হবে, নির্বাচন হবে। আপনারা ভোটারদের অনুপ্রাণিত করবেন কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে ভোট করেছেন, দেখা গেল ভোটকেন্দ্রে কোনো লোকই নেই, কুকুর শুয়ে আছে। আর ২০১৮–তে নির্বাচন করলেন আগের রাতে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই গণতন্ত্র দিবসে আমাদের শপথ হচ্ছে, এই সরকারের অধীনে আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না। কোনো নির্বাচন হবে না নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, খায়রুল কবির প্রমুখ।