দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, কওমি মাদরাসা বাংলাদেশে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তিনি বলেন, কওমি মাদরাসা বন্ধ করার কোনো কথা আমি বলিনি, কওমি মাদরাসা বাংলাদেশে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
আরো পড়ুন : কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে
শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃত করে একটি মহলের প্রচারণার বিষয়ে মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা কওমি মাদরাসা বোর্ডগুলোর সঙ্গে কাজ করতে চাই। কারণ, কওমি মাদরাসা থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা কর্মসংস্থান চায়।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একটি জেলা থেকে একটি আলোচনা এসেছিলো, অনিবন্ধিত, নাম-পরিচয়হীন নুরানি মাদরাসার নামে কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। সেগুলো নিবন্ধনের প্রক্রিয়া কী? সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমি বলেছিলাম, যেসব নুরানি মাদরাসা গড়ে উঠছে, সেগুলোর যথাযথ নিবন্ধন আছে কি না, সেগুলোতে কীভাবে শিক্ষাক্রম পরিচালিত হচ্ছে? অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যাতে সাংঘর্ষিক না হয়, সে বিষয়ে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো, কীভাবে তা ইউনিফরমিটির মধ্যে আনা যায়।
বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক নামধারী কিছু সংগঠন থেকে বলা হয়েছে, নুরানি বা কওমি মাদরাসার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে এবং সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
আমি পরিষ্কার করে বলছি, এ আলোচনা আসে জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে যে, অনিবন্ধিত অনেক প্রতিষ্ঠান চলছে, সেগুলোর নিয়ন্ত্রক কারা? কওমি মাদরাসা বন্ধের বিষয়ে আমি মন্তব্য করিনি। তারা এ আলোচনা সৃষ্টি করে গুজব রটাচ্ছে, অপপ্রচার। আমার বক্তব্য ভিডিওসহ আছে। গুজব রটিয়ে কওমি মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টির নোংরা অপচেষ্টা করছে তারা, যোগ করেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তারা আগে আরো অনেক ধরনের মানহানিকর এবং আপত্তিকর কথা বলছে। এর মধ্যে একটি ছিলো যে আমি ইসকন নামের একটি সংগঠনের সদস্য এবং ইসকনের সদস্য হয়ে আমি ভিন্ন সংস্কৃতি শিক্ষাক্রমে ঢোকানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত আছি। আমার বক্তব্য হলো, এটি একেবারে আপত্তিকর, মানহানিকর ও ষড়যন্ত্রমূলক কথা।
আমি ইসকনের সদস্য নই। আমি একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষ। আমার বাবা বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের তীর্থ কেন্দ্রে, পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটক হিসেবে আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। ইসকনের একটি অনুষ্ঠানে যাওয়া মানে এই নয় যে, আমি ইসকনের সদস্য। ইসকনের সদস্য হিসেবে আমাকে প্রচার করা হচ্ছে, আমি এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি, বলেন মন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা আইন দিয়ে কওমি মাদরাসা শিক্ষাকে স্বীকৃতি দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা কওমি মাদরাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ ডিগ্রি দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স স্বীকৃতি দিয়েছেন। কওমি মাদরাসা বাংলাদেশে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু সেখানকার শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও ন্যূনতম লিটারিসির কথা বলছি, তারা যাতে কর্মসংস্থান পায়, সে সমস্ত বিষয় নিশ্চিত করার জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করতে চাচ্ছি, আগামীতেও কাজ করব। তাদের বারবার আমন্ত্রণও জানিয়েছি। এখানে মাদরাসা বন্ধ করে দেওয়ার মতো কথা কেউ কখনো বলেননি।
তিনি আরো বলেন, একটি পরিকল্পনার মধ্যে থেকে, নিবন্ধনের মধ্যে থেকে, কী পড়ানো হচ্ছে সেসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে, আমার শিক্ষার্থী, আমাদের এই প্রজন্মকে কী পড়াচ্ছি, সেটা জাতীয় শিক্ষাক্রম হোক, কওমি মাদরাসা হোক বা ইংরেজি মাধ্যমে হোক, সেটির ওপর রাষ্ট্রের নজর তো অবশ্যই থাকতে হবে। রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কিছু যদি পড়ানো হয়, সেটা যেকোনো প্রতিষ্ঠানে হোক; আমরা দেখেছি, অনেক পাবলিশিং হাউজের নাম করে উসকানি দেয়ার জন্য বই ছাপানো হয়েছে এবং পড়ানো হচ্ছে, সেগুলো আমাদের অবশ্যই দেখতে হবে এবং ব্যবস্থা নিতে হবে।
গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে নুরানি ও কওমি মাদরাসা বন্ধের চক্রান্ত করলে দেশের জনতা তা রুখে দেবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।
তিনি বলেন, সারা দেশে যত্রতত্র কওমি-নূরানি মাদরাসা বাড়ছে। এতে সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর এ ধরনের মন্তব্যে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি। আর নুরানি ও কওমি মাদরাসা বন্ধের চক্রান্ত করলে দেশের ঈমানদার জনতা তা রুখে দেবে।
তিনি বলেন, প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষার্থী কমার কারণ মাদরাসা নয় বরং শিক্ষা কারিকুলাম। শিক্ষা কারিকুলামে ভিনদেশি শিক্ষার অনুপ্রবেশের কারণে প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষার্থী কমছে। এর দায়ভার কোনোভাবেই নুরানি মাদরাসার বা কওমি মাদরাসার নয়। এর দায়ভার শিক্ষামন্ত্রীকেই নিতে হবে।
শিক্ষা কারিকুলাম সংশোধনের দাবিকে পাশ কাটিয়ে মাদরাসার ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা সরকার ও শিক্ষামন্ত্রীর জন্য সুখকর হবে না। প্রাথমিক শিক্ষার্থী কমার অজুহাতে কওমি ও নুরানি মাদরাসার ওপর হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই, যোগ করেন তিনি।
নুরানি ও কওমি মাদরাসা নিয়ে নতুন চক্রান্ত ঈমানদার জনতা রুখে দাঁড়াবে। চরমোনাই পীর বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে আরো ঢেলে সাজানোসহ শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং কুরআন শিক্ষার জন্য নুরানি মুয়াল্লিম নিয়োগ দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন. শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে অধিকাংশ মানুষের চিন্তা চেতনার আলোকে শিক্ষা কারিকুলাম ঢেলে সাজাতে হবে। সেইসঙ্গে শিক্ষার সকল অসংগতি দূর করতে হবে। এজন্য ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ শিক্ষা কারিকুলাম সংশোধনের দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে। দেশের অধিকাংশ মানুষের চিন্তা-চেতনাকে পাশকাটিয়ে চলমান শিক্ষা কারিকুলাম বহাল কখনো দেশপ্রেমিক ও দক্ষ নাগরিক গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।