বিখ্যাত কবি বন্দে আলী মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বন্দে আলী মিয়া ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ জানুয়ারি পাবনা জেলার রাধানগর গ্রামে এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মুন্সী উমেদ আলী ছিলেন পাবনা জজকোর্টের একজন নিম্ন পদের কর্মচারী। তিনি তার কবিতায় পল্লী প্রকৃতির সৌন্দর্য বর্ণনায় নৈপুন্যের পরিচয় প্রদান করেছেন। প্রকৃতির রূপ বর্ণনায় তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তার রচিত শিশুতোষ গ্রন্থ আজও অমর হয়ে আছে।
গ্রাম নিয়ে তার অমর কবিতা ‘আমাদের গ্রাম’ পড়লে পাঠককে অবশ্যই ফিরে যেতে হবে শৈশবে, যেখানে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। ‘আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট ছোট ঘর/থাকি সেথা সবে মিলে কেহ নাহি পর/পাড়ার সকল ছেলে মোরা ভাই ভাই/একসাথে খেলি আর পাঠশালে যাই।’
তিনি পাবনার মজুমদার একাডেমি থেকে ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে কলকাতা আর্ট একাডেমিতে ভর্তি হন এবং ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯২৫-এ ইসলাম দর্শন পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৩০ থেকে ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কলকাতা কর্পোরেশন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। দেশ বিভাগের পর তিনি কলকাতা জীবনে রবীন্দ্র-নজরুলের সান্নিধ্য লাভ করেন। তখন তার প্রায় ২০০ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। সে সময় বিভিন্ন গ্রামোফোন কোম্পানিতে তার রচিত পালাগান ও নাটিকা রের্কড আকারে কলকাতার বাজারে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯৬৪-র পর প্রথমে ঢাকা বেতারে ও পরে রাজশাহী বেতারে চাকরি করেন।
তার উল্লেখযোগ্য বই হলো- মেঘকুমারী, মৃগপরী, বোকা জামাই, কামাল আতাতুর্ক, ডাইনি বউ, রূপকথা, কুঁচবরণ কন্যা, ছোটদের নজরুল, শিয়াল পণ্ডিতের পাঠশালা, বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা।
শিশু সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য তিনি ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রেসিডেন্ট পুরস্কার, ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহীর উত্তরা সাহিত্য মজলিস পদক লাভ করেন। তিনি মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন। ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দের এই দিন তিনি রাজশাহীতে মৃত্যুবরণ করেন।