এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন হাজারো শিক্ষক। কারণ মাধ্যমকি ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ঢাকা আঞ্চলিক অফিসে নতুন উপপরিচালক (ডিডি) পদায়নের আদেশ হলেও এমপিও (বেতন-ভাতার সরকারি অংশ) আবেদন নিষ্পত্তির সময় শেষ হয়েছে গত মঙ্গলবার। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষকরা বলছেন, যেহেতু এতোদিন ডিডি ছিলো না, তাই এমপিও নিষ্পত্তির সময় বাড়ানো হোক। তা হলে অন্তত অতিরিক্ত ৪ মাস তাদেরকে অর্থকষ্টে ভুগতে হবে তাদেরকে।
গতকাল বুধবার অবধি ঢাকা অঞ্চলের অনেক শিক্ষক দৈনিক আমাদের বার্তাকে এমপিও আবেদন নিষ্পত্তির সময় বাড়ানোর দাবির কথা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে পুরানো শিক্ষকরাও বিএড স্কেল, উচ্চতর স্কেলের আবেদন নিষ্পত্তির সময়ও বাড়ানোর কথা জানান তারা।
ঢাকা অঞ্চলের শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর, বলেন, আমার এমপিওর আবেদন ডিডি অফিসে পড়ে আছে, নিষ্পত্তি হচ্ছে না। অধিকাংশই এনটিআরসিএর সুপারিশে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন জাহাঙ্গীর।
গোপালগঞ্জের শিক্ষক গৌরব পাল দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, স্কুল পর্যায়ে নতুন এমপিও ফাইলের ডিডি অফিস থেকে এপ্রুভ করার লাস্ট ডেট ছিলো ১২ নভেম্বর। কিন্তু ঢাকায় এতোদিন ডিডি না থাকায় তা করা হয়নি। এখন যেহেতু নতুন ডিডি নিয়োগ পেয়েছে তাই নতুন এমপিও ফাইল নিষ্পত্তি হবে।
অন্যদিকে প্রোগ্রাম ডান করার সময় ১৩-১৮ নভেম্বর। যেহেতু সময় এখনো আছে। তাই ইচ্ছা করলেই এখনো ডিডি অফিস ১৮ তারিখ পর্যন্তই বা একটু সময় বাড়িয়ে সমন্বয় করে আমাদের এমপিও ফাইলের কাজ নিষ্পত্তি করতে পারবে। সব কিছু বিবেচনা করে ইচ্ছা করলেই ১৮ তারিখের মধ্যে বা একটু সময় বাড়িয়ে সব কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব বলে দাবি জানান তিনি।
এদিকে ঢাকা অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক (ডিডি) অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১২ থেকে ১৩ ‘শ আবেদন জমা আছে। কিন্তু ডিডি পদটি খালি থাকায় নিষ্পত্তি করা যাচ্ছিলো না। তাছাড়া নতুন ডিডি যোগদান করলেও কাগজ যাচাই করতে অনেক সময় দরকার হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছে, কয়েকটি অঞ্চলে নতুন ডিডি পদায়নের আদেশ হয়েছে। যেহেতু একটা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, তাই আশা করা যাচ্ছে নতুন ডিডিরা যোগদান করে অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেবেন। অবশ্যই শিক্ষকদের কষ্ট বুঝবেন তারা।
প্রসঙ্গত, অহেতুক অনেক দেরি করে গত বুধবার আট আঞ্চলিক অফিসে উপপরিচালক পদায়ন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে, মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা ঢাকা অঞ্চলের উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মো. মোস্তাফিজুর রহমান, খুলনা অঞ্চলের মো. কামরুজ্জামান, কুমিল্লা অঞ্চলের মো. আরিফুল ইসলাম, বরিশাল অঞ্চলের মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসাইন, রংপুর অঞ্চলের আব্দুর রশীদ, সিলেট অঞ্চলের এ. কে. এম আবদুল্লাহ, ময়মনসিংহ অঞ্চলের মোহা. নাসির উদ্দীন ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের মুহাম্মদ ফরিদুল আলম হোসাইনী।
জানা গেছে, বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রতি একমাস পর পর বেতন-ভাতার সরকারি অংশ বা এমপিওভুক্তির আবেদন করতে পারেন। আর প্রতি বিজোড় মাসে একবার এমপিও কমিটির সভা হয়। এর আগে অক্টোবর মাসের শুরু থেকে ইএমআইএস সফটওয়্যারে সমস্যার কারণে এমপিও আবেদন প্রক্রিয়াকরণ করতে পারছিলেন না নতুন শিক্ষকরা। আর পুরাতন শিক্ষকরা উচ্চতর গ্রেড ও বিএড স্কেলের আবেদনও করতে পারছিলেন না। এর প্রেক্ষিতে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত এই কার্যক্রমের সময় একদফা সময় বাড়ানো হলেও তা কাজে আসেনি। বর্ধিত এই সময়ের মধ্যেও কাঙ্ক্ষিত এমপিও আবেদন করতে পারেননি অসংখ্য শিক্ষক। তবে এবার আবেদন করতে পারলেও ঢাকা অঞ্চলসহ অনেক অঞ্চলের শিক্ষকদের আবেদন এতোদিন নিষ্পত্তি করা যায়নি। এবার নতুন ডিডি যোগদান করবেন তবে নিষ্পত্তির মেয়াদ নেই। তাই এই কার্যক্রমের মেয়াদ না বাড়ালে সমস্যা রয়েই যাচ্ছে।
জানা গেছে, বির্তকিত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা মোসা. রেবেকা সুলতানাকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালকের দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে পরে দৈনিক আমাদের বার্তায় তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলে তাকে ওএসডি করা হয়। ২২ সেপ্টেম্বর তাকে ডিডি পদ থেকে সরিয়ে মাউশি অধিদপ্তরে ন্যস্ত করে আদেশ জারি করা হয়। এরপর থেকেই ঢাকা অঞ্চলের ডিডি পদটি খালি ছিলো। কিন্তু মন্ত্রণালয় অহেতুক দেরি করে নতুন পদায়নে।