দৈনিকশিক্ষাডটকম, জবি : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ভর্তির আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা পরিচয়পত্র ও আইডি নম্বর পাননি।
রেজিস্ট্রার দপ্তর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি সেলের সমন্বয়হীনতার জন্যই শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্রের হার্ড কপি তৈরির কাজ আটকে আছে বলে জানা যায়।
শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রায় আড়াই মাস আগে ২০২২-২০২৩ সেশনে ভর্তি হলেও এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র বা আইডি কার্ডের মূল কপি হাতে পাননি। চলতি বছরের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হলেও এখনও তাদের আইডি কার্ড সরবরাহ করা হয়নি।
তারা জানান, বোর্ড বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সোমবারের (১৩ নভেম্বর) মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ নির্ধারিত ফরমটি অ্যাকাডেমিক অথবা বৃত্তি শাখায় জমা দিতে বলা হয়েছে। তবে ফরমটিতে আইডি নম্বরের তথ্য চাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত বছরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র প্রিন্টের কাজটি করত রেজিস্ট্রার দপ্তর, তবে এখন আইটি সেলকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের অনুমতি ব্যতীত কাজটি করতে পারবে না বলে জানান তারা। আর এই দীর্ঘ সময়েও কোনো দপ্তরই পরিচয়পত্র প্রিন্টের উদ্যোগ নেয়নি। এ সমন্বয়হীনতার ফলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থীর কেউই পরিচয়পত্রের হার্ড কপি পাননি।
এদিকে গণপরিবহনে ভ্রমণসহ বিভিন্ন কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে ছাত্র সুবিধা নিতে পারছেন না তারা।
জবিতে শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্রের সফট (অনলাইন) কপিও সরবরাহ করা হয়, কিন্তু ওয়েবসাইটের স্টুডেন্ট পোর্টালে লগইন করার জন্য আইডি নম্বরটাও পাননি তারা।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাসুদ রানা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে গেলাম আড়াই মাস পেরিয়ে গেল, পরীক্ষাও চলে আসছে এখনও আইডি কার্ড পেলাম না। আমি যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তার কোনো পরিচয়ও বাইরে দিতে পারি না, আইডি কার্ড না থাকায়। কবে যে আইডি কার্ড হাতে পাব তা জানা নেই।’
সমাজকর্ম বিভাগের সেলিম ভুঁইয়া বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড না থাকায় বাসে হাফ ভাড়া দিতেও সমস্যা হয়। আমাকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে কেউ বিশ্বাসই করতে চায় না। সফট কপি প্রিন্ট করে লেমিলেটিং করলে অনেক সময় তা মানতে চায় না।
‘আমাদের এতো দিন হয়ে গেল, এখনও কর্তৃপক্ষ আমাদের আইডি কার্ড হাতে দিতে পারল না। এটা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে খুব কষ্টের একটা বিষয়।’
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান মুনিয়া বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ডটা আমাদের খুবই প্রয়োজন। এখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির চলছে। এই সময়ে অন্তত আইডি কার্ডটা থাকলে আমাদের কিছুটা হলেও রেহাই মিলত।’
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সালসাবিল ইসলাম প্রত্যাশা বলেন, ‘অবরোধে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বাস চলে না। আমাদের লোকাল বাসে আসতে হয়। সেক্ষেত্রে আইডি কার্ডটা প্রয়োজন।’
আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের ছাত্রী তিথি ইসলাম জানান পরিচয়পত্র বা আইডি নম্বর না থাকায় বৃত্তির ফরম ফিলাপ করতে পারেননি তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি সেলের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড প্রিন্টের কাজ এখন আমরা করি। আগে তা রেজিস্ট্রার দপ্তর করত। তবে রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে নোটিশ না পেলে আমরা কাজ করতে পারব না। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বলে দিলেই আমরা কাজ শুরু করব।’
এ নিয়ে কথা হয় জবির আইটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার আচার্যের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। আশা করছি শীঘ্রই শিক্ষার্থীরা আইডি কার্ড নিজ নিজ বিভাগ থেকে সংগ্রহ করতে পারবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, ‘আইডি কার্ড পেতে দেরি হলেও আইডি নম্বরের তালিকা খুব দ্রুতই অ্যাকাডেমিক শাখা থেকে প্রত্যেক বিভাগ ও ইন্সটিটিউটে পাঠানো হবে। আইটি সেলের কাজ শেষ হলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে আইডি কার্ড পৌঁছে যাবে।’
বৃত্তির কাগজপত্রের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শাখায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।