কুবিতে ছাত্রলীগের দাপটে তটস্থ শিক্ষক-উপাচার্য - দৈনিকশিক্ষা

কুবিতে ছাত্রলীগের দাপটে তটস্থ শিক্ষক-উপাচার্য

কুবি প্রতিনিধি |

‘ছাত্ররাজনীতিমুক্ত’ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ছাত্রলীগের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনেকটা কোণঠাসা। তাঁদের দাপটে তটস্থ শিক্ষকরাও। বাদ যাননি উপাচার্যও। সর্বশেষ ৩০ জানুয়ারি একজন সহকারী প্রক্টরকে লাঞ্ছনার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। উপাচার্যের সঙ্গেও অসদাচরণের অভিযোগ আছে।

ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বেশির ভাগ অভিযোগ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি ঘটনার নেপথ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস মিয়া ওরফে ইলিয়াস হোসেন সবুজ ও অনুসারী নেতাকর্মীরা। প্রতিটি ঘটনার পরই কুবি প্রশাসন থেকে তদন্ত কমিটি হয়েছে। কিন্তু সব ঘটনায় দোষীরা শাস্তি পাননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরেই ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি ইলিয়াস ও তাঁর অনুসারীরা ক্যাম্পাসে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে আসছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কুবিতে নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে এরই মধ্যে পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করেছে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-এলাহীর গ্রুপের নেতাকর্মীরা পদ পেতে ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছেন। রেজার অনুসারীরা ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নামের সংগঠনের ব্যানারে নিজেদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৩০ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্রলীগ নেতাদের জন্য থাকা একটি কক্ষের তালা ভেঙে প্রবেশ করেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কয়েকজন নেতাকর্মী। খবর পেয়েই ইলিয়াসের অনুসারীরা সেখানে ছুটে যান। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সমস্যা সমাধানে হলের প্রাধ্যক্ষের কক্ষে আলোচনায় বসেন প্রক্টরিয়াল বডি ও হল প্রাধ্যক্ষ। এক পর্যায়ে ইলিয়াসের অনুসারীরা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীদের কক্ষ থেকে বের করে

  দেওয়ার চেষ্টা করেন। ঘটনা সামাল দিতে এগিয়ে যায় প্রক্টরিয়াল বডি। তখন সহকারী প্রক্টর অমিত দত্তকে মারতে উদ্যত হন শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালমান চৌধুরী।

এর আগে গত ২৯ নভেম্বর দুই দফা দপ্তরে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈনের সঙ্গে অসদাচরণ করেন ইলিয়াসসহ তাঁর অনুসারীরা। ওই দিন দলের নেতাকর্মীদের চাকরি ও ঠিকাদারি দেওয়ার দাবিতে দলবল নিয়ে উপাচার্যের দপ্তরে গিয়ে তাঁকে শাসান ইলিয়াস। ঘটনার সময় সেখানে কুমিল্লার তৎকালীন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসানসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকও ছিলেন।একই বছরের ৩১ মার্চ একই দাবিতে উপাচার্যের দপ্তরে গিয়ে প্রথমে তাঁর সঙ্গে উচ্চবাচ্য এবং পরে ওই দিন দুপুর দেড়টার দিকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে উপাচার্যের গাড়ি আটকে দেন ইলিয়াস। শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সভাপতি ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, হলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের চাকরির জন্য উপাচার্যের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি বলেছেন, চাকরি দিতে পারবেন না। এ নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়েছে। এর বেশি কিছু নয়।’

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১১ সালের ২৪ জানুয়ারি পরীক্ষায় বেশি নম্বর দেওয়ার দাবি না মানায় লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক মো. মশিউর রহমানকে লাঞ্ছিত করেন ইলিয়াস। তাঁর ভাড়া বাসায় গিয়ে দরজা-জানালা ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় কুবি প্রশাসন তদন্ত কমিটি করে তাঁকে ওই বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি এক বছরের জন্য বহিষ্কার করে। কিন্তু তিনি বহিষ্কৃত হলেও শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল ছাড়েননি।

২০১৭ সালের ২৮ মে ইলিয়াসকে সভাপতি ও গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী রেজাউল ইসলাম মাজেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৬১ সদস্যের কমিটি করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এক বছর মেয়াদি ওই কমিটির নেতাদের বেশির ভাগেরই ছাত্রত্ব নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আঁখি আলম রকি বর্তমানে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালে আমার শিক্ষাজীবন শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনো সেই কমিটি বহাল। কুবি ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস ১৬ বছর ধরে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের একটি কক্ষে অবস্থান করে নানা অনৈতিক ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘আমি যখন সভাপতি নির্বাচিত হই, তখন আমি মাস্টার্সের নিয়মিত ছাত্র। আমার সিভি নিয়ে দীর্ঘদিন খোঁজখবর নিয়ে আমাকে সভাপতি করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। আমি কোনো শিক্ষক, শিক্ষার্থী বা নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে নির্যাতন করেছি, এমন একটি প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। বরং আমি সব সময় শিক্ষার্থীদের জন্যই আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। আশা করছি, শিগগিরই সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি দেবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। যতগুলো অভিযোগের কথা বলেছেন, তার একটিও সত্য নয়।’

বিশ্ববিদ্যালয় আইন, নিয়ম, নীতিমালার আলোকে চলে জানিয়ে এসব প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কাজ করছি। পাঠদান, পরীক্ষা নেওয়া, ফল প্রকাশ ছাড়াও এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কার্যক্রম বেড়েছে। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মান আরো উন্নত করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট করতে যারা এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে, তাদের আর ছাড় দেওয়া হবে না। সামনে এমন ঘটনা ঘটলে দোষীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রায় দুই লাখ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর পাঁচ লাখ খাতা চ্যালেঞ্জ - dainik shiksha প্রায় দুই লাখ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর পাঁচ লাখ খাতা চ্যালেঞ্জ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীরা, রোজ সম্মানী পাবেন ৫০০ টাকা - dainik shiksha ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীরা, রোজ সম্মানী পাবেন ৫০০ টাকা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে বেসরকারি মেডিক্যাল-ডেন্টালের ভর্তি ফি নির্ধারণ - dainik shiksha বেসরকারি মেডিক্যাল-ডেন্টালের ভর্তি ফি নির্ধারণ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ঢাবিতে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধে গণভোটের দাবিতে বিক্ষোভ - dainik shiksha ঢাবিতে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধে গণভোটের দাবিতে বিক্ষোভ নিম্নমানের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ করে দেয়া হবে - dainik shiksha নিম্নমানের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ করে দেয়া হবে আসিফ নজরুলের সাথে কি ঘটেছিল জেনেভা বিমানবন্দরে - dainik shiksha আসিফ নজরুলের সাথে কি ঘটেছিল জেনেভা বিমানবন্দরে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031311511993408