দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: উপজেলা নির্বাচনে জিততে পারেননি কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলম। দোয়াত-কলম মার্কার ফজলুল করিম সাঈদী ৫৬ হাজার ১২২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে সাবেক সংসদ সদস্য ঘোড়া মার্কার প্রার্থী জাফর আলম পেয়েছেন ৫২ হাজার ২৫২ ভোট।
মঙ্গলবার (২২ মে) দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে তার পরাজয় হয়।
ভোট গ্রহণ শেষে সন্ধ্যায় চকরিয়া উপজেলা নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইরফান উদ্দিন।
২০১৮ খিষ্টাব্দের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে কক্সবাজার-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন জাফর আলম। এমপি হয়েই ব্যাপক দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, চাঁদাবাজি, অস্ত্রধারী ক্যাডার বাহিনী দিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি, অনেকের দোকান, মৎস্য ঘের, বসতভিটা দখল ইত্যাদি দখল করেন। এসব কারণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি তিনি।
পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন জাফর আলম। নির্বাচনী প্রচারকালে ১৯ ডিসেম্বর পেকুয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিজের অনুসারীদের নিয়ে আয়োজিত এক সভায় প্রধানমন্ত্রী ও দলীয়প্রধান শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিতর্কিত এবং ‘অসৌজন্যমূলক’ বক্তব্য দেন জাফর আলম। এ ঘটনায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে পরদিন তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক পদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়। নির্বাচনে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের কাছে তিনি হেরে যান। পরাজিত হওয়ার পর আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন জাফর আলম। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে উঠেপড়ে লেগে যান তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে চালাতে শুরু করেন নানা অপপ্রচার। যেখানে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন।
জাফর আলমের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনেরও অভিযোগ আছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া তার হলফনামা থেকে জানা যায়, জাফর আলমের স্ত্রী, স্কুল শিক্ষিকা শাহেদা বেগমের নামে ৬১৯ শতক জমি রয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ২৮ লাখ ৭৫ হাজার ৫০১ টাকা। রয়েছে ১৮ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও ৩০ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার। ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার মূল্যবান জিনিসপত্র। সব মিলিয়ে তার স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ কোটি ৬৮ লাখ ৭১ হাজার ২৫৪ টাকা। সম্পদের হিসাব আলোচনায় এলে জাফর আলম, তার স্ত্রী, পুত্র ও মেয়ের অর্জিত সম্পত্তির তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এসব আলোচনা সমালোচনার মধ্যে দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেন জাফর আলম। তবে বিতর্কিত নানা কর্মকাণ্ডের কারণে উপজেলা নির্বাচনেও জিততে পারেননি বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।