ছাত্র জনতার গণ আন্দোলনের মধ্যে মোট ৪৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স। রোববার এ সংক্রান্ত একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়।
গত ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন এক পর্যায়ে সহিংসতায় গড়ায়। ১৬ জুলাই আন্দোলনে প্রথম প্রাণহানির ঘটনা হয়। ওই দিন ঢাকা, রংপুর ও চট্টগ্রামে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হয়। পরে এই আন্দোলন গণ আন্দোলনে রূপ নেয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, ৫ আগস্ট পর্যন্ত এই গণ আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা হাজারের বেশি। এ বিষয়ে এখনও সুস্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন এ ঘটনায় নিহত ৯০০ জনের বেশি। আহত কয়েক হাজার।
ছাত্র জনতার গণ আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে তার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। তিনি বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর জাতিসংঘের প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাত্র জনতার এই গণ আন্দোলন দমনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছিল। আর এতে অন্তত ৩২ শিশুসহ ৬ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে বলে ধারণা করছে জাতিসংঘ। সেই সাথে হাজারো মানুষ আহত হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
এই গণ আন্দোলনে পুলিশের প্রতি শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ক্ষোভের ব্যাপক বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে। সরকার পতনের দিন বিভিন্ন থানায় হামলা করে অস্ত্র লুটের ঘটনায় দেখা যায়। এক পর্যায়ে ক্ষোভের মুখে বেশিরভাগ পুলিশ সদস্যই দায়িত্ব ছেড়ে পালিয়ে যান।
রোববার আইএসপিআর জানিয়েছে, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর প্রাণনাশের আশঙ্কায় রাজনীতিবিদসহ মোট ৬২৬ জন নাগরিক সেনানিবাসে আশ্রয় নেন। এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন পুলিশের সদস্য। আশ্রয় নেওয়াদের মধ্যে ২৮ জন ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা আর ৪৮৭ জন সংস্থাটির বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য।
পুলিশের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী, গণ আন্দোলনের মধ্যে নিহতদের মধ্যে পুলিশ পরিদর্শক আছেন ৩ জন, উপ পরিদর্শক (এসআই) ১১, সহকারী উপ পরিদর্শক (এএসআই) ৮, কনস্টেবল ২১ এবং নায়েক আছেন ১ জন।
এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছেন সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার ১৫ জন পুলিশ সদস্য। এর বাহিরে যাত্রাবাড়ি থানায় কর্মরত ৪ পুলিশ সদস্য নিহত হন। এছাড়াও অন্যান্যরা বিক্ষিপ্তভাবে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে নিহত হয়েছেন।
পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের তথ্য বলছে, এর মধ্যে ২৫ জনই নিহত হয়েছেন ৫ আগস্টে। আর ১৪ জন নিহত হয়েছেন ৪ আগস্ট। অর্থাৎ এই দুইদিনেই নিহত হয়েছেন ৩৯ জন।