জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ পদত্যাগ করেছেন। রোববার (১১ আগস্ট) রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে তিনি ইমেইলে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
পদত্যাগপত্রে বলা হয়, “আপনার (আচার্য) আদেশক্রমে আমাকে গত ১২ জুলাই ২০২৩ তারিখে ০৭,০০,০০০০,০৭৯,১১,০২১,৮৮,২৫২ নং স্বারক পত্রের মাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছিলো। আমি উপ-উপাচার্যের (শিক্ষা) দায়িত্ব পালন কালে গত একবছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশন জ্যাম কমানো, শিক্ষা গবেষণার প্রসার থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক র্যাংকিং এ নিয়ে আসার জন্য সর্বাত্মক প্রয়াস নিয়েছি"।
"বর্ণিত অবস্থায় আমার পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করার জন্য আপনাকে বিনীত অনুরোধ করছি"।
অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ হতে ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে স্নাতক ও ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে প্রভাষক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে যোগদান করেন। বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে কাজের মাধ্যমে কখনও হয়েছেন আলোচিত আবার কখনও সমালোচিত।
অধ্যাপক ফিরোজ কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন শেষে ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। বন্যপ্রাণী বাস্তুশাস্ত্র, ব্যবস্থাপনা এবং সংরক্ষণ নিয়ে ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে কাজ করে আসছেন এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়াইল্ডলাইফ রেসকিউ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া একাধারে বিভাগীয় সভাপতি, সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তবে অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজের বিরুদ্ধেও ছিল নানা অনিয়মের অভিযোগ।
তিনি প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি থাকাকালীন সময়ে ভর্তি পরীক্ষা কমিটি গঠনে পক্ষপাতদুষ্টতা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে। এ সময়ে তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ শিক্ষক অধ্যাপক মফিজুল কবির টানা তিনবার ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান বলে জানা যায়। ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষে স্নাতক শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় মেধা ও অপেক্ষমাণ তালিকা প্রণয়নে জালিয়াতির পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রশাসন ওই বিভাগে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি স্থগিত করেন। এ ছাড়া একই সময়ে একই শিক্ষাবর্ষে তিনবার ২য়, ৩য় ও ৪র্থ স্নাতক (সম্মান) পর্বে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনসহ নানা অভিযোগের বিভিন্ন সময় সমালোচিত হয়েছেন।
সর্বশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গত ১৫ জুলাই রাতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হন। এ ঘটনার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, প্রভোস্ট, প্রক্টর সহ প্রশাসনের সাহায্য চেয়েও পাননি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।