ইথিওপিয়ার রাজপুত্রের দেহাবশেষ দিতে চায় না ব্রিটিশ রাজপরিবার - দৈনিকশিক্ষা

ইথিওপিয়ার রাজপুত্রের দেহাবশেষ দিতে চায় না ব্রিটিশ রাজপরিবার

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

খ্রিষ্টাব্দটা ছিল ১৮৬২। ইথিওপিয়ার প্রতাপশালী সম্রাট দ্বিতীয় টিওড্রোস তার সাম্রাজ্যের ভিত আরও শক্ত করার প্রয়াসে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন রানী ভিক্টোরিয়াকে। কিন্তু তার চিঠির কোনো উত্তর দেননি রানী। এ নীরবতায় ক্রুদ্ধ হয়ে সম্রাট টিওড্রোস ব্রিটিশ রাজপ্রতিনিধিসহ বেশ কয়েকজন ইউরোপিয়ানকে পণবন্দি করেন। এর জবাবে সম্রাটের বিরুদ্ধে বিশাল এক সামরিক অভিযান চালায় ব্রিটিশরাজ।

পণবন্দিদের উদ্ধারে লড়াইয়ে নামে ১৩ হাজার ব্রিটিশ ও ভারতীয় সেনা। উত্তর ইথিওপিয়ার মাগডালায় পাহাড়ের মাথায় সম্রাট টিওড্রোসের দুর্গ অবরোধ করে এই বাহিনী ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সম্রাটের প্রতিরোধ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় তারা। সম্রাট ব্রিটিশদের হাতে বন্দি হওয়ার বদলে আত্মঘাতী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। যুদ্ধ শেষে, ব্রিটিশ সেনারা সেখান থেকে হাজার হাজার সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন লুটপাট করে, যার মধ্যে ছিল সোনার মুকুট, প্রাচীন পা-ুলিপি, গলার হার এবং রাজকীয় পোশাক পরিচ্ছদ। সঙ্গে নিয়ে আসে প্রিন্স আলেমায়েহু এবং তার মা সম্রাজ্ঞী তিরুওয়ার্ক উবেকে। তবে যাত্রাপথে মৃত্যু হয় সম্রাজ্ঞীর।

ফলে অনাথ অবস্থায় যুক্তরাজ্যে পা রাখেন সাত বছরের শিশু যুবরাজ। ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটেনে পৌঁছানোর পর তার দুর্দশা ও অনাথ অবস্থা দেখে সমবেদনা প্রকাশ করেন রানী ভিক্টোরিয়া। তিনি জানান, তিনি আর্থিকভাবে আলেমায়েহুর দায়িত্ব নেবেন। ইথিওপিয়া থেকে ক্যাপ্টেন ট্রিসট্রাম চার্লস সইয়ার স্পিডি নামে যার সঙ্গে ওই অনাথ বালক ইংল্যান্ডে এসে পৌঁছেছিল, রানী তাকে আলেমায়েহুর অভিভাবক নিযুক্ত করেন।

প্রথমদিকে তারা দুজনে থাকতেন আইল অফ হোয়াইটে। পরে ক্যাপ্টেন স্পিডি বালক আলেমায়েহুকে নিয়ে বিশ্বের নানা জায়গায় বাস করেন। তারা দুজনে ভারতেও কিছুদিন ছিলেন। কিন্তু একসময় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে যুবরাজের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন। তাকে ফিরিয়ে আনা হয় ব্রিটেনে, ভর্তি করে দেওয়া হয় উত্তর ইংল্যান্ডের রাগবি শহরে ব্রিটেনের একটি বেসরকারি স্কুলে। কিন্তু সেখানে যুবরাজের মন বসেনি। পরে তাকে পাঠানো হয় স্যান্ডহার্স্টের সামরিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়্যাল মিলিটারি কলেজে। কিন্তু সেখানে তার ওপর চলে মানসিক নির্যাতন। ফলে সে বারবার নিজের দেশে ফিরতে চেয়েছে। যা তার চিঠিপত্রেও পাওয়া গেছে। কিন্তু ব্রিটিশরাজ তার সেই ইচ্ছাকে কোনোভাবেই আমল দেওয়া হয়নি।

তবে যুবরাজ আলেমায়েহুকে লিডস এলাকায় এক সাধারণ বাসায় গৃহশিক্ষক রেখে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু যুবরাজ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি চিকিৎসা নিতেও অস্বীকৃতি জানান। তার ধারণা হয়েছিল তাকে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছে। এক দশক নির্বাসনে জীবন কাটানোর পর রাজপুত্র আলেমায়েহুর মৃত্যু হয় মাত্র ১৮ বছর বয়সে ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে। পরে রানীর ইচ্ছায় উইন্ডসর রাজপ্রাসাদের চ্যাপেলে তাকে সমাহিত করা হয়।

ব্রিটিশ রাজপরিবারের ব্যক্তিগত সমাধিক্ষেত্রে ঊনবিংশ শতকে কবর দেওয়া রাজপুত্রের দেহাবশেষ এখন ফেরত পেতে উন্মুখ ইথিওপিয়া। কিন্তু বাকিংহাম প্রাসাদ এ দাবি মানতে নারাজ।

যুবরাজ আলেমায়েহুর এক বংশধর ফাসিল মিনাস বলেছেন, আমরা পরিবারের তরফ থেকে এবং ইথিওপিয়ার জনগণের পক্ষ থেকে তার দেহাবশেষ ফেরত চাই, কারণ ইংল্যান্ড তো তার জন্মস্থান নয়! তাই যুক্তরাজ্যে তাকে কবর দেওয়া সঠিক ছিল না। কিন্তু বাকিংহাম প্রাসাদের একজন মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, উইন্ডসর প্রাসাদের সেন্ট জর্জেস চ্যাপেল থেকে তার মৃতদেহ খুঁড়ে তোলা যাবে না। তাতে কবরস্থ অন্য মৃতদেহগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

যুবরাজের দেহাবশেষ তার স্বদেশে ফেরত পাঠানোর দাবি নতুন নয়। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে ইথিওপিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গিরমা ওল্ড-জিওর্গিস রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছিলেন, যুবরাজ আলেমায়েহুর মরদেহাবশেষ ইথিওপিয়ায় ফেরত পাঠানোর জন্য। কিন্তু তার সে চেষ্টা সফল হয়নি।

এখন আলেমায়েহুর বংশের লোকজন আশা করছেন, ব্রিটেনের রাজা হিসেবে অভিষিক্ত তৃতীয় চার্লস তাদের আবেদনে ইতিবাচক সাড়া দেবেন। তবে এবারও বাকিংহাম প্রাসাদের জবাব হলো, উইন্ডসর প্রাসাদে সেন্ট জর্জেস চ্যাপেল থেকে তার মৃতদেহ খুঁড়ে তুললে সেই প্রক্রিয়া একই জায়গায় কবরস্থ অন্য মৃতদেহগুলোর ওপর প্রভাব ফেলবে। তবে অনেকেই বলেছেন, বিষয়টি অনেকটা একজন মৃত যুবরাজকে বন্দি করে রাখার মতোই ঘটনা। ব্রিটিশ রাজপরিবারের অহংকারের কাছে বন্দি আফ্রিকার যুবরাজ!

সূত্র : বিবিসি

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0058269500732422