দৈনিকশিক্ষাডটকম, আদালত প্রতিবেদক : এক যুগে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক গোলাম মোস্তফা সারোয়ার ওরফে সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন নাহার রুনা ওরফে মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ড। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে নিজেদের ভাড়া বাসায় খুন হন এ সাংবাদিক দম্পত্তি।
হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই ৪৮ ঘণ্টা ১২ বছরেও শেষ হয়নি। শেরেবাংলা থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ হয়ে মামলাটি তদন্ত করছে র্যাব। এতদিনে ৬ জন তদন্ত কর্মকর্তা বদলেছে। তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য ১০৫ বার সময় চাওয়া হয়েছে। সাগর-রুনি দম্পত্তির সেদিনের ৫ বছরের ছেলে মেঘ এখন ১৭ বছরের যুবক। কিন্তু কিন্তু মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের কোনো সুখবর নেই। বিচারতো আরো পরের কথা।
আদালতের নথী পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ২০ মার্চ তদন্ত কর্মকর্তা ওয়ারেছ আলী আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, মামলায় জব্দকৃত আলামতের সঙ্গে ম্যাচিং করার জন্য গ্রেফতার ৮ আসামি ও সন্দেহভাজন ২১ আত্মীয়-স্বজনের নমুনা যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগার থেকে ডিএনএ রিপোর্টসমূহ পাওয়ার কথা আরেক প্রতিবেদনে স্বীকার করা হলেও তা যাচাই বাছাই চলছে মর্মে ওই প্রতিবেদন দাবি করা হয়। এরপর আর তেমন কোনো আপডেট নেই।
ঘটনার ৮ মাস পর ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ অক্টোবর বনানী থানার একটি হত্যা ও ডাকাতি মামলায় গ্রেফতার থাকা ৫ আসামি মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু, বকুল মিয়া, কামরুল হাসান অরুন, রফিকুল ইসলাম ও আবু সাঈদকে গ্রেফতার দেখিয়ে এ মামলায় রিমান্ড চাওয়া হয়। এ ছাড়া ওইদিনই আরো দুই আসামি রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমান ও বাড়ির দারোয়ান পলাশ রুদ্র পালকে গ্রেফতার এবং পরবর্তীতে অপর দারোয়ান আসামি এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবিরকে গ্রেফতার করা ছাড়া গত আড়াই বছরে মামলার তদন্তে দৃশ্যত কোনো অগ্রগতি নেই।
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ এপ্রিল মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব।
এরপর সাগর রুনির লাশ কবর থেকে তোলার আবেদন করে র্যাব। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ এপ্রিল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিদুজ্জামানের উপস্থিতিতে সাগর রুনির লাশ তোলা হয়। তাতে পরীক্ষা করে দেখা যায় নিহত সাগর রুনিকে হত্যার আগে কোনো নেশাজাতীয় খাবার পানীয় দেয়া হয়নি এবং কোনো বিষও পাওয়া যায়নি।
এরপর ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ৭ জুন থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত জব্দকৃত আলামতের সঙ্গে ম্যাচিং করার জন্য ৮ আসামি ও সন্দেহভাজন ২১ আত্মীয়ের নমুনা যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। মূলত এরপরই মামলার তদন্তে স্থবিরতা নেমে আসে।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিলো। কিন্তু এদিনও কোনো প্রতিবেদন দাখিল না করায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামি ২৭ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।