কারাতে ফেডারেশনের শিক্ষক সেলিম শীর্ষ জ*ঙ্গি নেতা - দৈনিকশিক্ষা

কারাতে ফেডারেশনের শিক্ষক সেলিম শীর্ষ জ*ঙ্গি নেতা

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করা একটি বহুজাতিক কোম্পানির হেড অব বিজনেস ইমতিয়াজ সেলিমকে  (৪১) গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। মার্শাল আর্টে ব্ল্যাকবেল্টধারী সেলিম বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের তালিকাভুক্ত প্রশিক্ষক ও আন্তর্জাতিক রেফারি সেলিম জাপান কারাতে অ্যাসোসিয়েশনের লাইসেন্সধারী প্রশিক্ষক। 

এর আড়ালে সেলিমের রয়েছে ভয়ংকর একটি পরিচয়। তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীরের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা। হিজবুত তাহরীরে তার নাম ইমাদুল আমিন। এই ছদ্মনামেই তিনি নানা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন।

বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। 

জানা যায়, প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হওয়া হিজবুত তাহরীরের শীর্ষ নেতা তৌহিদুর রহমান ওরফে তৌহিদ ওরফে সিফাতের (২৯) দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সেলিমের সন্ধান পায় সিটিটিসি। এরপর গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ভাটারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইমতিয়াজ সেলিম ওরফে ইমাদুল আমিনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্য দিয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর হিজবুত তাহরীরের অনলাইন সম্মেলনের দুই বক্তাকেই গ্রেফতার করলো সিটিটিসি।

এ প্রসঙ্গে সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গত ৬ ডিসেম্বর হিজবুত তাহরীরের অনলাইন সম্মেলনের প্রথম বক্তা তৌহিদকে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর গ্রেফতার করা হয়। তাকে রিমান্ডে এনে অন্যদের বিষয়ে আমরা তথ্য জানার চেষ্টা করি। সম্মেলনে আরো যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া আমাদের প্রথম কাজ ছিল। সাধারণত প্রত্যেকে সাংগঠনিক কার্যক্রমে ছদ্মনাম ব্যবহার করে, তারা আসল নাম কোনো সদস্যের কাছে প্রকাশ করে না। সে হিসেবে সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়া আরেক ব্যক্তির নাম জানা যায় তিনি ইমাদুল আমিন।

পরবর্তীতে আরও জানা যায়— তার বাড়ি চট্টগ্রামে আর থাকতেন ভাটারা এলাকায়। সিটিটিসির কর্মকর্তারা টানা সাতদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে তৌহিদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সেই ইমাদুল আমিনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। যার আসল নাম ইমতিয়াজ সেলিম। 

আসাদুজ্জামান বলেন, সেলিম বাংলাদেশে একটি বহুজাতিক কোম্পানির হেড অব বিজনেস। যে কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানি বাংলাদেশে অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনা করছে তার একটির বনানীর অফিসে চাকরি করতেন তিনি। এর আড়ালে সেলিম তার জঘন্যতম কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল। রাষ্ট্রবিরোধী নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তথাকথিত খেলাফত প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল।

তিনি সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বিভিন্নজনকে তাদের খেলাফতে শরিক হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছিলেন। এর আগেও তিনি এমন কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেছেন। এ ছাড়া সেলিম মার্শাল আর্টে একজন ব্ল্যাকবেল্টধারী। বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের রেগুলার ট্রেইনার। কারাতে ফেডারেশনের ওয়েবসাইটে তার ছবি রয়েছে। কারাতের একজন আন্তর্জাতিক রেফারি সেলিম।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, হিজবুত তাহরিরের সদস্য হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংগঠনের নির্দেশনা থাকে শারীরিকভাবে ফিট থাকতে হবে। যুদ্ধ বা আত্মরক্ষার কৌশল শেখার অংশ হিসেবে অধিকাংশ সদস্যদেরই কারাতে শেখার নির্দেশনা থাকে। নির্দেশনার অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় সেলিম প্রথমে কারাতে শেখে ও পরে ব্ল্যাকবেল্টধারী হয়।

ইমতিয়াজ সেলিম নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। সেলিম হিজবুত তাহরীরের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ২০১০ সালে প্রথম গ্রেফতার হয়। তার এক বন্ধুর মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগঠনে যোগদান করে। গ্রেফতারের পর জেলখানায় গিয়ে হিজবুত তাহরীরের প্রতিষ্ঠাতা গোলাম মাওলার সান্নিধ্যে আসেন সেলিম। এর ফলে তিনি অতিমাত্রায় সংগঠনের প্রতি অনুগত হন এবং বের হয়ে ফুলটাইম সংগঠনের জন্য কাজ করতে থাকেন। এভাবে একপর্যায়ে সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বে চলে আসেন।

