কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পেরে অ্যাসিড পানের আড়াই মাস পর মারা গেলেন গৃহবধূ রোজিনা খাতুন। অভিযোগ, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘পাবনা প্রতিশ্রুতি’ নামে এক এনজিওর শাখা ব্যবস্থাপক ও কর্মীরা তাকে অপমান অপদস্থ করেন। এই দুর্ব্যবহার সইতে না পেরে তিনি অ্যাসিড পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
মৃত রোজিনা খাতুন পাবনা সদর উপজেলার দোগাছি ইউনিয়নের আরিফপুর মহল্লার ট্রাক ড্রাইভার আমজাদ হোসেনের স্ত্রী। মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) মধ্যরাতে তিনি নিজ বাড়িতে মারা যান। পরদিন বুধবার পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে নিহতের ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে তার দাফন করা হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে রোজিনা খাতুন পাবনা প্রতিশ্রুতি এনজিও দোগাছি শাখা থেকে ৪৫ হাজার টাকা ঋণ নেন। নানা অভাব অনটনের মধ্যেও তিনি নিয়মিতভাবে ১ হাজার ৩’শ টাকা হারে ২৩টি কিস্তি পরিশোধ করেন। পরবর্তীতে কিস্তির টাকা যথাসময়ে দিতে না পেরে কিছুদিন বাড়ির বাইরে অন্যত্র অবস্থান করেন।
গত ১১ জানুয়ারি তিনি নিজ বাড়িতে ফিরলে এনজিও মাঠ কর্মী শাহিদা খাতুন লোকজন নিয়ে তার বাড়িতে যান। এনজিও কর্মীর কাছে রোজিনা কিস্তির টাকা কিছুটা কমিয়ে দিতে অনুরোধ করেন। এতে রাজি না হয়ে উল্টো রোজিনাকে অফিসে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। দোগাছি শাখার ব্যবস্থাপন এহিয়া খানের কাছেও একই দাবি জানান রোজিনা। কিন্তু তার দাবি না মেনে উল্টো অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। রাগে ক্ষোভে বাড়ি ফিরে রোজিনা খাতুন অ্যাসিড পান করেন আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে। বাড়ির লোকজন টের পেয়ে তাকে দ্রুত পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় রোজিনা খাতুনকে ১৮ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
এদিকে নিহতের ছেলে হৃদয় গত ১৫ জানুয়ারি বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় ৫ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় পুলিশ ২ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, পাবনা প্রতিশ্রুতির শাখা ব্যবস্থাপক এহিয়া খান ও মাঠ কর্মি শাহিদা খাতুন।
এ বিষয়ে পাবনা প্রতিশ্রুতির নির্বাহী পরিচালক মমতা চাকলাদার বলেন, কিস্তির টাকা দিতে না পারা, অপমান অপদস্ত করার বিষয়টি সঠিক নয়। তাদের পারিবারিক বিরোধেই তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। মমতা চাকলাদার বলেন, তারপরও মানবিক দিক ভেবে আমাদের পক্ষ থেকে তার চিকিৎসা সহায়তার কমতি করা হয়নি।
অপরদিকে এনজিওর গ্রাহক অ্যাসিড পানে আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় অভিযুক্ত কর্মকর্তা ও কর্মীদের বদলি করে অন্য শাখায় স্থানান্তর করা হয়। দোগাছি শাখার নতুন ব্যবস্থাপক আব্বাস উদ্দিন বলেন, পারিবারিক কলহের কারণে অ্যাসিড পান করেছিলেন রোজিনা খাতুন। এখানে এনজিওর কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি তার।
নিহতের স্বামী আমজাদ হোসেন ও সন্তান হৃদয় হোসেন বলেন, আমরা মামলা করেছিলাম ৫ জনের নামে। পুলিশ ২ জনকে ধরলেও কয়েকদিনের মধ্যে তারা জামিনে মুক্ত হয়ে যান। বাকিদের ধরা হয়নি। রোজিনা খাতুনের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি পিতাপুত্রের।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, পূর্বের ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা মেলায় দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ঘটনার তদন্ত চলছে। আইনানুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।