পদোন্নতি, গ্রেড, অর্জিত ছুটি নিয়ে অন্যান্য ক্যাডার সার্ভিসের সঙ্গে বৈষম্য নিরসনের দাবিতে সারাদেশের বিভিন্ন সরকারি কলেজ ও শিক্ষার দপ্তরে কর্মবিরতি পালন করেছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত শিক্ষকরা। মোট সাত দাবি আদায়ে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। দাবি আদায়ে সরকার দ্রুত কোনো পদক্ষেপ না নিলে আগামী ১০, ১১ ও ১২ অক্টোবর তিন দিন কর্মবিরতি পালন করবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
গতকাল সোমবার সারাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সরকারি কলেজ ও শিক্ষা দপ্তরগুলোতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ব্যানারে এ কর্মবিরতি পালন করা হয়। কর্মবিরতি কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মতাদর্শে বিশ্বাসী কর্মকর্তারা নিজ নিজ দপ্তরে এলেও কোনো কাজ করেননি। এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা এদিন শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ একটি কর্মশালায় অংশ নেননি বলেও খবর পাওয়া গেছে।
শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের দাবিগুলো হলো- আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন, সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতি, অধ্যাপক পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করা, শিক্ষা ক্যাডারকে ননভ্যাকেশন সার্ভিস ঘোষণা করে অর্জিত ছুটি দেয়া, ক্যাডার কম্পোজিশন সুরক্ষা নিশ্চিত করা, প্রাথমিক ও মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগ বিধি বাতিল করা, শিক্ষা ক্যাডারের পদ থেকে শিক্ষা ক্যাডার বহির্ভুতদের প্রত্যাহার ও শিক্ষা ক্যাডারে প্রয়োজনীয় পদ সৃজন।
শিক্ষা ক্যাডার নেতারা বলছেন, সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেতে তিন হাজার জন অপেক্ষায় থাকলেও মাত্র ৬৯০ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতির নির্দেশনা দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি শূন্যপদের বিবেচনা না হলেও শূন্যপদ না থাকার অজুহাতে শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী সব ক্যাডারের বৈষম্য নিরসনের নির্দেশনা দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। শিক্ষা ক্যাডারের ৪২৯টি পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করার প্রক্রিয়া শুরু হলেও তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত হয়েছে মাত্র ৯৫টি পদ। শিক্ষা ক্যাডারের ১২ হাজার ৪৪৪টি পদ সৃজনের প্রস্তাব দীর্ঘ নয় বছর আটকে আছে। শিক্ষা ক্যাডারের অর্জিত ছুটির বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। শিক্ষা ক্যাডারের তফসিলভুক্ত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ৫১২টি পদ শিক্ষা ক্যাডারের তফসিল বহির্ভূত করে নিয়োগবিধি চূড়ান্ত করা হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগবিধি করা হয়েছে। যেখানে শিক্ষা ক্যাডারের পদ অন্যরা দখল করেছেন।
এদিন কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঝালকাঠিতে কর্মবিরতি পালন করেছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। ঝালকাঠি সরকারি কলেজ এই কর্মবিরতি পালন করা হয়। পরে কলেজ মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় কলেজ ইউনিটের সভাপতি অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন উপাধ্যক্ষ প্রফেসর শুকদেব বাড়ৈ, ঝালকাঠি জেলা ইউনিটের সভাপতি প্রফেসর মো. ইলিয়াস বেপারী, সহকারী অধ্যাপক মাহামুদ মোর্শেদ, শ্যামল চন্দ্র মাঝি, প্রভাষক মো. জাহিদুল ইসলাম। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন সহকারী অধ্যাপক মো. বজলুর রশিদ।
কর্মবিরতিতে নেতারা বলেন, শিক্ষা ক্যাডারের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের জন্য তারা দীর্ঘদিন ধরে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে আসছেন। কিন্তু সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।
জয়পুরহাট সরকারি কলেজেও কর্মবিরতি পালন করেন সরকারি শিক্ষকরা। তারা কলেজের সব ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেন। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির জয়পুরহাট জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক কাজী ইমরুল কায়েসের নেতৃত্বে এ কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন জয়পুরহাট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সাইফুল ইসলাম, উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মিজানুর রহমান, জেলার সাধারণ সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক আব্দুল জলিল, কোষাধ্যক্ষ সহকারী অধ্যাপক তৌফিকুর রহমান সরকার, নির্বাহী সদস্য আবু নাসের, মাসুদুর রহমানসহ অনেকে।
এদিকে গতকাল সকালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় সরকারি শেখ মুজিবুর রহমান কলেজে কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। বাংলা বিভাগের প্রভাষক মাসুদ মিয়া, ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক পার্থ বিশ্বাস, অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক লিংকন মোল্লা, দর্শন বিভাগের প্রভাষক বিশ্বজিৎ বিশ্বাস, ইসলাম শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক জমির উদ্দিন ও সোনিয়া আক্তার, সংস্কৃত বিভাগের প্রভাষক সংকর বিশ্বাস, ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক মো. নয়ন মিয়া, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সুজিত সেন, রসায়নবিদ্যার শারমিন সুলতানা, গণিত বিভাগের প্রভাষক সঞ্জিত দেবনাথসহ অন্যান্য শিক্ষকরা এ কর্মবিরতিতে অংশ নেন।