এমপিওভুক্ত শিক্ষক কল্যাণে শুরু হচ্ছে শিক্ষার্থীর কাছে টাকা তোলা - দৈনিকশিক্ষা

এমপিওভুক্ত শিক্ষক কল্যাণে শুরু হচ্ছে শিক্ষার্থীর কাছে টাকা তোলা

রুম্মান তূর্য |

শিক্ষকদের কল্যাণ ও অবসর সুবিধার টাকা জোগানের ভার শিক্ষার্থীদের কাঁধে দেয়া হয়েছিলো আগেই। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা নেহায়েত কম হয়নি। এ নিয়ে খোদ শিক্ষক মহলেও ছিলো অসন্তোষ। তবে সব ওজর-আপত্তি পাশ কাটিয়ে থোক থোক বরাদ্দ, স্থায়ী আমানত ও শিক্ষকদের এমপিও থেকে কেটে নেয়া টাকার সঙ্গে মিলিয়ে ওই তহবিল গঠন অচিরেই শুরু হচ্ছে। আগামী ২২ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে একাদশে ভর্তি। এ প্রক্রিয়ায় প্রাথমিক নিশ্চায়নের সময় শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধার ভাতা ফি নামে ১০০ টাকা করে নেয়া হবে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে। তাই আগের বছরের ২২৮ টাকার সঙ্গে ১০০ টাকা যোগ করে ৩২৮ টাকা করে গুনতে হবে শিক্ষার্থীদের। 

গতকাল বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীক স্বাক্ষরিত একাদশ শ্রেণির ভর্তি নীতিমালায় এ ফি নেয়ার ঘোষণা এসেছে। সচিব আবু বকর ছিদ্দীক পদাধিকার বলে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের সভাপতি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, এবার একাদশে ভর্তি নিশ্চায়নের ফি ১০০ টাকা বাড়ছে। এ টাকা এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবসর ভাতা ও কল্যাণ সুবিধা খাতে দেয়া হবে। এ টাকা থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা দেয়া হবে।

আগে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চায়নের জন্য রেজিস্ট্রেশন ফি ১৩৫ টাকা, ক্রীড়া ফি ৫০ টাকা, রোভার স্কাউট ফি ১৫ টাকা, রেডক্রিসেন্ট ফিয়ের জন্য ১৬ টাকা, বিজ্ঞান প্রযুক্তি ফিয়ের জন্য ৭ টাকা ও বিএনসিসি ফি বাবদ ৫ টাকাসহ মোট ২২৮ টাকা নেয়া হতো। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শিক্ষক কল্যাণ তহবিল ও অবসর সুবিধা ভাতা ফিয়ের ১০০ টাকা। তাই এবার একাদশে ভর্তির প্রাথমিক নিশ্চায়নে মোট ফি হচ্ছে ৩২৮ টাকা। 

জানা গেছে, চলতি বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১৭ লাখ ৪৩ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই ১৭ লাখ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১০০ টাকা করে ফি নেয়া হলেও শিক্ষকদের অবসর ভাতা ও কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য সংগ্রহ হবে ১৭ কোটি টাকা।

দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও (বেতন-ভাতার সরকারি অংশ) থেকে প্রতিমাসে প্রায় ৩১ কোটি টাকা কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য ও ৪৬ কোটি টাকা অবসর সুবিধা বোর্ডের জন্য কেটে রাখা হয়। আর মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষকদের এমপিও থেকে প্রতিমাসে এ দুই খাতের জন্য কেটে রাখা হয় ৩২ কোটি টাকার বেশি। প্রতি মাসে শিক্ষকরা প্রায় ১০৯ কোটি টাকা নিজেদের এমপিও থেকে এ দুই খাতে দেন। বর্তমানে শিক্ষকদের এমপিও থেকে কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য ৪ শতাংশ ও অবসর সুবিধা বোর্ডের জন্য ৬ শতাংশসহ মোট ১০ শতাংশ টাকা কেটে রাখা হয়।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২৫-৩০ বছর চাকরি জীবন শেষে শিক্ষক-কর্মচারীদের ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসর সুবিধা’ ও ‘কল্যাণ ট্রাস্ট’ থেকে বিভিন্ন হারে আর্থিক সুবিধা দেয়া হয়। কিন্তু এ টাকা পেতে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অবসর সুবিধার জন্য কোনো কোনো শিক্ষক আবেদন করে পাঁচ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ মারাও গেছেন। শিক্ষকদের অভিযোগ, এ টাকা পেতে তদবির আর ঘুষ দিতে হয়। পরিস্থিতি এমন যে, চেক তৈরি হওয়ার পরও ঘুষ ছাড়া তা ইস্যু করা হয় না। এক্ষেত্রে বিশেষ করে অবসর বোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তা, পিয়ন, ড্রাইভারের সমন্বয়ে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এছাড়া উভয় বোর্ডের স্থায়ী আমানতের টাকা তফসিলি ব্যাংক থেকে বেসরকারি ব্যাংকে রাখার বিনিময়েও নানা সুবিধা নেয়ার অভিযোগ আছে। এ কারণে স্থায়ী আমানতের টাকা সরকারি ব্যাংকে রাখার সিদ্ধান্ত হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর পর্যন্ত ত্রিশ হাজার শিক্ষক কর্মচারী অবসর সুবিধার আবেদন নিষ্পত্তি করার অপেক্ষায় ছিলেন। শিক্ষকদের শুধু অবসর সুবিধার টাকা দিতে প্রতিবছর ৩০০ কোটি টাকা ঘাটতি থাকে বলে গত জানুয়ারিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে পাঠানো একটি চিঠিতে জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। 

অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের দাবি পূরণ করা হয় দুটি খাতের আয় থেকে। উভয় সংস্থার স্থায়ী আমানত থেকে প্রাপ্ত আয় ও প্রতি মাসে শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও থেকে কর্তন করা আয়। তাছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে থোক বরাদ্দ দেয়া হয়। যদি ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ফি আদায় করা হয়, তাহলে তা এ দুই আয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। 
জানা গেছে, যথাক্রমে ২০০৪ ও ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি বাবদ শিক্ষকদের অবসর ও কল্যাণ ভাতার টাকা আদায়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু শিক্ষকদের আপত্তির মুখে তা বাস্তবায়ন হয়নি। 

যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনে এভাবে ফি নেয়ার ঘটনা নতুন নয়। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের পর কয়েক মাস এ খাতে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ফি নেয়া হয়। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে বিএনপি সরকার তা বন্ধ করে দিয়েছিলো। শিক্ষকদের ভোগান্তি দূর করতে এ ফি আরোপ জরুরি বলে মনে করছেন অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের সংশ্লিষ্টরা।

 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল   SUBSCRIBE  করতে ক্লিক করুন।

এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প বিসিএসে আনুকূল্য পেতে যেচে তথ্য দিয়ে বাদ পড়ার শঙ্কায় - dainik shiksha বিসিএসে আনুকূল্য পেতে যেচে তথ্য দিয়ে বাদ পড়ার শঙ্কায় বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ছাত্রলীগ নেতাকে উপাচার্যের পিএস নিয়োগ - dainik shiksha বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ছাত্রলীগ নেতাকে উপাচার্যের পিএস নিয়োগ ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ জাল সনদে চাকরি করছেন এক বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষক - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছেন এক বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষক কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ছাত্র আন্দোলনে নি*হত ৯ মরদেহ তোলার নির্দেশ - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নি*হত ৯ মরদেহ তোলার নির্দেশ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033087730407715