বিশ্বব্যাপী নভেল করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করায় দেশীয় বিশেষজ্ঞরা যাত্রীদের স্ক্রিনিং ও কাজের সার্বিক সমন্বয় ব্যবস্থা আরো জোরদারের পরামর্শ দিয়েছেন। আপাতত হাসপাতালভিত্তিক চিকিৎসাসেবা বা মেডিসিনের ব্যাপারে চিন্তা না করে বিদেশফেরত যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ঢাকায় স্বাস্থ্য বিভাগের কাজে সমন্বয়ের দিকে নজর দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
এদিকে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি না থাকা সত্ত্বেও শঙ্কা এড়াতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তরিত শিক্ষার্থীকে রাজধানীর আশকোনায় কোয়ারান্টাইনে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।
আইইডিসিআর থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বিদেশ থেকে আসা ১৪ হাজার ২৯৪ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। এ হিসাবে গত ২১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৪ হাজার ৮৮১ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়াও এ স্ক্রিনিংয়ের আওতায় রয়েছে দেশের সব স্থলবন্দর, চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর।
তবে চীনের সংকটকালীন সময়ে দেশটি থেকে ফেরত আসা নাগরিকদের মধ্যে আইইডিসিআরে এ-সংক্রান্ত সেবা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা মাত্র ৬১ জন। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত এ ভাইরাস সন্দেহে ৫৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলেও কোনো নভেল করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি বলে তথ্য দিচ্ছে আইইডিসিআর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে স্ক্রিনিং এবং কোয়ারান্টাইন ভালোভাবে করতে পারলে নভেল করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। তবে দুই-একজন আক্রান্ত রোগী থেকে পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে এ ভাইরাস। শুধু উহানফেরত নয়, চীন থেকে আসা সবাইকে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও কোয়ারান্টাইন করা উচিত বলে মনে করছেন অনেকে। রংপুরের শিক্ষার্থীটি চীন থেকে ফিরেও সুস্থ ছিলেন। পরে অসুস্থ হলো। এভাবে সুস্থতার আড়ালে ভাইরাস বহন করতে পারে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।
এখনো যেহেতু বাংলাদেশে কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি, সুতরাং এটা বলা যেতে পারে এ ভাইরাস এখানে নেই। এখন এটা (ভাইরাস) এলে দেশের বাইরে থেকেই আসবে। সুতরাং করোনা প্রতিরোধ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থায় কোনো গাফিলতি করা যাবে না বলে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন : চাইলে চীন থেকে ফিরতে পারেন, তবে নিজ দায়িত্বে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হলেও শঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউই। এতদিনে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বার্তা দেয়ার ফলে সচেতনতা বাড়লেও এ সময়টাতে আরো সাবধানী হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। সংশ্লিষ্ট অঞ্চল ভ্রমণ থেকে বিরত থাকা বা ওইসব অঞ্চল থেকে আসা নাগরিকদের স্ক্রিনিং ও কোয়ারান্টাইনে কোনো গাফিলতি করা যাবে না। তাহলে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস থেকে বাংলাদেশ সুরক্ষিত থাকবে বলে মনে করেছেন এ বিশেষজ্ঞরা।
অন্য রোগীদের কথা চিন্তা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নভেল করোনাভাইরাস-সংক্রান্ত কোনো রোগীকে আপাতত ভর্তি না করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।
বিষয়টি নিয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, যত্ন নিয়ে বিদেশফেরত রোগীদের স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। পরীক্ষার পর সমস্যা ধরা না পড়ায় রংপুরের চীনফেরত এক শিক্ষার্থীকে আপাতত কোয়ারান্টাইনে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়া নিয়মিতভাবে কোয়ারান্টাইনকৃত ও চীনফেরত নাগরিকদের ব্যাপারে সরকার নজরদারি করছে বলেও উল্লেখ করেন আইইডিসিআর পরিচালক। তবে আশার কথা এখন পর্যন্ত কোনো আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মেলেনি।