এইচএসসি: পরীক্ষার্থীদের হাতে কীভাবে ভুল প্রশ্ন গেলো - দৈনিকশিক্ষা

এইচএসসি: পরীক্ষার্থীদের হাতে কীভাবে ভুল প্রশ্ন গেলো

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

শিক্ষকের ভুলেই ভুল প্রশ্নপত্র বিতরণ হয়েছে কেন্দ্রে। প্রশ্নপত্র বাছাইয়ের দুই স্তরেই ভুল করেছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিজয় স্মরণী কলেজ কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব ও পরীক্ষা কমিটি। আর তাদের ভুলে পদার্থ বিজ্ঞান প্রথম পত্রের পরীক্ষায় দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্র এনে দেড় ঘণ্টা দেরিতে পরীক্ষা শুরু করা হয়েছে।

 

ভুল প্রশ্নপত্র পরীক্ষার হল পর্যন্ত কীভাবে গেল? প্রশ্ন পরীক্ষার হলের শিক্ষার্থীদের কাছে যাওয়ার আগে অন্ততপক্ষে তিন স্তরে ক্রস চেক হয়ে থাকে। কোথাও তা শনাক্ত হলো না। তাহলে পরীক্ষা কমিটি কী কাজ করে? এই প্রশ্ন অভিভাবকদের কাছ থেকেই উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিজয় স্মরণী কলেজ কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষারত অভিভাবকরা দাবি তুলেন ভুল প্রশ্নপত্র বিতরণের সাথে যারা জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কিন্তু ভুল প্রশ্নপত্র কীভাবে গেলো?

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পরীক্ষা শুরুর প্রায় এক মাস পূর্বে প্রশ্ন ঢাকার বিজি প্রেস থেকে জেলা প্রশাসনের ট্রেজারিতে চলে আসে। ট্রেজারিতে প্রশ্নগুলো আসার পর ট্রেজারির দায়িত্বরত নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার একটি রুটিন করে দেন। সেই রুটিনে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর প্রতিনিধি টিম ট্রেজারি অফিসে গিয়ে বিজি প্রেস থেকে আসা প্রশ্নগুলো বাছাই করে পরীক্ষার রুটিন অনুযায়ী বিষয় ও বিষয়কোড অনুযায়ী পৃথক পৃথক খাম তৈরি করবেন। সেই খামে রুটিন অনুযায়ী নির্ধারিত দিনের পরীক্ষার প্রশ্নপ্রত্র থাকবে। পরবর্তীতে পরীক্ষার দিন সকালে নির্ধারিত দিনের খাম ট্রেজারি অফিস থেকে কেন্দ্র সচিবের প্রতিনিধিরা নিয়ে আসবে এবং কেন্দ্রে এসে সেই খাম খুলবেন। খাম খোলার পর ফয়েল পেপারের (যে খামে প্রশ্ন থাকে) উপরে লেখা বিষয় কোড যাচাই করবেন।  

পরীক্ষার রুটিন অনুযায়ী ফয়েল পেপারের উপরের বিষয় কোড সঠিক হলে ফয়েল পেপার কেটে প্রশ্নপত্র বের করে কক্ষ ভিত্তিক বন্টন করবেন। যদি পরীক্ষার বিষয়ের সাথে ফয়েল পেপারের উপরের বিষয় কোডের মিল না থাকে তাহলে ফয়েল পেপার কাটা হয় না। আর এই পুরো কাজটি সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের পরীক্ষা কমিটি সম্পাদন করে থাকেন। আর কমিটিকে নির্দেশনা দিয়ে থাকেন কেন্দ্র সচিব। 

ট্রেজারি অফিসে প্রশ্নপত্র বাছাই বিষয়ে কথা হয় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ আল আমিন হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, ‘শিক্ষাবোর্ডের অনুমতি সাপেক্ষে ও কেন্দ্র সচিবের চিঠি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা ট্রেজারি অফিসে প্রবেশ করে প্রশ্নপত্র বাছাই করেন। এ সময় উনারা প্রশ্নপত্র থাকা ফয়েল পেপারের প্যাকেটগুলো পরীক্ষার রুটিন অনুযায়ী নতুন আরেকটি প্যাকেট তৈরি করেন। সেই প্যাকেটের গায়ে পরীক্ষার তারিখ, বিষয় ও বিষয় কোড লেখা হয়। এসকল কাজ কেন্দ্র সচিবের প্রতিনিধিরা করেন। পরীক্ষার দিন কেন্দ্র সচিবের প্রতিনিধিরা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট দিনের প্যাকেট নিয়ে যান।’

