এক মাস পর কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার পতনে আন্দোলনের বিকল্প নেই। আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাতে হবে।
আজ সোমবার সন্ধ্যা ছয়টার কিছুক্ষণ আগে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন মির্জা ফখরুল ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ সামনে রেখে গত ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পরদিন গভীর রাতে দলের শীর্ষস্থানীয় এই দুই নেতাকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তাঁদেরকে ৭ ডিসেম্বরের সংঘর্ষের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের জামিন আবেদন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে তিনবার নাকচ হয়। পরে তাঁদের জামিনের জন্য উচ্চ আদালতে যান আইনজীবীরা। গত মঙ্গলবার হাইকোর্ট রুলসহ দুজনের ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। এই আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন গতকাল আপিল বিভাগে শুনানি হয়। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ গতকাল বিএনপির এই দুই নেতার ছয় মাসের জামিন আদেশ বহাল রাখেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের জামিনে মুক্তি পাচ্ছেন এ খবর গতকালই নেতা–কর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। আজ তাঁদের স্বাগত জানাতে কারাগারের সামনে জড়ো হয়েছিলেন বিপুলসংখ্যক নেতা–কর্মী। মুক্তির পর কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে মির্জা ফখরুল ও আব্বাসকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন অপেক্ষারত নেতা-কর্মীরা। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
কারাগার থেকে বেরিয়ে নেতা–কর্মীদের ধন্যবাদ জানান বিএনপির জ্যেষ্ঠ দুই নেতা। এ সময় ছাদখোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ গ্রেপ্তার দলীয় নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
সরকারবিরোধী আন্দোলনে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘অত্যাচার, নির্যাতন, জুলুম করে আন্দোলনকে দমিয়ে রাখা যাবে না। আমি বিশ্বাস করি, জনগণের অংশগ্রহণে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে এবং সরকারের পতন ঘটবে।’
কারাগারে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘এরা চোর নয়, ডাকাত নয়। কারাগারে আমাদের নেতা-কর্মীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এঁরা রাজবন্দী। এঁদের সঙ্গে কারা কর্তৃপক্ষের ভালো ও মানবিক আচরণ করতে হবে।’
রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে ‘অবৈধ’ সরকারের পতন ঘটাতে হবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। সরকার পতনের আন্দোলনে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় বিএনপির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম, মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, বিএনপির সহশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আইনজীবী জাকির হোসেন ও মির্জা আব্বাসের আইনজীবী মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।