উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর জন্মদিন আজ - দৈনিকশিক্ষা

উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর জন্মদিন আজ

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

বিখ্যাত বাঙালি শিশুসাহিত্যিক, বাংলা ছাপাখানার অগ্রপথিক উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর আজ জন্মদিন। তিনি একাধারে লেখক চিত্রকর, প্রকাশক, শখের জ্যোতির্বিদ, বেহালাবাদক ও সুরকার ছিলেন। সন্দেশ পত্রিকা তিনিই শুরু করেন যা পরে তার পুত্র সুকুমার রায় ও পৌত্র সত্যজিৎ রায় সম্পাদনা করেন। গুপি-গাইন-বাঘা-বাইন, টুনটুনির বই ইত্যাদি তারই অমর সৃষ্টি।  

রায় পরিবারের ইতিহাস থেকে জানা যায় তাদের পূর্বপুরুষ শ্রী রামসুন্দর দেও (দেব) অধুনা পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার চাকদহ গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন৷ ভাগ্যাণ্বেষণে তিনি তার পৈতৃক নিবাস ছেড়ে পূর্ববঙ্গের শেরপুরে গমন করেন ৷ সেখানে শেরপুরের জমিদার বাড়িতে তার সাক্ষাৎ হয় যশোদলের জমিদার রাজা গুণীচন্দ্রের সাথে ৷ রাজা গুণীচন্দ্র রামসুন্দরের সুন্দর চেহারা ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধি দেখে মুগ্ধ হন এবং রামসুন্দরকে তার সাথে তার জমিদারিতে নিয়ে যান৷ যশোদলে জমিজমা, ঘরবাড়ি দিয়ে তিনি রামসুন্দরকে তার জামাতা বানান ৷ সেই থেকে রামসুন্দর যশোদলে বসবাস শুরু করেন ৷ তার বংশধররা সেখান থেকে সরে গিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি উপজেলায় মসূয়া গ্রামে বসবাস শুরু করেন৷

উপেন্দ্রকিশোর ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে ময়মনসিংহ জেলার বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি উপজেলার মসূয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা কালিনাথ রায় ছিলেন সুদর্শন ও আরবি, ফারসি ও সংস্কৃতে সুপণ্ডিত। তার মায়ের নাম জয়তারা দেবী। তার ডাকনাম ছিলো শ্যামসুন্দর মুন্সী। উপেন্দ্রকিশোর শ্যামসুন্দরের আট সন্তানের মধ্যে তৃতীয় পুত্রসন্তান। তার পৈতৃক নাম ছিল কামদারঞ্জন রায়। পাঁচ বছরেরও কম বয়সে তার পিতার অপুত্রক আত্মীয় জমিদার হরিকিশোর রায়চৌধুরী তাকে দত্তক নেন ও নতুন নাম দেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী।

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী বাংলা সাহিত্য জগতের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি নাম। সাহিত্যিক সুকুমার রায়ের পিতা এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুরদা ছিলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। যদিও নবাব সিরাজ উদ দৌলার বংশধরদের সঙ্গে বাংলার বিখ্যাত রায় পরিবারের কোনও যোগাযোগ নেই। 

মেধাবী ছাত্র বলে পড়াশোনায় ভাল ফল করলেও ছোটোবেলা থেকেই উপেন্দ্রকিশোরের পড়াশোনার থেকে বেশি অনুরাগ ছিল বাঁশি, বেহালা ও সঙ্গীতের প্রতি। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে উপেন্দ্রকিশোর প্রবেশিকা পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে বৃত্তি পান। তারপর কলকাতায় এসে ভর্তি হন প্রেসিডেন্সী কলেজে। এরপর তিনি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন।

একুশ বছর বয়সে বিএ পাস করে ছবি আঁকা শিখতে আরম্ভ করেন উপেন্দ্রকিশোর। এই সময় তিনি ব্রাহ্ম সমাজের সদস্য হওয়ায় তার অনেক আত্মীয়ের সঙ্গে মনোমালিন্য ঘটে। ছাত্র থাকাকালীনই তিনি ছোটোদের জন্যে লিখতে আরম্ভ করেন। সেই সময়কার সখা, সাথী, মুকুল ও জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত বালক নামে মাসিক পত্রিকাগুলিতে তার লেখা প্রকাশ হতে শুরু হয়। প্রথমদিকের (যেমন সখা, ১৮৮৩) প্রকাশিত লেখাগুলি ছিলো জীববিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ। তার পরে চিত্র অলঙ্করণযুক্ত গল্প প্রকাশিত হতে আরম্ভ হয়।

