ইনডেক্সধারী শিক্ষকরা বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে বদলি চান - দৈনিকশিক্ষা

ইনডেক্সধারী শিক্ষকরা বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে বদলি চান

গৌতম কুমার |

সাজু মিয়ার বাড়ি পঞ্চগড়ে। শিক্ষকতা করেন কুমিল্লার প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। বাড়ি যেতে আসতেই তিনদিন লেগে যায়। তিনি বিয়ের জন্য ছুটি চাইলে প্রতিষ্ঠান প্রধান ৩ দিনের ছুটি দিয়েছিলেন। ৭ দিন পরে স্কুলে আসলে শোকজ করে সাজু মিয়ার বেতন আটকে দেয়া হয়।তিন মাস পর মূল বেতন পেলেও স্থানীয় বেতন তিনি পাননি।

রঞ্জু মিয়ার বাড়ি গাইবান্ধায়। শিক্ষকতা করেন টেকনাফে। তিনি মা-বাবার একমাত্র সন্তান। বাবা বেঁচে নেই, মা ক্যান্সারের রোগী। নিয়মিত থেরাপি দিতে হচ্ছে। 

রঞ্জুমিয়ার স্ত্রীর পিত্তথলির পাথর অপারেশন করাতে হয়েছে। ছোট বাচ্চা দুটিরও জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত। বহুদূরে শিক্ষকতা করার কারণে সবকিছু সামাল দিতে গিয়ে বেহাল দশা তার। কোনো কূল-কিনারা করতে পারছেন না। দুচোখে শর্ষে ফুল দেখছেন তিনি।

সহকারী শিক্ষক আহমেদ আলির বাড়ি কুড়িগ্রাম। শিক্ষকতা করেন চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে। বেতন পান মাত্র ১২ হাজার ৫০০ টাকা (ইবতেদায়ি শিক্ষকদের বেতন মাত্র ৯৩০০ টাকা)। একবার বাড়ি যেতে আসতে বেতনের অর্ধেক টাকা চলে যায়। 

এ অবস্থায় নিজে চলবেন কীভাবে বা বাবা-মায়ের সেবা করবেন কীভাবে? পরিবারের কেউ মারা গেলে শেষ দেখারও সুযোগ পান না তিনি!

নামগুলো রুপক হলেও এরকম হাজার হাজার উদাহরণ রয়েছে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে।

এখন কথা হলো, বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক নিয়োগ দেয় এনটিআরসিএ, তাহলে তারা বদলি প্রথা চালু করেন না কেন? বাংলাদেশের সকল পেশায় বদলি থাকলে এমপিওভুক্ত ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের বেলায় বদলি চালু করতে সমস্যা কোথায়?

আমরা বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষকরা দীর্ঘদিন থেকে বদলির দাবিতে অনলাইনে ও মাঠে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। যারা নিজ জেলা থেকে ৫০০-৮০০ কিলোমিটার দূরে শিক্ষকতা করছি, তাদের কষ্টের কথা কেউ শোনেন না, কর্তৃপক্ষ বদলির উদ্যোগ নিচ্ছেন না। শিক্ষা ব্যবস্থা যারা নিয়ন্ত্রণ করেন-তারা যদি শিক্ষকদের অসহায়ত্বের কথা না শোনেন, বদলির ব্যবস্থা না করেন, তা হলে যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতিতে কীভাবে শ্রেণি কক্ষে পাঠদান চালাবেন? মানসিক যন্ত্রণায় থেকে কী শ্রেণিতে সফল পাঠদান সম্ভব?

শিক্ষার্থীদের জন্য সবসময়ই আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করি, নিজেদের সবটুকু ভালবাসা উজাড় করে দিয়েই কষ্টগুলো ভেতরে রেখে হাসিমুখেই পাঠদানের। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের যা দাম, তাতে কী ভাবে সম্ভব এই স্বল্প বেতনে জীবিকা নির্বাহ?

তাছাড়া স্থানীয় শিক্ষকদের ও কমিটির সদস্যদের দ্বারা প্রায় সময়ই বাইরের শিক্ষকরা নির্যাতন,নিপীড়ন ও হয়রানির  শিকার হচ্ছেন,বখাটেদের উৎপাত তো আছেই! 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, এনটিআরসিএ,কারিগরি ও মাদবাসা অধিদপ্তরে আমরা কয়েক দফা স্মারকলিপি দিয়ে বলেছিলাম, আগে ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের  বদলির ব্যবস্থা করুন। তখন আমাদের ছেড়ে যাওয়া পদ ও নিয়মিত শূন্যপদ সমন্বয় করে গণবিজ্ঞপ্তি দিন। তখন নিবন্ধিত সকলেই শিক্ষক হওয়ার সুযোগ পাবেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সংকটও দূর হবে। মুক্তি পাবেন শিক্ষকরা।

আসন্ন চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে ৭০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন। বদলি চালু না করে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি কার্যকর হলে বদলিপ্রতাশী শিক্ষকদের নিজ এলাকায় যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে। সে কারণে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে 
ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের বদলি প্রথা চালু করা জরুরি। 

আমরা ইনডেক্সধারী শিক্ষকরা ডাল-ভাত খেয়েই নিজ এলাকায় থেকে শিক্ষার মানোন্নয়নে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করতে চাই।

বদলিপ্রত্যাশী ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের বঞ্চিত করে শিক্ষার মানোন্নয়ন কতটুকু সফল হবে-তা প্রশ্নসাপেক্ষ। সঙ্গতকারণেই আমরা শিক্ষকরা নিজ নিজ এলাকা বা কাছাকাছি দূরত্বে থেকে প্রশান্তচিত্তে নতুন শিক্ষাক্রমের বিশাল কর্মযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাই। 

লেখক: ইনডেক্সধারী শিক্ষক

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ - dainik shiksha চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ ঢামেকে একজনের মৃত্যু - dainik shiksha ঢামেকে একজনের মৃত্যু জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ - dainik shiksha জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ - dainik shiksha বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর - dainik shiksha শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের - dainik shiksha সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো - dainik shiksha যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ - dainik shiksha সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে - dainik shiksha র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.025844812393188