মো. রাকিব মিয়া গত জানুয়ারিতে রাজস্ব খাতে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ১১৪ নং ওমর বেপারী কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কিন্তু যোগদানের তিন মাস পরেও তার বেতন পাননি। এদিকে আসছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদের আগে বেতন ও ঈদ বোনাস পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তিনি। ইসমা রানী পিইডিপি-৪ এর অধীনে প্রাক-প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছিলেন। তবে, যোগাদানের পর থেকে তিনি বেতন বোনাস পাননি। এদিকে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিইডিপি-৪ এর অধীনে প্রাক-প্রাথমিকে যোগ দেয়া ২৩ জন নতুন শিক্ষকও বেতন ভাতা পাননি। তবে, এ উপজেলায় রাজস্বখাতে যোগ দেয়া ১৪ জন নতুন সহকারী শিক্ষক বেতন পেয়েছেন।
শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দেয়া কয়েক হাজার শিক্ষক এখনো বেতন পাননি। কিছু কিছু উপজেলায় নতুন শিক্ষকদের বেতন হয়েছে। কিছু উপজেলায় শুধু রাজস্ব খাতে নিয়োগ পাওয়া সহকারী শিক্ষকরা বেতন পেয়েছেন। আর বেশ কিছু উপজেলায় শিক্ষক রাজস্ব খাত ও প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষকদের কেউই বেতন বা বোনাস পাননি। বেতন না পাওয়া শিক্ষকরা ঈদ উদযাপন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদের খরচ জোগাড়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষকরা ঈদের আগে বেতন বোনাস পাওয়ার দাবি জানাচ্ছেন।
এদিকে পিইডিপি-৪ এর আওতায় প্রাক-প্রাথমিকে নিয়োগ পাওয়া সহকারী শিক্ষকদের ঈদের আগে বোনাস পাওয়া নিয়েও শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। পবিত্র রমজান মাসের অনেকটা পেরিয়ে যাওয়ার পর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রাক-প্রাথমিকের নতুন শিক্ষকদের বোনাস দিতে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। সম্প্রতি এ শিক্ষকদের তথ্য চেয়ে সব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি পাঠিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঈদের ঠিক কিছুদিন আগে তথ্য সংগ্রহ শুরু নিয়ে প্রাক-প্রাথমিকের নতুন শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
২০২০ খ্রিষ্টাব্দের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি হলেও ফল প্রকাশ হওয়ার পর গত জানুয়ারি মাসে সারাদেশের ৬১টি জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রাজস্ব খাত ও প্রাক-প্রাথমিকের ৩৫ হাজার নতুন শিক্ষক যোগদান করেছিলেন। তাদের অনেকেই বেতন ভাতা পাননি। তবে নতুন শিক্ষকদের কেউ কেউ বেতন পেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন।
পাবনার সুজানগর উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দেয়া নতুন শিক্ষক আতিকুর রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, তিনি মার্চ মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস পেয়েছেন। জানুয়ারি মাসের কয়েকদিনের বেতন ঈদের আগে পাবেন বলে তাকে জানানো হয়েছে। তবে, সুজানগর উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে যোগ দেয়া প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষকরা বেতন ও বোনাস পাননি বলে জানা গেছে।
কয়েকজন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিছু কিছু জেলা ও উপজেলায় বরাদ্দ না আসায় বেতন দেয়া যায়নি। কিছু উপজেলায় আইবাস প্লাস প্লাসের জটিলতার কারণে বেতন দেয়া যাচ্ছে না। তবে, দ্রুত জটিলতা কাটবে বলে আশা কর্মকর্তাদের।
মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দা নার্গিস আক্তার দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, তার উপজেলায় রাজস্বখাতের শিক্ষকদের বেতন বোনাস দেয়া হলেও প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতন দেয়া যায়নি। আইবাস প্লাস প্লাসে বরাদ্দের টাকা আসলেও কোড সংক্রান্ত জটিলতায় প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতন দেয়া যায়নি। তবে, দ্রুত এ সমস্য সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন এ কর্মকর্তা।
জানা গেছে, কুমিল্লা জেলার নতুন শিক্ষকদের বেতন ভাতা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিলো। সে জটিলতা কেটেছে। জানতে চাইলে কুমিল্লার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল মান্নান গতকাল শুক্রবার দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, নতুন শিক্ষকদের বেতন নিয়ে যে জটিলতা হয়েছিলো তা কেটেছে। আমরা বরাদ্দ পেয়েছি। ঈদের আগেই নতুন সব শিক্ষককে বেতন দেয়া হবে।
সম্প্রতি প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষকদের ঈদ বোনাসের তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। গত ৩ এপ্রিল এ বিষয়ে চিঠি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়। অধিদপ্তরের অর্থ শাখার উপ-পরিচালক এইচ এম আবুল বাশার স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, প্রাক-প্রাথমিকের জন্য সৃষ্ট পদে নিয়োগকৃত সহকারী শিক্ষকরা চলতি অর্থবছরে শুধু ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার উৎসব ভাতা পাবেন। প্রাক-প্রাথমিকে কতোজন শিক্ষক যোগদান করেছেন, গত ঈদুল আজহায় বোনাস পাওয়া শিক্ষকের সংখ্যা ও শিক্ষা ভাতা পাওয়া শিক্ষকের সংখ্যা অধিদপ্তরকে ১০ এপ্রিলের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের। এ পরিস্থিতিতে প্রাক-প্রাথমিকের নতুন শিক্ষকরা বলছেন, ঈদের আগে যে বোনাস পাবো না তা মোটামুটি নিশ্চিত।
সার্বিক বিষয়ে মন্তব্য জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার পক্ষ থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া মেলেনি।