দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চলছে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই। সরকার চেষ্টা করেও সফল হতে পারছে না লাগামহীন এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য বলছে, দেশের ৩৭ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ভিসি নেই। প্রো-ভিসি নেই ৮১টিতে আর ট্রেজারার ছাড়াই চলছে ৪৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ইউজিসিসূত্র বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনিয়ম করতেই শীর্ষ এসব পদ ফাঁকা রাখছে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। খেয়ালখুশিমতো বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতেই তারা এ অনিয়ম করে আসছে। শনিবার (২৮ অক্টোবর) বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আকতারুজ্জামান।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী ও একাডেমিক কর্মকর্তা হলেন উপাচার্য (ভিসি)। তিনি সিন্ডিকেট ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন। কিন্তু উপাচার্য নেই এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় রয়েছে : ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগং, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস। এ তালিকায় আরও রয়েছে : প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি, আশা ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, বরেন্দ্র ইউনিভার্সিটি, সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি, চিটাগং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, জার্মান ইউনিভার্সিটি, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স, এনপিআই ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়।
ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান গতকাল প্রতিবেদককে বলেন, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবণতা থাকে আইন অমান্য করার। তারা অনিয়ম করতে আর নিজেদের খেয়ালখুশিমতো বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতেই এসব শীর্ষ পদ ফাঁকা রাখে। বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও আয়ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণ করবেন ট্রেজারার। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট প্রণয়ন, আর্থিক শৃঙ্খলাও তার দায়িত্ব। কিন্তু ট্রেজারার নেই এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে : নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, দ্য মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি, ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটি, টাইমস ইউনিভার্সিটি, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। আর ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার
কেউ নেই এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় রয়েছে : দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, চিটাগং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, এনপিআই ইউনিভার্সিটি, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সনদপত্র বিতরণের ক্ষেত্রে চ্যান্সেলর কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্যই শিক্ষার্থীদের সনদে স্বাক্ষর করবেন। উপাচার্যের নাম করে যারা সনদে স্বাক্ষর করছেন সেগুলো আইনিভাবে বৈধ হচ্ছে না। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শীর্ষ পদ ফাঁকা থাকছে এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আরও অনেক কার্যক্রমই বৈধ হচ্ছে না।এদিকে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘসূত্রতার কারণেও এসব পদে নিয়োগ কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে। সিলেটের নর্থইস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মো. ইলিয়াস উদ্দীন বিশ্বাস প্রতিবেদককে বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রেজারার নিয়োগের জন্য এক বছর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্যানেল প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র জানান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদগুলো ফাঁকা থাকার অনেক কারণ রয়েছে। তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১১২টি (ইউজিসির ওয়েবসাইটের তথ্যমতে)। সে হিসেবে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারারের মোট পদ রয়েছে ৩৩৬টি। আর প্রতিটি পদের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাতে হয় যোগ্য তিন অধ্যাপকের। সে হিসেবে যোগ্য অধ্যাপক প্রয়োজন ১ হাজার আটজন। পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় মিলে এর বেশি অধ্যাপক থাকলেও সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চান না অনেক অধ্যাপক। এ কারণেও ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার নিয়োগের প্যানেল প্রস্তুত করতে ট্রাস্টি বোর্ডকে পোহাতে হয় ভোগান্তি।