‘আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা, কলুষ আর লজ্জা/সমস্ত দিয়েছে ঢেকে এক খণ্ড বস্ত্র মানবিক/আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা।’
এভাবেই ‘আসাদের শার্ট’ কবিতায় অসাধারণ বয়ানে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের চিত্র তুলে ধরেছিলেন কবি শামসুর রাহমান। পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাঁর কবিতা হয়ে উঠেছিল স্বাধীনতাকামী বাঙালির প্রেরণার উৎস। আজ আধুনিক বাংলা কবিতার এ বরপুত্রের ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে ১৭ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ৭৭ বছর বয়সে তিনি মারা যান।
প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ প্রকাশের পরপরই শামসুর রাহমান সচেতন পাঠক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে শামসুর রাহমান সপরিবারে পৈতৃক বাড়ি নরসিংদীর পাড়াতলী গ্রামে চলে যান। এপ্রিলের প্রথম দিকে তিনি যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে বেদনামথিত হয়ে লেখেন ‘স্বাধীনতা তুমি’ ও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বাধীনতা’সহ বেশকিছু কবিতা। তাঁর ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতাটি যেন সন্তের মন্ত্রোচ্চারণের মতো অনিবার্য, আবহমান বাংলার সাধারণ জীবনের মতো স্বাচ্ছন্দ্য। স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর-পরবর্তী পটপরিবর্তনে আশাহত কবি সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও স্বৈরশাসনের প্রতিবাদে কলম চালিয়েছেন নিরন্তর।
শামসুর রাহমানের ষাটের বেশি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া শিশুতোষ, অনুবাদ, ছোটগল্প, উপন্যাস, আত্মস্মৃতি, প্রবন্ধ-নিবন্ধের গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে। সাংবাদিক হিসেবে তিনি ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে কর্মজীবন শুরু করেন দৈনিক মর্নিং নিউজে। ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে সামরিক সরকারের শাসনামলে তাঁকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। এরপর তিনি অধুনা নামের একটি মাসিক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
শামসুর রাহমান আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পদকসহ অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ অক্টোবর ঢাকার মাহুতটুলীতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।