সিজিপিএ শর্ত শিথিল করে মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিয়ে পরবর্তী বর্ষে প্রমোশনের দাবিতে এবার কাফনের কাপড় পরে রাজধানীর নীলক্ষেতে আন্দোলন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। ৭ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
রোববার দুপুর সোয়া ১২ টার দিকে তাঁরা নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করেন। এর ফলে নীলক্ষেতের দুই দিকের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে বলা হয়, দাবি পূরণের আশ্বাসে লিখিত নোটিশ না পাওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না। তারা বলেন, এ পর্যন্ত তারা ১৯ বার আমাদের দাবি আদায়ে ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ ও সাত কলেজের সমন্বয়ক (ফোকাল পয়েন্ট) সুপ্রিয়া ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি শুধু আশ্বাসই দিয়ে গেছেন। তিন মাস ধরে শুধু বলেই গেছেন যে, আমাদের দাবি তিনি ঢাবি কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরবেন। বলা হচ্ছে এখন আমাদের দাবি মানা হবে না। এদিকে সামনে অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা, সেই ফর্ম ফিলআপে তারিখও শেষ অথচ এর আগে সুপ্রিয়া ম্যাম তারিখ বাড়ানোর কথা বলেছিলেন। তাই আমার আর আশ্বাসে বিশ্বাসে না, আমরা লিখিত নোটিশ চাই।
এদিকে আন্দোলরত একাধিক শিক্ষার্থী পক্ষ থেকে বলা হয়, তীব্র রোদে হিট স্ট্রোক ও বেশ কয়েকজন বিষ খেয়ে অসুস্থ হয়ে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সব মিলিয়ে আট জনের শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি হবেন। তবে তারা নিশ্চিত না, বিষ খেয়েছেন কি-না। তারা বলছেন, বিষ খেয়ে অসুস্থ হওয়ার বিষয়টি তারা শুনতে পেরেছেন। তবে আদৌতে খেয়েছেন কি-না তা নিশ্চিত নন।
তবে বিষ খাওয়ার বিষয়টি বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে দাবি করে আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র তসলিম চৌধুরী বলেন, পর্যন্ত আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের কেউ বিষ পানে অসুস্থ হননি। যারা অসুস্থ হয়েছেন, সবাই তীব্র গরমে হিট স্টোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
এদিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের আরেক মুখপাত্র শাহরিয়ার অপু বলেন, বেশ কয়েকজন হ্যান্ডস্যানিটাইজার খেয়েছিলো। তাঁরা আন্দোলন স্থলেই বমি করেছে, পরে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে আনলে ডাক্তার বলেন তাদের ওয়াশ করার প্রয়োজন হবে না। তবে বদরুন্নেসা কলেজের এক শিক্ষার্থী সানিয়া দেওয়ান অনেক অসুস্থ। তিনি বিষ খাননি। তাছাড়া বিষ খেয়ে কেউই অসুস্থও হননি।
দুপুর পৌনে দুইটার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক অধ্যাপক সুফিয়া আখতার। তিনি শিক্ষার্থীদের পুনরায় আলোচনা বসতে বলেন এবং জানান, আগামী মঙ্গলবার ঢাবি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাত কলেজের অধ্যক্ষদের একটা মিটিং রয়েছে। সেখানে পুনরায় এই বিষয়টি উঠানো হবে। এমন আশ্বাস দিলেও শিক্ষার্থীরা সেই আশ্বাস মানতে রাজি হননি।
এসময় আন্দোলন শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র মোখলেসুর রহমান রবিন বলেন, ম্যাম ২০-২১ বারের মতো আমরা আলোচনাতে বসছি। তবুও কোন কাজ হয় নি। শুধু আশ্বাস দেয়াই হয়ে গেছে কিন্তু দাবি মানা হয় নি। আমরা আশ্বাস নয়, লিখিত নোটিশ চাই।
শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে প্রমোশন পেতে সিজিপিএ ২ প্রয়োজন, দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় বর্ষে প্রমোশন পেতে সিজিপিএ ২ দশমিক ২৫ এবং তৃতীয় থেকে চতুর্থ বর্ষে প্রমোশন পেতে ২ দশমিক ৫ প্রয়োজন। তা না হলে আবারও আগের বর্ষে থাকতে হয়। তাই তারা এই সিজিপিএর শর্ত শিথিল করে তিন বিষয় পর্যন্ত মানোন্নয়ন পরীক্ষার মাধ্যমে পরবর্তী বর্ষে প্রমোশন চান। এছাড়াও তাদের অভিযোগ বিজ্ঞান, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভেদে প্রমোশন পেতে রয়েছে পৃথক পৃথক বৈষম্য।