কামারপাড়া স্কুলে পুকুর চুরি: অবৈধভাবে হস্তান্তর শত কোটির জমি   - দৈনিকশিক্ষা

কামারপাড়া স্কুলে পুকুর চুরি: অবৈধভাবে হস্তান্তর শত কোটির জমি  

দৈনিক শিক্ষাডটকম, সুতীর্থ বড়াল |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, সুতীর্থ বড়াল: শত কোটি টাকার জমি অন্য প্রতিষ্ঠানের ভাইস চেয়ারম্যানের নামে অবৈধভাবে লিখে দিয়েছেন তিনি। নীতিমালা অনুযায়ী ওই জমি প্রতিষ্ঠানের স্ট্রাস্টি বোর্ডের রেজিস্ট্রারের নামে লিখে দিতে হতো। কিন্তু তার তোয়াক্কা করেননি রাজধানীর উত্তরার কামারপাড়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ খুরশিদ জাহান। তিনি মাউশির মহাপরিচালকের অনুমোদন ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটির ১৬৪ শতাংশ জমি লিখে দেন অন্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষে আবুল হাসেম চেয়ারম্যানকে। এ ছাড়াও প্রভাবশালীদের মদদে একের পর এক অনিয়ম চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। বিভিন্ন অভিভাবক ও প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিংবডির একাধিক সদস্য এ নিয়ে ক্ষুব্ধ।

জানা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জমি অন্য প্রতিষ্ঠানে লিখে দেয়ার ক্ষেত্রে মাউশি অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে প্রধান শিক্ষক লিখে দিবেন কিন্তু কামারপাড়া স্কুলের খুরশিদ জাহান জমি লিখে দেয়ার সময় ছিলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতি নীতিমালার ৬-এর ১ উপধারায় বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠান স্থাপনের লিখিত অনুমতি পাওয়ার পর, আবেদনকারী বা আবেদনকারীদের পাওয়া জমি প্রতিষ্ঠানের নামে নামজারি করাবেন। শিক্ষাদানের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করবেন। নামজারি এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো যথাযথ হবার পরে সরকার নির্ধারিত আবেদন ফরম-‘খ’ (যার ক্ষেত্রে যা প্রযোজ্য) অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করতে হবে। কিন্তু এই নীতিমালার এক অক্ষরও পালন করেননি কামারপাড়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ খুরশিদ জাহান।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিংবডির সভাপতি ছিলেন স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা আবুল হাসেম চেয়ারম্যান। তিনি ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে করোনায় মারা যাওয়ার পরে তার দায়িত্ব পালন করেন স্থানীয় কমিশনার জাহাঙ্গীর হোসেন যুবরাজ। তারপর গভর্নিংবডির সভাপতি হন আবুল হাসেম চেয়ারম্যানের বড় ছেলে মহিবুল হাসান।

স্থানীয়রা জানান, হাসেম চেয়ারম্যানের আরেক ছেলে নাজমুল এলাকার প্রভাবশালী হিসেবে ক্ষমতার দাপটে নানা অপকর্ম করেছেন। তার এসব অপকর্মের মধ্যে মাদক মামলায় মানুষ ভাড়া করে জেল খাটানোর ঘটনা উল্লেখযোগ্য। ঘটনাটি নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। গত ১৩ মে থেকে থেকে তিনি সেই মাদক মামলায় জেলে রয়েছেন। জেলে থেকেই আইন বহির্ভূতভাবে গত ২৫ মের গভর্নিংবডির নির্বাচনে দাতা সদস্য হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। 

গভর্নিংবডির কমিটি সদস্য বা সভাপতি হওয়ার অযোগ্যতা সম্পর্কে সদ্য প্রকাশিত ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিংবডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা-২০২৪’ এর ১৬ ধারার ঘ- উপধারায় বলা হয়েছে, বোর্ডের আপিল অ্যান্ড আরবিট্রেশন কমিটি কর্তৃক অথবা কোনো ফৌজদারি অপরাধের কারণে উপযুক্ত আদালত কর্তৃক দণ্ডিত হয়ে থাকলে সেই ব্যক্তি সভাপতি বা সদস্য হতে পারবেন না। কিন্তু নাজমুল হয়েছেন।

এদিকে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে কামারপাড়া স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন আমিনুল ইসলাম ও সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন সিদ্দিকুর রহমান এবং গভর্নিংবডির সভাপতি ছিলেন আবুল হাশেম চেয়ারম্যান। খুরশিদ জাহান ছিলেন স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা। তখন উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের এই স্কুলের ১৬৪ শতাংশ ভূমি বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের নামে লিখে দেয়ার জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলামকে বলা হয়। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান যেহেতু জমির মালিক নন, সেহেতু তিনি জমি লিখে দিতে অস্বীকৃতি জানান। যার প্রেক্ষিতে তাকে রাতের আঁধারে এলাকা থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। 

আমিনুল বলেন, শুধু আমিই না, সে সময় আরো দুই থেকে তিনজন শিক্ষক গভর্নিংবডির চাপে অন্য জায়গায় চলে যান। তারা তখন ভয়ে মুখ খুলতে পারছিলেন না। 

পরবর্তীতে গভর্নিংবডির সভাপতি আবুল হাশেম চেয়ারম্যান সহকারী প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমানকে বাদ দিয়ে তার আত্মীয় সহকারী শিক্ষিকা খুরশিদ জাহানকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করেন। তখন শুধু একটি রেজুলেশন করে সব জমি (১৬৪ শতাংশ) বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের পক্ষে ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হাশেম লিখে নিয়ে যান। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খুরশিদ জাহান দলিল করে দেন। যদিও সিএস কপিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সিলমোহর থাকলেও স্বাক্ষর করেন শিক্ষক প্রতিনিধি জানে আলম।  

পরবর্তীতে ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খুরশিদ জাহানকে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া হয়। ওই পদে তার নিয়োগ অনৈতিক, বিধি পরিপন্থি বলেও অভিযোগ আছে। পরে প্রতিষ্ঠানটি স্কুল অ্যান্ড কলেজে রূপান্তর হলে তিনি হন অধ্যক্ষ। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খুরশিদ জাহান বলেন, আমার যতোটুকু দায়িত্ব ছিলো তা পালন করেছি। 

শিক্ষক প্রতিনিধি জানে আলম বলেন, এ ব্যাপারে সরাসরি এসে কথা বলেন। 

বর্তমান গভর্নিংবডির সভাপতি মহিবুল হাসান জানান, বিষয়টি অনেক বছর আগের। তখন আমার বাবা ছিলেন সভাপতি। এ বিষয়ে আমি খুব ভালো জানতাম না, তবে আমি জানার পরে ওই জমি বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের স্ট্রাস্টি বোর্ডকে লিখে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আমরা এ ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই কাজটা করা হবে।  

 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! - dainik shiksha মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! অ্যাডহক কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha অ্যাডহক কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সোহরাওয়ার্দী কলেজ যেনো ধ্বং*সস্তূপ - dainik shiksha সোহরাওয়ার্দী কলেজ যেনো ধ্বং*সস্তূপ জোরপূর্বক পদত্যাগে করানো সেই শিক্ষকের জানাজায় মানুষের ঢল - dainik shiksha জোরপূর্বক পদত্যাগে করানো সেই শিক্ষকের জানাজায় মানুষের ঢল শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি সারানোর এখনই সময় - dainik shiksha শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি সারানোর এখনই সময় কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042610168457031