আড়াই হাজার বছর আগের ভূমিকম্পে গতিপথ ‘বদলে যায়’ পদ্মার - দৈনিকশিক্ষা

আড়াই হাজার বছর আগের ভূমিকম্পে গতিপথ ‘বদলে যায়’ পদ্মার

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

আড়াই হাজার বছর আগে শক্তিশালী এক ভূমিকম্পে 'বদলে যায়' প্রমত্তা পদ্মার গতিপথ, যে নদীটি ভারতে গঙ্গা নামে পরিচিত।

নতুন এক গবেষণায় এমনটিই তুলে ধরে বলা হয়েছে, এতদিন বিজ্ঞানীদের কাছে ওই ভয়ানক ভূমিকম্পের তথ্য অজানা ছিল। ঢাকার অদূরের বিশাল অঞ্চলের ভূমির গঠন ওলট-পালট করে দেওয়া বিপুল সেই শক্তির মাটির গভীর থেকে ফুঁড়ে বেরিয়ে আসার কিছু কারণ জানতে পেরেছেন গবেষকরা।

তারা প্রথমবারের মতো এমন তথ্য সামনে এনেছেন 'ন্যাচার কমিউনিকেশনস' জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে। গত সোমবার এটি প্রকাশিত হয়।

এতে বলা হয়, রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৫ থেকে ৮ তীব্রতার প্রচন্ড শক্তি নিয়ে আঘাত করে ভূমিকম্পটি, যার প্রভাবে পদ্মা বা গঙ্গার মূল গতিপথ বহু দূর সরে যায়। যদিও ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে সরে যাওয়া পদ্মার অংশটির দূরত্ব ছিল অন্তত ১৮০ কিলোমিটার।

নদীর গতি পরিবর্তনের চলমান প্রক্রিয়াকে বলা হয় 'অ্যাভালশন' বা 'ছিন্নকরণ'। ভূমিকম্পের কারণে নদীর অ্যাভালশনের নজির আগেই পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

তবে গবেষণাপত্রটি সম্পর্কে এক বিবৃতিতে এর সহ-লেখক মাইকেল স্টেকলার বলছেন, 'আমার মনে হয় না, (পদ্মা) নদী ছিন্নকরণের এমন বিশাল ঘটনা আগে কেউ কখনো দেখেছেন।'

স্টেকলার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ক্লাইমেট স্কুলের ল্যামন্ট-ডোহার্টি আর্থ অবজারভেটরির ভূপদার্থবিদ্যার অধ্যাপক।

গঙ্গা বিশ্বের বৃহত্তম নদীরগুলোর একটি, যার দৈর্ঘ্য আড়াই হাজার কিলোমিটার। ভারত ও চীন সীমান্তের হিমালয় পর্বতমালা থেকে সৃষ্ট গঙ্গার প্রবাহ পূর্ব দিকে ভারত হয়ে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যাওয়ার পথে অন্যান্য বড় নদী যেমন ব্রহ্মণপুত্র ও মেঘনার সঙ্গে মিলেছে।

এসব নদীর প্রবাহ একত্রে গঠন করেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় 'ব-দ্বীপ' অর্থাৎ বাংলাদেশ এবং সব প্রবাহ গিয়ে মিশেছে বঙ্গোপসাগরে।

অন্যান্য বড় ব-দ্বীপের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলোর মতো ভূমিকম্প ছাড়াই গঙ্গা বা পদ্মাও আপন খেয়ালে তার গতিপথ বদলায়। উৎস থেকে চলার পথে বয়ে আনা প্রচুর পলি জমে পদ্মার বুক ক্রমেই উঁচু হচ্ছে। এতে করে নদীর বুকে চর জাগছে, যেগুলো নদীর দুই পাড়ের ভূমির চেয়েও উঁচু হয়ে যাচ্ছে।

চরের কারণে স্রোত বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ওইসব স্থান থেকে আপন গতিতেই সৃষ্টি হয় নদীর নতুন পথচলা। বছরের পর বছর ধরে এ প্রক্রিয়ায় নদীর গতিপথ বদলায়, যেখানে ভূমিকম্প এক নিমেষেই ঘুরিয়ে দিতে পারে নদীর স্রোতধারা।

