সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের ৬৬নং বড়কুপট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অজয় কুমার সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির কয়েক হাজার টাকা ও বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য সরকারের দেয়া ৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তাকে বদলির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়, বর্তমান ও সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা।
মঙ্গলবার সকালে বিদ্যালয়ের সামনে তারা উপবৃত্তি ও স্কুল সংস্কারের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে ওই প্রধান শিক্ষকের বদলির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি মো. নাসির উদ্দীন গাজীর নেতৃত্বে আয়োজিত মানববন্ধনে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অজয় কুমার সরকারের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বক্তব্য রাখেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জি এম শাহবুদ্দিন পারভেজ, অভিভাবক খায়রুল ইসলাম, অভিভাবক ফারুক হোসেন, মন্টু মিয়া, অভিভাবক নাসিমা খাতুনসহ অনেকে। কর্মসূচিতে অংশ নেন স্থানীয় অভিভাবক, পিটিএ এবং এসএমসির সদস্যরা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, যতোদিন এই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও বদলি না করা হবে ততোদিন এই স্কুলে কোনো শিক্ষার্থী আসবে না। টাকা আত্মসাতের অভিযোগে উপজেলার সোনাখালি প্রাইমারি স্কুল থেকে বরখাস্ত হয়েছিলেন অজয় কুমার সরকার। পরে তিনি যোগদান করেন ৬৬নং বড়কুপট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এখানেও নতুন করে বিদ্যালয়ের উন্নয়নে সরকারের দেয়া টাকা আত্মসাত করায় আলোচনায় উঠে এসেছেন তিনি। শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির নামের তালিকায় নিজের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করেছেন তিনি।
বিদ্যালয়ের সভাপতি জিএম শরফুদ্দীন পারভেজ বলেন, গত ২০২০, ২১ ও ২২ অর্থবছরের বিদ্যালয়ের বরাদ্দের হিসেব জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে তথ্য সংগ্রহ করলে তাতে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে বিভিন্ন কাজের বরাদ্দের ৮ লাখ টাকা উঠিয়ে নিলেও তিনি বিদ্যালয়ে কোনো কাজ করেননি। খাতা কলমে কাজ দেখিয়ে টাকাগুলো আত্মসাত করেছেন। বাস্তবে দেখা গেছে, যে কাজের জন্যে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তার কোনো কাজই তিনি করেননি।
অভিভাবক নাসিমা বেগম বলেন, ছেলে নাহিদ হাসান নয়ন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। সে উপবৃত্তি টাকা পায়নি। এজন্য একাধিকবার স্কুলে আসছি। কোন সুরাহা মেলেনি। একপর্যায়ে সিটে দেখা যায়, আমার ছেলের নামের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের নম্বর দেয়া। ওই নম্বরে টাকা উঠানো হয়েছে। শুধু আমার ছেলে নয়, অনেকের টাকাও প্রধান শিক্ষকের নম্বরে আসে।
এদিকে মানববন্ধনের সময় প্রধান শিক্ষক স্কুলে না থাকলেও সহকারী শিক্ষকরা স্কুলে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার কোনো শিক্ষার্থী স্কুলে আসেনি। শিক্ষার্থীরা কেনো স্কুলে আসেনি জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষক হোসনেয়ারা পারভীন বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপবৃত্তি কয়েক হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। প্রধান শিক্ষক তার নিজের মোবাইল ফোনে ওই টাকা আত্মসাত করেছেন বলে অভিভাবকরা অভিযোগ করলে তা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে বিষয়টির প্রমাণ হয়েছে। এতে অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
তিনি আরো জানান, শুধু তাই নয়, স্কুলের উন্নয়নে তিন বছরে সরকার ৭ লাখ ৫৫ হাজার দেয়। কোনো কাজ না করে সেই টাকাও আত্মসাৎ করেছেন প্রধান শিক্ষক। এর আগে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছিলো ওই প্রধান শিক্ষককে। এতে অভিভাবকরা হয় তো মনে করছেন, তাদের সন্তানরা ওই প্রধান শিক্ষকের কাছে নিরাপদ নয়। যে কারণে স্কুলে কোন শিক্ষার্থী আসছে না।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক অজয় কুমার সরকার। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে সেগুলো ঠিক নয়। তবে, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে বরখাস্ত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি।
জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. রফিজ মিয়া দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। দুর্নীতির কোনো ছাড় দেয়া হবে না।