উচ্চ আদালতের সুউচ্চতার আশায় - দৈনিকশিক্ষা

উচ্চ আদালতের সুউচ্চতার আশায়

সিদ্দিকুর রহমান খান |

চলতি অক্টোবরে ঘটে যাওয়া আদালত সংক্রান্ত তিনটি ঘটনার রেশ এখনও কাটেনি আইন-আদালত ক্যাম্পাসে। এর মধ্যে দুটো আদালতের মর্যাদা-সংক্রান্ত। আদালত অবমাননার দায়ে একজন বিচারক ও পৌরসভার একজন নির্বাচিত মেয়রকে কারাদণ্ড দেয়া প্রসঙ্গ দিয়ে লেখা শুরু করি।

পাঠক ইতোমধ্যে জেনেছেন, আপিল বিভাগের একজন বিচারপতিকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করায় গত ১২ অক্টোবর দিনাজপুর পৌর মেয়রকে জেল-জরিমানা করা হয়। তিনি এখন কারাগারে। ওই একই দিন হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ বিচারিক আদালতের একজন বিচারককে আদালত অবমাননার দায়ে জেল-জরিমানা করেন। যদিও এই বিচারক আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত আছেন। আরেকটি হলো সাইবার আইনে দণ্ডিত দুজনের জামিন সংক্রান্ত শুনানিতে দেশ সম্পর্কে এক বিদায়ী বিচারপতির ‘অতি বিপ্লবী’ মন্তব্য এবং সেটাকে ঘিরে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ফুল কোর্টের প্রতিক্রিয়া। ওই বিচারপতি বিদায় সংবর্ধনা না নিয়েই অবসরে গেছেন।     

প্রথমেই আলো ফেলি জনপ্রতিনিধি কর্তৃক আদালত অবমাননা-সংক্রান্ত রায়ের ওপর। দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায় নিয়ে ইউটিউবে আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে কটূক্তি করেন।  সে বক্তব্য ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। মেয়রের বক্তব্য শুনে বিবেকবানরা বিস্মিত না হয়ে পারবেন না। বিচারপতি সম্পর্কে একজন রাজনীতিকের অমন অশালীন শব্দ ব্যবহারের পর নানা মহলে প্রতিক্রিয়া হয়। বিষয়টি আপিল বিভাগের দৃষ্টিতে আনেন কয়েকজন আইনজীবী। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে এই জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিশ ইস্যু করে ব্যাখ্যা তলব করেন। নোটিশ পেয়ে নির্ধারিত তারিখ ২৪ আগস্ট মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম আপিল বিভাগে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ১২ অক্টোবর শুনানির জন্য ফের তারিখ রাখা হয়। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগে সেদিন হাজির হলে আদালত অবমাননার দায়ে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে এক মাসের কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৭ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়। তাকে সাত দিনের মধ্যে দিনাজপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়। জরিমানার এক লাখ টাকা দিনাজপুর গাওসুল আজম বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালে জমাও করেন তিনি। মেয়র এখন কারাগারে। আর দণ্ডিত হওয়ায় তিনি মেয়র পদও হারাবেন।

মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্য শুনলে যে কেউ মন্তব্য করবেন যে,  তিনি সর্বোচ্চ আদালতের একজন বিচারক সম্পর্কে যে অশ্লীল ও অভব্য ভাষায় কথা বলেছেন, এটা অবশ্যই আদালত ও বিচারকের প্রতি অবমাননাকর। আদালতের মর্যাদা অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।

আমরা স্মরণ করতে পারি, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকেও আদালত অবমাননার দায়ে সরাসরি আপিল বিভাগ দণ্ড দিয়েছিলো। আমরা জানি, চার বিভাগের শেষ স্তর আপিল বিভাগ। বিচারিক আদালত থেকে যেকোনো মামলার বিচারের রায়ের বিরুদ্ধে ক্রমান্বয়ে আপিল করে সর্বশেষ ধাপ আপিল বিভাগে পৌঁছুতে হয়। আদালত অবমাননার মামলা যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হাইকোর্টে বিচার হয় এবং আপিল বিভাগেও সরাসরি বিচারের এখতিয়ার ও নজির রয়েছে।

সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্ট একটি ‘কোর্ট অব রেকর্ড।’ এর অবমাননার জন্য তদন্তের আদেশ দান, দণ্ডাদেশ দানসহ সব ক্ষমতার অধিকার রয়েছে। তারপরও বলা যায়, আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে আর আপিলের সুযোগ থাকে না। সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগেই শেষ বিচার হয়ে যায়। আপিল বিভাগের রায়ে হয়তো রিভিউ আবেদন করার সুযোগ থাকে; কিন্তু সেটাও অনেক কারণে হয় না।

সর্বোচ্চ আদালতই নাগরিকের শেষ আশ্রয়স্থল। সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের রক্ষক। এই আদালতের মর্যাদা রক্ষা করা যেমন প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব, তেমনি নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষায়ও আদালতের ভূমিকা অতীব জরুরি। যদিও আমরা একটি হলে আরেকটি কম দেখতে পাই। নাগরিকের অনেক মৌলিক অধিকার প্রশ্নে আদালতকেও নীরব থাকতে দেখি।

প্রসঙ্গত, সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্টের যে কোনো আদেশ নির্দেশ অধস্তন (বিচারিক) আদালতকে অবশ্যই মানতে হবে। এ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, হাইকোর্ট বিভাগের অধস্তন সব আদালত ও ট্রাইব্যুনালের উক্ত বিভাগের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা থাকবে। এই অনুচ্ছেদ বিশ্লেষণ করলে স্পষ্টতই বোঝা যায়, হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে অধস্তন আদালতের বিচারক সোহেল রানা আদালত অবমাননা করেছেন এবং এ জন্য তিনি শাস্তি পেয়েছেন। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, বিচারক সোহেল রানাকে শাস্তি দেয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশন। তারা জুডিসিয়াল অফিসার্স প্রটেকশন অ্যাক্টের বাস্তবায়ন চেয়েছেন। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে আরো জানা যায়, বিচারকরা স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছেন যে, প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডারসহ অনেকেই আদালত অবমাননা করলেও ক্ষমা প্রার্থনা করলেই পার পেয়ে গেলেও বিচারকদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা যায়।

অপরদিকে, জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিক্রিয়াকে ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে তুলনা করেছেন বিচারসংক্রান্ত একজন তথ্যজ্ঞ কলামিস্ট।

বিচারক সোহেল রানার যে মামলাটি নিয়ে আলোচনা, সেটা সংখ্যায় বিবেচনা করলে এখন দুটি মামলা। একটি মামলা কুমিল্লার সিজিএম আদালতে, আরেকটি হাইকোর্ট বিভাগে। অর্থাৎ একটি মামলা থেকেই এখন দুই আদালতে দুটি মামলার উদ্ভব হলো। ৬ বছর আগে এ মামলার ওপর হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়ে রেখেছেন এবং রুল জারি করে বলেছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলা নিষ্পত্তি হবে না। অর্থাৎ ৬ বছর ধরে এই রুলের শুনানিও হচ্ছে না, মামলাও নিষ্পত্তি হচ্ছে না। আবার হাইকোর্টের আদেশের কারণে বিচারিক আদালতেও এ মামলা নিষ্পত্তির সুযোগ নেই। এ ধরনের বহু মামলা হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার কারণে বিচারিক আদালতে অনিষ্পন্ন হয়ে আছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে মামলাজটের। বিচারপ্রার্থীদের যে কী দুর্ভোগ, তা যারা মামলায় পড়েন তারা বোঝেন।

মামলাজট থেকে বিচারপ্রার্থীদের রক্ষা করতে হলে বিচারিক আদালতের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিতে হবে। তাদেরকে শুধু ভয় নয়, উৎসাহের মধ্যেও রাখতে হবে।

 

এমপিওভুক্তির নতুন আদেশ জারি - dainik shiksha এমপিওভুক্তির নতুন আদেশ জারি জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি কুবির বঙ্গবন্ধু হল ও শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন - dainik shiksha কুবির বঙ্গবন্ধু হল ও শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি - dainik shiksha ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক - dainik shiksha এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037798881530762