গবেষণাপত্রটির প্রধান লেখক লিজ চ্যাম্বারলাইন পৃথক এক বিবৃতিতে বলেছেন, ভূমিকম্পের কারণে নদীর গতিপথ বিশেষ করে পদ্মার মতো প্রকান্ড নদীর গতিপথ বদলে যেতে পারে, এমন কোনো তথ্য আগে কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি।

লিজ চ্যাম্বারলাইন নেদাল্যান্ডসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির ভূপদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ও একজন ভূবিশারদ।

তার বিবৃতির তথ্য অনুযায়ী, অতীতে পদ্মার গতিপথ বদলানোর সূত্র তারা প্রথমবার ধরতে পারেন স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে। চিত্রগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সময় তারা দেখতে পান, ঢাকার প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণের অবস্থানে পদ্মার কাছে মাটির গভীরে সমান্তরালে পুরনো নদীর মতো একটি চ্যানেল রয়েছে।

চ্যাম্বারলাইন লিখেছেন, এরপর তারা আরও তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের জন্য ঢাকার দক্ষিণের ওই অঞ্চলে অনুসন্ধান শুরু করেন এবং কাদামাটির নিচে পুরনো চ্যানেলের মতো আঁকাবাঁকা আরও পথ খুঁজে পান।

ভূমিকম্পের কারণে কাদামাটির নিচে এমন উলম্ব আঁকাবাঁকা বালির চ্যানেল তৈরি হয়, যেগুলোকে 'সিসমাইট' বা ভূকম্পনের ফলে সৃষ্ট 'বালির উলম্ব বেণী' বলা হয়।

চ্যাম্বারলাইন ও তার সহকর্মীরা এটা প্রমাণ করতে পেরেছেন, ঢাকার দক্ষিণে পদ্মার সমান্তরালে চলা বালির উলম্ব বেণীগুলো আসলেই সিসমাইট অর্থাৎ ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট চ্যানেল। তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, একটি ঘটনা থেকেই চ্যানেলগুলো তৈরি হয়।

মাটি ও বালির রাসায়নিক পরীক্ষায় তারা এটাও দেখতে পেয়েছেন, গবেষণা অঞ্চলটিতে অন্তত আড়াই হাজার বছর আগে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়।

ওই শক্তিশালী ভূমিকম্প দু'টি কারণের যে কোনো একটির জন্য হয়েছিল বলে বিশ্বাস চ্যাম্বারলাইন ও তার সহকর্মীদের।

প্রথমত, ভারতের উত্তর-পূর্বের শিলং মাসিফ অঞ্চলে ভারতীয় টেকটোনিক পেস্নট ও ইউরেশিয়ান পেস্নটের মধ্যে টক্করের কারণে আড়াই হাজার বছর আগের ওই ভূমিকম্পটি হয়ে থাকতে পারে।

দ্বিতীয়ত, ভারত মহাসাগরের খড়িমাটি ক্রমেই বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও উত্তর-পূর্ব ভারতীয় পেস্নটের নিচে আরও গভীরে ডুবতে থাকার চাপজনিত শক্তির বিস্ফোরণ ঘটে।

তবে যে দুই অঞ্চলে ঘটা ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার কারণে ভূমিকম্পটির সৃষ্টি হয়েছিল, সেখান থেকে পদ্মার গতিপথ বদলের যাওয়ার বা বালির চ্যানেলগুলো খুঁজে পাওয়ার স্থানের দূরত্ব অন্তত ১৮০ কিলোমিটার।

এর আগে অধ্যাপক মাইকেল স্টেকলারের নেতৃত্বে শিলং মাসাফি ও ইন্দো-বার্মা অঞ্চলের পেস্নট বিশ্লেষণ করে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে একটি সমীক্ষা প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়, সাড়ে ৭ বা ৮ তীব্রতার শক্তিশালী ভূমিকম্প আবারও এ অঞ্চলে আঘাত করতে পারে। এর প্রভাব পড়তে পারে ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষের ওপর।

শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029208660125732