১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ২৩ বছরের উপেন্দ্রকিশোরের সঙ্গে বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক ব্রাহ্মসমাজের দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম পক্ষের কন্যা বিধুমুখীর বিবাহ হয়, এবং তখনকার কলকাতার কর্নওয়ালিস স্ট্রীটের ব্রাহ্ম সমাজের মন্দিরের বিপরীতে লাহাদের বাড়ির দোতলায় কয়েকটি ঘর ভাড়া নিয়ে উপেন্দ্রকিশোরেরর সংসার জীবন শুরু হয়। উপেন্দ্রকিশোরের তিন ছেলে ও তিন মেয়ে। ছেলেরা হলেন সুকুমার, সুবিনয় ও সুবিমল, এবং মেয়েরা হলেন সুখলতা, পুণ্যলতা ও শান্তিলতা। প্রত্যেকেই শিশু সাহিত্যে অবদান রেখেছেন। জ্যেষ্ঠা কন্যা সুখলতা রায় ও জ্যেষ্ঠ পুত্র সুকুমার রায় উল্লেখযোগ্য।

যোগীন্দ্রনাথ সরকারের সিটি বুক সোসাইটি থেকে তার প্রথম বই ‘ছেলেদের রামায়ণ’ প্রকাশিত হয়। এই বইটি সমাজে অতি আদরের সঙ্গে সমাদৃত হলেও মুদ্রণ সম্বন্ধে অতৃপ্ত উপেন্দ্রকিশোর ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে বিদেশ থেকে তখনকার দিনের আধুনিকতম মুদ্রণযন্ত্রাংশাদি নিজের খরচায় আমদানি করেন, এবং ৭ নম্বর শিবনারায়ণ দাস লেনে নতুন ভাড়াবাড়ি নিয়ে ইউ রায় অ্যান্ড সন্স নামে নতুন ছাপাখানা খোলেন। এখানের একটি কামরায় তিনি নিজের আঁকার স্টুডিও খোলেন এবং সেখানে হাফটোন ব্লক প্রিন্টিং নিয়ে অনেক পরীক্ষা নিরিক্ষা করেন। ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বড় ছেলে সুকুমারকে বিলাতে পাঠান ফোটোগ্রাফী ও মুদ্রণ সম্বন্ধে উচ্চশিক্ষা লাভ করার জন্যে।

গল্প, নাটক, বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ, কবিতা, গান, মনোরম ছবি সবই তিনি ছোটদের উপহার দিয়েছেন। তার সম্পাদনায় শিশুতোষ পত্রিকা ‘সন্দেশ’ ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়। স্বরচিত বইগুলোতে নিজের আঁকা ছবি ছিলো তার বইয়ের অন্যতম আকর্ষণ। ‘বলরামের দেহত্যাগ’ তার আঁকা বিখ্যাত চিত্র। নানা রঙের হাফটোন ছবি ছাপার প্রযুক্তিতে যে উৎকর্ষ হয়েছে, তার পেছনে উপেন্দ্রকিশোরের অবদান রয়েছে।

গবেষণা করে তিনি নানা রকম ডায়াফ্রাম, রি-স্ক্রিন ও অ্যাডজাস্টার যন্ত্র নির্মাণ করেন। ডায়োটাইপ ও রে-প্রিন্ট পদ্ধতি তার উদ্ভাবিত। তার উল্লেখযোগ্য বই ‘ছোটদের রামায়ণ’, ‘সেকালের কথা’, ‘ছোটদের মহাভারত’, ‘মহাভারতের গল্প’, ‘বিবিধ প্রবন্ধ’, ‘গল্পমালা’, ‘ছড়া-কবিতা-গান’ প্রভৃতি।

১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে ডিসেম্বর মাত্র বাহান্ন বছর বয়সে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরি পরলোক গমন করেন। 

 

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.023782968521118