ইউজিসির আপত্তি, তবুও বিদেশি ‘স্টাডি সেন্টার’ বাংলাদেশে - দৈনিকশিক্ষা

ইউজিসির আপত্তি, তবুও বিদেশি ‘স্টাডি সেন্টার’ বাংলাদেশে

সুতীর্থ বড়াল, দৈনিকশিক্ষাডটকম |

সুতীর্থ বড়াল, দৈনিকশিক্ষাডটকম: বিদ্যমান আইনে ‘সাংঘর্ষিক’ বলে আপত্তি দিলেও দেশে আরো একটি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্টাডি সেন্টার’ চালুর অনুমতি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যদিও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ ও বিদেশি শাখা ক্যাম্পাস/স্টাডি সেন্টার, ২০১৪ বিধিমালায় সাংঘর্ষিক হওয়ার কারণে এ সংক্রান্ত আবেদনের প্রস্তাব নাকচ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। কিন্তু ইউজিসির প্রতিবেদন আমলে না নিয়ে এ পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেশে ৩টি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্টাডি সেন্টার’ এর অনুমতি দিয়েছে।
নতুন করে অনুমতি পাওয়া স্টাডি সেন্টারটি হলো- যুক্তরাজ্যের দি ইউনির্ভাসিটি অব সেন্ট্রাল ল্যাঙ্কশেয়ার (ইউসিএলএএন)। ১৪ শর্তে সাত বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টির স্টাডি সেন্টার খোলার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। 

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামগুলো ‘ইউনির্ভাসেল কলেজ বাংলাদেশ’ এর মাধ্যমে পরিচালিত হবে বলে এ সংক্রান্ত এক আদেশে বলা হয়।

এর আগে এডুকো বাংলাদেশ লিমিটেড দেশে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক ‘মোনাশ’ ও লন্ডনভিত্তিক ‘লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিক্স’ এর স্টাডি সেন্টার পরিচালনার অনুমতি ভাগিয়ে নেয়। তখনও ইউজিসি এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্টাডি সেন্টার’ অনুমোদনে জোরালো বিরোধিতা করেছিলো। সবশেষ গত ৩ এপ্রিল নতুন অনুমোদন পাওয়া যুক্তরাজ্যের দ্য ইউনির্ভাসিটি অব সেন্ট্রাল ল্যাঙ্কশেয়ার (ইউসিএলএএন) বাংলাদেশে ‘স্টাডি সেন্টার’ পরিচালনার আবেদনের প্রস্তাব ইউজিসি নাকচ করে দিলেও মন্ত্রণালয় সেটির অনুমোদন দিয়ে দেয়। এডুকো বাংলাদেশ লিমিটেড-এর প্রধান নির্বাহী মানস সিং এর কাছে পাঠানো অনুমোদন আদেশে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ক্ষমতাবলে প্রণীত বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার পরিচালনার বিধিমালা, ২০১৪ এর বিধিতে ৭-এ বর্ণিত ১৪ শর্ত প্রতিপালন সাপেক্ষে উল্লিখিত বিধিমালার ৫(৪) ও ৫(৫) উপ-বিধি অনুযায়ী সাত বছরের জন্য যুক্তরাজ্যের দি ইউনির্ভাসিটি অব সেন্ট্রাল ল্যাঙ্কশেয়ারের প্রোগ্রামগুলো 'ইউনির্ভাসেল কলেজ বাংলাদেশ' (এডুকো বাংলাদেশে লিমিটেড) স্থাপন ও পরিচালনার সাময়িক অনুমিত প্রদান করা হলো। 

মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, এডুকো বাংলাদেশ লিমিটেড ল্যাঙ্কশেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টারের আবেদন করলে ইউজিসি তা পরিদর্শন করে প্রস্তাব নাকচ করে মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতিবেদন পাঠায়। ল্যাঙ্কশেয়ার বিষয়ে ইউজিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ৩৯ ধারায় সুস্পষ্টভাবে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের নামে ক্যাম্পাস স্থাপন করার বিষয়ে উল্লেখ থাকলেও ২০১৪ এর বিধিমালায় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস স্থাপনের পাশাপাশি স্টাডি সেন্টার পরিচালনার সুযোগ রাখা হয়েছে। 

 

ইউজিসি বলছে, ২০১৪ এর বিধিমালায় স্টাডি সেন্টার পরিচালনার সুযোগ দানের বিষয়টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ৩৯ ধারার সাথে 'সাংঘর্ষিক'। সুতরাং ইউজিসি দেশে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টারের আবেদনের মঞ্জুর করার ব্যাপারে আইনগত অবস্থানে নেই। 