তাহলে বাছাই করার সময় একদিনের পরীক্ষার দিন আরেকদিনের প্রশ্নপত্র ঢুকানোর সুযোগ রয়েছে কিনা এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিনিধিরা এমন ভুল করতেই পারেন। এজন্য কাজটি খুব সতর্কতার সাথে করতে হয়। এজন্য ট্রেজারি অফিস থেকে কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র নিয়ে যাওয়ার পর ফয়েল পেপার কাটার আগে বিষয় কোড আরেকবার মিলিয়ে নিতে হয়। আজকের পরীক্ষার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র এই কাজটি করেননি। যদি করতো তাহলে তখনই ভুলটি শনাক্ত হয়ে যেত। 

একই কথা বলেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মুজিবুর রহমান। তিনি দেশ বলেন, ‘কেন্দ্র সচিবের প্রতিনিধিরা (শিক্ষক) যদি সঠিকভাবে প্রশ্নপত্র বাছাই করতো তাহলে এই ভুল হতো না। আবার পরীক্ষার দিন সকালে ফয়েল পেপার কাটার আগে বিষয় কোড মিলিয়ে নিলেও এই ভুল হতো না। কারণ ফয়েল পেপারের উপরে বিজি প্রেস থেকে বিষয়, পত্র ও বিষয় কোড লেখা থাকে।’

পরীক্ষার কেন্দ্রে এই ভুল হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বিজয় স্মরণী কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে এম রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার পরিচালনায় নিয়োজিত শিক্ষকরা ক্রস চেকগুলো সঠিকভাবে করলে ভুল এড়ানো যেতো। তারপরও আমি একটি তদন্ত কমিটি করেছি, এছাড়া জেলা প্রশাসন থেকেও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই ঘটনায় কারা দোষী তা বের হয়ে আসবে।’ এদিকে এ ঘটনায় কলেজটির অধ্যক্ষ ও কেন্দ্র সচিবের দায়িত্বে থাকা শিব শংকর শীল ও আহ্বায়কের দায়িত্বে থাকা আবদুল্লাহ আল নোমানকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। 

জানা যায়, সকাল ১০টায় যথানিয়মে  পদার্থ বিজ্ঞান প্রথম পত্রের নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্নপত্র বিতরণ হয় এবং পরীক্ষার্থীরাও পরীক্ষা দেয়। পরবর্তীতে সাড়ে ১০টায় সৃজনশীল প্রশ্নপত্র বিতরণ করার পর শিক্ষার্থীরা দেখতে পায় দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র। তখনই কেন্দ্রে হৈ চৈ পড়ে যায়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিতরণকৃত প্রশ্নপত্র ফেরত নেয়া হয়। কেন্দ্রে প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্র না থাকায় জেলা প্রশাসনের ট্রেজারি থেকে প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়ে দুপুর ১২টায় পরীক্ষা শুরু করা হয়।

এতে দেড় ঘণ্টা পর দুপুর আড়াইটায় পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ফারজানা লাকী নামের এই কেন্দ্রের এক শিক্ষার্থী জানান, নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্নপত্র ঠিক থাকলেও সৃজনশীল প্রশ্নপত্র ভুল দেয়া হয়। পরে আমাদের হৈ চৈয়ে প্রশ্নপত্র ফেরত নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন এনে দুপুর ১২টায় শুরু হয়। তাই পরীক্ষা নিয়ে খুব টেনশন হয়েছে। 

এই ভুলের কারণে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলে স্বাভাবিক ছন্দে পরীক্ষা দিতে পারেনি। তারা টেনশনে ছিল এতে পরীক্ষাও ভালো হয়নি বলে অভিযোগ অভিভাবকদের। যেহেতু দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গেছে তাই বিকল্প প্রশ্নপত্রে পদার্থ বিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর রেজাউল করিম চৌধুরী। 

তিনি বলেন, রুটিন অনুযায়ী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে বিকল্প প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।  

উল্লেখ্য, বিজয় স্মরণী কলেজে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৬৩৩ জন। এর মধ্যে পদার্থ বিজ্ঞানের পরীক্ষার্থী ছিল ৩৬০ জন।

কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে - dainik shiksha র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0084340572357178