দৈনিক শিক্ষাডটকম, মানিকগঞ্জ: সিংগাইর উপজেলার খাসেরচর মাহমুদিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দাবি করছেন দুই শিক্ষক। দুই জনই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দাপ্তরিক কাজকর্মে সিল-স্বাক্ষরও দেন। চেয়ারে বসা নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। একসময়ের জেলার স্বর্ণ পদকপ্রাপ্ত এই মাদরাসাটি ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে বলে স্থানীয়রা মনে করেন।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দাবি করা দুইজন হলেন, মো. শামছুদ্দিন এবং মো. আকরাম হোসেন। শামছুদ্দিন স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় তার সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে না পারায় আকরাম হোসেন অধ্যক্ষের কক্ষ ছেড়ে অন্য একটি কক্ষে বসে দায়িত্ব পালন করেন। তবে সর্বশেষ তার স্বাক্ষরে শিক্ষকরা ব্যাংক থেকে বেতনের টাকা উত্তোলন করেছেন।
দেখা গেছে, মৌসুমী আক্তার নামে মাদরাসার ফাজিল ১ম বর্ষের এক শিক্ষার্থীর পরীক্ষার প্রবেশপত্রে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নামের সিলসহ স্বাক্ষর করেছেন মো. শামছুদ্দিন। ঐ প্রবেশপত্রটি গত ৮ ফেব্রুয়ারি অনলাইনে আপলোড করা হয়েছে। অন্যদিকে ২০ ফেব্রুয়ারি ঐ শিক্ষার্থীরই আলিম ও দাখিল পরীক্ষার নম্বরপত্র সত্যায়িত করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের সিলসহ স্বাক্ষর করেছেন মো. আকরাম হোসেন। এখন এই পদটি নিয়ে চলছে শক্তির মহড়া। স্থানীয়দের কেউ পক্ষ নিয়েছেন শামছুদ্দিনের, কেউ আকরাম হোসেনের।
মাদরাসার সাবেক সভাপতি আব্দুর রহমান বলেন, শামছুদ্দিন অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনের অপকৌশল হিসেবে, অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে গত ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর, স্মারক নম্বর ৫৭.২৫.০০০০.০০৩.০১.০৬১.২৩.১৭৯৭ মূলে মহাপরিচালক, মাদরাসাশিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক ডিজি প্রতিনিধি প্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও উক্ত নিয়োগ কার্যক্রমটি সম্পন্ন না করে তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া ইতিপূর্বে তিনি নিজেকে অধ্যক্ষ এবং অধ্যাপক দাবি করে বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করলে তারা তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তদন্তকালে বিষয়টির সত্যতা পান। পরবর্তী সময়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে মহাপরিচালক, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি পাঠান। এছাড়া এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জনৈক মামুন আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর অধ্যক্ষ এবং অধ্যাপক পদ ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেয়।
এদিকে মাদরাসা কমিটির সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন, মো. শামছুদ্দিনই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। মাদরাসার জন্য অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হবে মর্মে বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছিল। তখন মো.শামছুদ্দিন অধ্যক্ষ হিসেবে আবেদন করায় নিয়ম অনুযায়ী পদত্যাগ করেন এবং রেজুলেশনের মাধ্যমে মো. আকরামকে তার দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। কিন্তু একটি পক্ষ আদালতে রিট করায় নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। ফলে শামছুদ্দিনকে পুনরায় দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিছুদিনের জন্য আকরাম ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হলেও এখন শামছুদ্দিনই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। অন্য দিকে আকরাম হোসেন বলেন, মাদরাসা কমিটি তাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়েছে। তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে সেই মর্মে কোনো চিঠি পাননি।