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) খালেদা আক্তারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, সরকার প্রয়োজন মনে করেছে বলেই সেটির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। 

কিন্তু ইউজিসি তো স্টাডি সেন্টার চালুর ব্যাপারে আবেদনের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি বিস্তারিত জেনে পরে কথা বলবো। 
এ বিষয়ে ইউজিসির একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এর আগেও আমরা দুটি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টারের ব্যাপারে বিদ্যমান আইনে সুযোগ নেই বলে আপত্তি

দেয়া হচ্ছে, হয়েছে। কিন্তু তা মানা হচ্ছে না। যা বিদ্যমান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর সাথে 'সাংঘর্ষিক'।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসেও দেশে তিনটি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের 'স্টাডি সেন্টার' অনুমতি নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। পরে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত যুক্তরাজ্যের লিডস ট্রিনিটি ইউনিভার্সিটি, মালয়েশিয়ার মাহসা বিশ্ববিদ্যলয় এবং যুক্তরাজ্যের ওয়েস্ট লন্ডন'স এর স্টাডি সেন্টারের অনুমতি দেননি তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি জানায়, কোনো একসময় অনুমোদন ছাড়াই বাংলাদেশে অবৈধভাবে বিদেশি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলছিল। তখন প্রায় ৫৬টি বিদেশি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করে বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছিল ইউজিসি।

কারণ, এগুলো ছিলো মূলত সনদনির্ভর প্রতিষ্ঠান। একপর্যায়ে অনুমোদন নিয়ে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালুর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে করা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে শুধু শাখা ক্যাম্পাস করার সুযোগ রাখা হয়। কোম্পানি আইনে অনুমোদন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ট্রাস্ট আইন, ১৮৮২'-এর অধীনে অলাভজনক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হয়। ওই আইন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিলের অর্থ প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যাবে না। এদিকে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস কিংবা স্টাডি সেন্টার 'কোম্পানি আইন, ১৯৯৪'-এর অধীনে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার, ২০১৪ বিধি ৭(ঝ) অনুযায়ী, উদ্বৃত্ত অর্থসম্পদ উদ্যোক্তা, স্থানীয় প্রতিনিধি ও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আনুপাতিক হারে বিভাজিত হবে। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত স্টাডি সেন্টারটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এবং 'বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার পরিচালনার বিধিমালা, ২০১৪' এ বর্ণিত সকল বিধি-বিধান ও শর্তমেনে চলবে। স্টাডি সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে নিজস্ব অথবা ভাড়া করা ভবনে অন্যূন ১০ হাজার বর্গফুট ফ্লোর এলাকা থাকতে হবে। পাঠদানের জন্য প্রত্যেক বিভাগ, প্রোগ্রাম বা কোর্সের জন্য নির্ধারিত সংখ্যক পূর্ণকালীন শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে, কোন বিভাগ, প্রোগ্রাম বা কোর্সের প্রকৃতি বিবেচনায় প্রয়োজনে খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে; আরও শর্ত থাকে যে, খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ করলে মোট শিক্ষকের এক-তৃতীয়াংশের বেশি হতে পারবে না। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কিত কমিশন অনুমোদিত একটি পরিকল্পনা থাকতে হবে। কমিশন নির্ধারিত তিন সদস্যের সমন্বয়ে একটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ থাকতে হবে। অবকাঠামো নির্মাণ ও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে সুযোগ সুবিধা বিনির্মাণে যে অর্থ ব্যয় হয়েছে বা ব্যয় হবে বলে প্রাক্কলিত হয়েছে, তাতে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা উদ্যোক্তা বা স্থানীয় প্রতিনিধির অংশের দেশি বা বিদেশি মুদ্রার অনুপাতের হার ও তসম্পর্কিত প্রত্যয়নকৃত তথ্য থাকতে হবে। পাঠ্য তালিকায় কম্পিউটার সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রকৌশল বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকলে প্রতি পাঁচ জন শিক্ষার্থীর জন্য একটি কম্পিউটার এবং প্রাসঙ্গিক যন্ত্রপাতিসহ ল্যাবরেটরি স্থাপন করতে হবে।

দেশে বর্তমানে ১১৫টি বেসরকারি এবং ৩টি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সনদ-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগে কয়েকটি স্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করেছে ইউজিসি। এই অবস্থায় নতুন করে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টারের অনুমতি দেয়া হচ্ছে।

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও - dainik shiksha ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল - dainik shiksha বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক - dainik shiksha এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037820339202881