সম্প্রতি জনরোষে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও অর্থমন্ত্রী ইয়েলেনকে চিঠি লিখেছেন দেশটির ছয়জন কংগ্রেস সদস্য। একই সঙ্গে তারা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন।
বুধবার (৭ আগস্ট) লেখা এ চিঠিতে তারা বলেন, ‘হাসিনা সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। সরকারি চাকরিতে অন্যায্য কোটাব্যবস্থার প্রতিবাদে শুরু হওয়া শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে গত ১৫ জুলাই পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করে আওয়ামী লীগ। পরবর্তী সপ্তাহজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অসঙ্গতিপূর্ণ ও বেআইনি বলপ্রয়োগ করে। ছোড়ে রাবার বুলেট, ছররা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও তাজা গুলি।’
এই চিঠিতে স্বাক্ষরকারী কংগ্রেস সদস্যরা হলেন লয়েড ডগেট, এডওয়ার্ড জে মার্কি, উইলিয়াম আর কিটিং, ক্রিস ভন হলেন, জেমস পি ম্যাকগভার্ন ও অল গ্রিন। এই আইনপ্রণেতারা বলেন, ‘নিজেদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় দলটির নেতাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয়নি। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, তবু তাদের জবাবদিহির প্রয়োজনীয়তা রয়ে গেছে।’
এমন প্রেক্ষাপটে ‘গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি হিউম্যান রাইটস অ্যাকাউন্টিবিলিটি অ্যাক্ট’সহ প্রয়োগ উপযোগী সব আইনের আওতায় ওবায়দুল কাদের ও আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার আহ্বান জানান কংগ্রেস সদস্যরা।
ওই ছয় কংগ্রেসম্যান বলেন, ‘১৫ জুলাই সহিংস দমনাভিযানের পর শেখ হাসিনা দেশজুড়ে কারফিউ জারি করেন। বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট যোগাযোগ। জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ এটিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন বলে মনে করে। আন্দোলনে বেশির ভাগ সহিংসতার জন্য দায়ী দুই বাহিনী—পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এর দায়ভার আসাদুজ্জামান খানের।’
কংগ্রেস সদস্যরা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু হলে ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগ বিক্ষোভকারীদের ওপর নিষ্ঠুর দমনপীড়ন চালায়। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালাতে ওবায়দুল কাদের ও আসাদুজ্জামান খান আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেন। এর ফলে সৃষ্ট সহিংসতায় ওই দিন প্রায় ১০০ মানুষ নিহত হন। শেখ হাসিনা আবার দেশজুড়ে কারফিউ জারি করেন এবং বন্ধ করে দেওয়া হয় যোগাযোগ ব্যবস্থা। এতে বাংলাদেশি–আমেরিকানরা তাঁদের স্বজনদের সঙ্গে আরও একবার যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।’
চিঠিতে তারা বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে থাকা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস জরুরিভিত্তিতে বিশ্বনেতাদের প্রতি বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ‘অসম্মানজনক কাজে’ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে গেলেও ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কোনো পরিণামের মুখে পড়তে হয়নি।’
এই আইনপ্রণেতারা বলেন, ‘র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপ বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধে সফলতা এনেছে। তবে, বর্তমান বাস্তবতায় এটাই যথেষ্ট নয়। ওবায়দুল কাদের ও আসাদুজ্জামানের ওপর সুনির্দিষ্টভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রয়োগযোগ্য সব ক্ষমতা খাটিয়ে আওয়ামী লীগের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় শক্ত জবাব দেওয়ার আহ্বান জানাই আমরা। ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের আইনের আওতায় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’