স্টুডেন্টদের টার্গেট করে হিজবুত তাহরীরের দাওয়াতি কার্যক্রম চলমান রয়েছে উল্লেখ করে সিটিটিসি প্রধান বলেন, তারা সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে নতুন শিক্ষার্থীদের প্রথম টার্গেট করে। কারণ, নতুন ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্টদের যেভাবে গ্রুমআপ করা হবে সেভাবেই তৈরি হবে। নতুন ও মেধাবী তরুণদের টার্গেট করে তারা সংগঠনের রিক্রুটমেন্ট শুরু করে।

হিজবুত তাহরীরের দুই শীর্ষ ব্যক্তি গ্রেফতারের মাধ্যমে জড়িত অন্যদের শনাক্ত করার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, কাল সেলিমকে গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে কিছু ডিভাইস পেয়েছি। সেখানে তৌহিদের গ্রেফতারের বিষয়ে প্রতিবাদলিপি ড্রাফট রয়েছে। প্রতিবাদলিপি প্রেসে পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল, হয়ত সে সুযোগ পায়নি। সেখানেও সরকার পতন ও খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য নানা ধরনের উসকানিমূলক কথাবার্তা রয়েছে।

এ কর্মকর্তা আরও জানান, সেলিমকে রমনা থানার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে। তার আরও যারা সহকর্মী আছে, এটা নিয়ে আমরা কাজ করবো। সংগঠনের আরো যারা যারা আছে, তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। 

সংগঠনের সদস্যরা দৃশ্যমান ইনএকটিভ দেখালেও আড়ালে নানা কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে ডিএমপির এ অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, সেলিম মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজ করেও সংগঠনে কাজ করছে। মেধাবী হওয়ার কারণে সে সংগঠনের নেতৃত্ব পর্যায়ে চলে আসে। সংগঠনের ইন্টারন্যাশনাল যে বিষয়গুলো আছে তার মাধ্যমে সম্পাদিত হতো।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা সংগঠনের জন্য নিবেদিত প্রাণ, সর্বোচ্চ দিতে প্রস্তুতের পর্যায়ে গেলেই তাকে শীর্ষ পর্যায়ে নেওয়া হয়। তাদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া কষ্টকর। আমাদের কর্মকর্তারা তৌহিদকে সাতদিন জিজ্ঞাসাবাদে ছোট্ট একটি তথ্য পেয়েছে। সেলিমের নাম-ঠিকানা সবই জানে, কিন্তু সে সাংগঠনিক নামের মধ্যেই ছিল। সর্বশেষ ছোট্ট একটা তথ্য দিয়েছে, মনে হয় সে একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে ছোট পদে চাকরি করেন। কোম্পানির নামটাও বলেনি। কিন্তু অফিসাররা সুকৌশলে প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইট ঘেটে ঘেটে সেলিমকে শনাক্ত করেছে। এ ছাড়া শীর্ষ নেতৃত্ব যারা দেয়, এদের মধ্যে ২ জন আছে, বাকি যারা রয়েছে তাদের নাম বলবো না। গ্রেফতার হলে তাদের বিষয়ে বিস্তারিত জানাব।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সবসময় তৎপর রয়েছি। নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নানা ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এ সুযোগে জঙ্গি সংগঠনগুলো তাদের রিক্রুটমেন্ট, তৎপরতা বৃদ্ধি করতে চায়। কিন্তু আমরা তাদের সে সুযোগটা দিচ্ছি না।

সব প্রাথমিকে তারুণ্যের উৎসবে জুলাই-আগস্ট বিপ্লব নিয়ে কর্মসূচি - dainik shiksha সব প্রাথমিকে তারুণ্যের উৎসবে জুলাই-আগস্ট বিপ্লব নিয়ে কর্মসূচি ভর্তি হয়ে প্রতারিত হলে দায় নেবে না ইউজিসি - dainik shiksha ভর্তি হয়ে প্রতারিত হলে দায় নেবে না ইউজিসি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি: কপাল খুললো ভুল চাহিদায় সুপারিশ পাওয়াদের - dainik shiksha পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি: কপাল খুললো ভুল চাহিদায় সুপারিশ পাওয়াদের কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি আবেদন শেষ হচ্ছে কাল - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি আবেদন শেষ হচ্ছে কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় - dainik shiksha এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো - dainik shiksha প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.02540111541748