আত্মহত্যা কোনো শখ নয়। এটি একটি মানসিক পীড়নের সর্বশেষ পর্যায়। অনেকেই মনে করেন যে আজকালকার ছেলেমেয়েরা বেশি ইমোশনাল তাই আত্মহত্যা করেন। আসলে কি তাই? তাহলে চলুন একটু ভেবে দেখি কেনো আত্মহত্যা করছেন ছেলেমেয়েরা। শুধু অল্প বয়সী ছেলেমেয়ে না মধ্যবয়সী বা বয়স্করাও আসলে কেনো আত্মহত্যা করছেন? কে বা কারা দায়ী এর পেছনে?
একজন ছেলে বা মেয়ে উভয়েরই শুরুটা ছোটবেলা থেকেই হয়। কেউ বয়ঃসন্ধিকালের আগেই হয়তো বুলিংয়ের শিকার, নির্যাতনের শিকার কিংবা যৌন-নিপীড়ন অথবা তার পারিবারিক পরিবেশ অনুকূলে ছিলো না। বয়ঃসন্ধিকাল অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা সময় সকল ছেলেমেয়ের জন্য। এ সময়টা তাদের শারীরিক, মানসিক পরিবর্তন যেমন ঘটে তেমন পরিবর্তন ঘটে আবেগের।
বর্তমানে আমাদের ছেলেমেয়েদের সবচেয়ে বড়ো শত্রু মোবাইল ফোন। শুধু তারাই যে মোবাইলে আসক্ত তা নয়, তার পরিবারসহ সকলেই মোবাইল ফোনে আসক্ত! আগেকার দিনের দাদি, নানির গল্পও আজ আর নেই। আজকাল দাদি-নানিদের হাতেও ফোন। পাশাপাশি বসেও এখন আর কেউ গল্প করেন না। সবাই যার যার ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। প্রযুক্তি আমাদের দিয়েছে অনেক কিন্তু কেড়ে নিয়েছে সম্পর্কের একান্ত মুহূর্তগুলো। যে মুহূর্ত পরিবারের সবাই একসঙ্গে গল্প করার সে মুহূর্তে সবাই ফেসবুকে বা ফোনে ব্যস্ত। প্রযুক্তি তার কাছে থাকার ব্যস্ততা বাড়িয়ে মানুষকে উপহার দিচ্ছে একাকীত্ব। মানসিক সমস্যা বাড়ছে মানুষের। দিনদিন রোবট হয়ে যাচ্ছে মানুষ, কমে যাচ্ছে আন্তরিকতা।
কারো পাশে বসে তার কথা শোনার মতো সময়ও কারো নেই। চাকচিক্যময় জগতের আকর্ষণে সব সম্পর্কে বাড়ছে জটিলতা। দূরত্ব তাদেরকে প্রযুক্তির বন্ধু বানিয়ে করছে মানসিকভাবে অসুস্থ। তাহলে কীভাবে কমবে এই আত্মহত্যার প্রবণতা? চলুন, ভেবে দেখি আমাদের সন্তানদের কোথায় সমস্যা, তাদের প্রয়োজন, তাদের পারিবারিক পরিবেশ ও সময় দেয়া, দাদা-দাদি, নানা-নানির সঙ্গে সময় কাটানোর ব্যবস্থা করা দরকার কি না। সর্বোপরি ছেলেমেয়েদের পরিবারের সবার সঙ্গে সময় কাটানোর প্রয়োজন।
বাসায় মোবাইল ফোনের ব্যবহার কমিয়ে পরিবারের সবার সঙ্গে গল্প করা, বেড়াতে যাওয়া, বাগান করা, সৃজনশীল কাজে অংশগ্রহণ ইত্যাদি সবকিছুই পারে মন ভালো রাখতে। সকলের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়া জরুরি। পরিবার, বিদ্যালয় সব জায়গায় ছেলেমেয়েরা বুলিংয়ের শিকার যাতে না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। বয়ঃসন্ধিকাল যেনো ছেলেমেয়েদের তিক্ত কোনো অভিজ্ঞতা না দেয় যা তাকে ভবিষ্যতে মানসিক পীড়া দিতে না পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
ছোটকাল থেকেই মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়া যে জরুরি এটি সবাইকে জানতে হবে। নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়া শিখতে হবে। সব বয়সের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। আর কোনো প্রাণ আত্মহত্যার শিকার না হোক। আমাদের সকলেই সচেতন হতে হবে। নইলে অচিরেই আত্মহত্যা মহামারি আকার নিতে পারে।
আসুন সচেতন হই। আত্মহত্যা রোধ করতে পদক্ষেপ নিই। মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিয়ে সুন্দর সমাজ গড়ে তুলি।
লেখক: সিনিয়র শিক্ষক, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, ঢাকা