ঐক্যবদ্ধ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি গঠনে করণীয় - দৈনিকশিক্ষা

ঐক্যবদ্ধ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি গঠনে করণীয়

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

ঐক্যবদ্ধ সংগঠনের প্রয়োজনীতা উপলদ্ধি করছেন, বাংলাদেশের সকল প্রাথমিক শিক্ষক। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ছিলো একটি ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামী সংগঠন। বর্তমানে সংগঠনটি কয়েকটি অংশে বিভক্ত। প্রাথমিক শিক্ষকদের সমস্যা নিরসনের পরিবর্তে সংগঠনগুলো আত্মকোলাহলে নিমজ্জিত। এ ছাড়া বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির অর্জিত সম্পদেরও আজ বেহাল অবস্থা। যেকোনো সময় ঢাকার মিরপুরে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির ১০ কাঠা জমি বর্তমানে তাদের হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা বিদ্যমান। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান সরকারি প্রাথামিক বিদ্যালয় শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্ট। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২৫ কোটি টাকা অনুদানসহ বর্তমানে ট্রাস্টের তহবিল প্রায় ৪০ কোটি। এ ট্রাস্টে বর্তমানে বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির অস্তিত্ব মোটেই নেই। বরং প্রাথমিক শিক্ষকদের ও তাদের পরিবারে চিকিৎসা, সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তিসহ দুর্যোগকালীন সহযোগিতা প্রাপ্তির সুযোগ নেই বললেই চলে।

২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কল্যাণ ট্রাস্ট আইনে সাবেক ডি. জি শাহ রেজওয়ান হায়াতের নেতৃত্বে প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্ট প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কল্যাণ ট্রাস্ট হিসেবে পরিণত হয়েছে। সাবেক মহাপরিচালক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়োগবিধি ২০২৩ এর মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষক ও তৃণমূলের কর্মকর্তাদের অধিকার খর্ব করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থাকে পেছনের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। তার সময়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ ডিজি অফিসে লাখ লাখ টাকার বদলি বাণিজ্য নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে। বিষয়গুলো দুর্নীতিমুক্ত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের স্বার্থে তদন্তের প্রয়োজন। অপরদিকে, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির আরেকটি অর্জন ব্যাংকে জমাকৃত অর্থ প্রায় ৫০ লাখ টাকা, যা ১ যুগের বেশি সময় ব্যাংকে গচ্ছিত আছে। ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি না থাকায় ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা সমিতির কোনো অংশই তাদের সংগঠনের কাজে ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষক সমাজেরও কোনো কল্যাণকর কাজে আসছে না। সমিতির সবচেয়ে বৃহৎ অংশ দু’টির সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম তোতা ও আ. কাশেমের অবসরের সময় আসন্ন বিধায়, তাদের পরবর্তীতে নেতৃত্ব গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। অপরদিকে, একাংশের সাধারণ সম্পাদক গাজীউল হক চৌধুরী পি আর এল এ আছেন। তাদের দীর্ঘ সময়ের নেতৃত্ব সফলতার সঙ্গে সমাপ্ত হতে চলেছে। আরেক অংশের অভিজ্ঞ প্রবীণ সভাপতি নূরুজ্জামান আনসারী সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা যথাক্রমে চাঁদপুর, ময়মনসিংহ, পটুয়াখালির বাউফল উপজেলা, কুমিল্লা মুরাদনগর, দিনাজপুরের ফুলবাড়িয়া, বিরামপুর উপজেলা, ঝিনাইদহ জেলার কোট চাঁদপুর উপজেলা, পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা, বরিশালের বানরীপাড়া, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি ও কুলিয়ারচর উপজেলা, রাজবাড়ী জেলার সদর, পাংশা, কালুখালি উপজেলা, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলাসহ বহু উপজেলায় নির্বাচনের অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং প্রস্তুতি চলছে। সারা দেশে গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ইউনিয়ন উপজেলা, জেলা নির্বাচন সমাপ্ত করে কেন্দ্রীয় কমিটির কাউন্সিলদের দ্বারা গঠন করা হলে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ঐক্যবদ্ধ সংগঠন পরিণত হবে। এজন্য প্রয়োজন সব অংশের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সংক্ষিপ্ত গঠনতন্ত্র। গঠনতন্ত্রে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলার কেন্দ্রের পদবি সংখ্যা উল্লেখসহ বিশদ বিবরণ উল্লেখ থাকবে। উপজেলা সমিতি হবে তৃণমুলের সব  শিক্ষকের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত। জেলা সমিতি হবে সম্মিলিতভাবে তৈরি গঠনতন্ত্র মোতাবেক উপজেলা সমিতির কাউন্সিলরদের ভোটে ও কেন্দ্রীয় সমিতি হবে গঠনতন্ত্র মোতাবেক কাউন্সিলর ভোটে নির্বাচিত। 

নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে উপজেলা/জেলায় সরকারি উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মচারী  বা গঠনতন্ত্র মোতাবেক। কেন্দ্রীয় সমিতির নির্বাচনের প্রধান হবে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও অবসরপ্রাপ্ত উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মচারী বা গঠনতন্ত্র মোতাবেক। সংক্ষিপ্ত গঠনতন্ত্র ও নিয়মাবলি প্রস্তুত করবেন সম্মিলিতভাবে সংগঠনগুলো। গঠনতন্ত্রে কোনো নিয়মাবলি বাদ পড়লে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশন বা বাংলাদেশের প্রচলিত আইন মোতাবেক ব্যবস্থা করবেন। প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন ও প্রাথমিক শিক্ষকদের সেবা করার মানসিকতায় সংগঠনগুলো অধিকতর মনোযোগী হবেন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শিক্ষকদের ভালোবাসা ও রায় নিয়ে তাদের সেবা করার মানসিকতা জন্মাবে। সম্মিলিত সিদ্ধান্তে তাদের আন্তরিক মনোভাব থাকলে বেরিয়ে আসবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গঠনতন্ত্র তৈরিসহ সব নিয়মাবলির সিদ্ধান্ত দেবেন। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সব অংশের নেতারা। তাদের যৌথসিদ্ধান্ত কোনো ক্রমেই বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারবে না। 

এতে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির গ্রামেগঞ্জে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ বেহাল অবস্থা থেকে রেহাই পাবে। প্রাথমিক শিক্ষকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের নবজীবন লাভ করবে। পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর নিয়োগবিধি ২০২৩, প্রাথমিক শিক্ষা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন-২০২৩ সংশোধনের দাবি জোরদার হবে। পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষকদের মিরপুরে ১০ কাঠা জমিতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বিশেষায়িত হাসপাতালসহ ব্যাংকের জমাকৃত প্রায় ৫০ লাখ টাকা তাদের কল্যাণে ব্যয় হবে। এ ছাড়া প্রাথমিক শিক্ষা, শিক্ষক ও কর্মকর্তারা নানা বৈষম্যে দীর্ঘ সময় থেকে হাবু-ডুবু খাচ্ছেন। স্বতন্ত্র প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার, শিশুবান্ধব সময়সূচি, বেতন বৈষম্যসহ অসংখ্য বৈষম্য রয়েছে। বৈষম্যগুলো প্রাথমিক শিক্ষার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বিগত সরকারগুলো ঐক্যবদ্ধ প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন না থাকায়, প্রাথমিক শিক্ষার সমস্যাগুলো সমস্যা সমাধানে গুরুত্ব দেয়নি। বাংলাদেশ প্রাথমিক সমিতির ঐক্য প্রক্রিয়া সুসংহত করার জন্য সকল সংগঠনের নেতাসহ প্রাথমিক শিক্ষকদের মতামত, সহযোগিতাসহ আন্তরিকতা আশাবাদী।

লেখক: শিক্ষাবিদ 

 

মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! - dainik shiksha মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! অ্যাডহক কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha অ্যাডহক কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সোহরাওয়ার্দী কলেজ যেনো ধ্বং*সস্তূপ - dainik shiksha সোহরাওয়ার্দী কলেজ যেনো ধ্বং*সস্তূপ জোরপূর্বক পদত্যাগে করানো সেই শিক্ষকের জানাজায় মানুষের ঢল - dainik shiksha জোরপূর্বক পদত্যাগে করানো সেই শিক্ষকের জানাজায় মানুষের ঢল শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি সারানোর এখনই সময় - dainik shiksha শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি সারানোর এখনই সময় কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037648677825928