রাঙামাটিতে কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে বাঘাইছড়ির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে উপজেলার কাচালং সরকারি কলেজ বন্যার পানির নীচে তালিয়ে থাকায় চলমান এইচএসসি পরীক্ষা ও স্নাতক পরীক্ষা নিয়ে বিপাকে শিক্ষার্থী ও কলেজ কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (৩ জুলাই) সকালে থেকে স্নাতক ২য় বর্ষের পরীক্ষার্থীরা নৌকায় করে পার হয়ে পরীক্ষা দিতে দেখা গেছে। বাবার কাঁধে চড়েও এক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা দিতে যেতে দেখা গেছে। প্রায় ৩ থেকে ৫ ফুট পানির নীচে শ্রেণি কক্ষ, কলেজ ক্যাম্পাস, অধ্যক্ষের বাসভবনসহ পুরো ক্যাম্পাস।
পানিতে তলিয়ে আছে সড়ক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ঘরবাড়ি, সড়ক ও পরীক্ষা কেন্দ্র তালিয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা রয়েছেন উৎকণ্ঠায়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত কথা জানান জেলা প্রশাসক।
মঙ্গলবার উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার্থীরা কোমর সমান পানি মাড়িয়ে পরীক্ষায় দিয়েছেন। বৃহস্পতিরাও ইংরেজি বিষয়ে উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ড পরীক্ষা রয়েছে। পরীক্ষায় কেন্দ্র কাচালং সরকারি কলেজের শ্রেণি কক্ষও পানিতে ডুবে আছে।
স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার্থী মো. আশিকুর রহমান মানিক জানান, লুঙ্গি পড়ে কোমর পানি মাড়িয়ে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি। গত কয়েকদিনে বর্ষায় বাসায়ও পানি। তাই লেখাপড়াও করতে পারি নি। পরীক্ষায় কেন্দ্রেও পানিতে ডুবে আছে।
আরেক শিক্ষার্থী মঙ্গল চান চাকমা বলেন, বাড়ি থেকে বের হওয়ার কোনো পরিস্থিতি ছিল না। নৌকাও পাইনি। পরে ডুবা সড়ক দিয়ে হেটে হেটে আসতে হয়েছে। বাড়ি ঘরে পানি আবার পরীক্ষা কেন্দ্রে পানি। আমাদের জন্য খুবই কষ্ট হচ্ছে। পরীক্ষা কয়েকদিন পিছিয়ে দিলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো।
এইচএসসি পরীক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম পানিবন্দি অবস্থায় আছে পড়াশোনা করার মতো ঘরে কোনো পরিবেশ নেই। তার অভিভাবক এই বিষয়ে খুবই চিন্তিত। শুধু আরিফুল নয় একই চিত্র উপজেলার বেশিরভাগ বাড়িতে।
কাচালং সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা খুবই চিন্তিত, বন্যার কারণে ৪৬৮ জন শিক্ষার্থীর পরীক্ষা কিভাবে নিবো বুঝতে পারছি না। ইতোমধ্যে বন্যার বিষয়টি বোর্ড কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু পরীক্ষা বন্ধের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি। এছাড়াও সকালে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ১৭৪ জনের পরীক্ষা নিতে হয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সবারই খুবই কষ্ট হচ্ছে।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান জানান, বাঘাইছড়ির ৮টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার পুরো এলাকা পানিতে তালিয়ে আছে। ৩২টি গ্রামের পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। আড়াই হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে জানানো হয়েছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে পরীক্ষা নেয়া কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। পানি না কমলে আগামী কালকে এইচএসসি পরীক্ষা বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার হবে।