কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহা. হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে। গবেষণা ফার্মটি শিক্ষার্থীদের টাকা ওই শিক্ষকের অ্যাকাউন্টে দিয়েছে বলে জানিয়েছে। অর্থপ্রাপ্তির প্রায় একবছর পার হয়ে গেলেও হাবিবুর রহমান শিক্ষার্থীদের অর্থ পরিশোধ করেননি। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছাত্র পরামর্শক অর্থপ্রাপ্তির কথা গোপন করে আত্মসাৎ করেন। তবে ওই শিক্ষকের দাবি, শিক্ষার্থীদের কোনো টাকা দেয়নি ফার্মটি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, জব ফেয়ার বা নবীনবরণ আয়োজনে স্পন্সর করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে ‘প্রীতি রিসার্চ অ্যান্ড কনসালটেন্সি লিমিটেডে’র মৌখিক চুক্তি হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে ছাত্র পরামর্শক ও নির্দেশনা কার্যালয়ের প্রধান ভিসি কর্তৃক নিযুক্ত হন। চুক্তি অনুযায়ী ফার্মের একটি প্রজেক্টের (কোমলপানীয় নিয়ে বাজার গবেষণা) জন্য শিক্ষার্থীদের ৫০০ স্যাম্পল সংগ্রহ করে দেওয়ার কথা বলা হয়। যার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের পারিশ্রমিকসহ প্রায় ‘এক লাখ’ টাকা দেওয়ার কথা বলেন ফার্মের এমডি। একটি কর্মশালার মাধ্যমে ২০২৩ সালের ৭-১৯ জুনের মধ্যে প্রজেক্টের কাজ শেষ হয়। এতে ৪ জন তথ্যদাতা সংগ্রাহকের পাশাপাশি তথ্য সংগ্রহকারী হিসেবে আট শিক্ষার্থী কাজ করেন। যারা হলেন তন্ময় সরকার, আমিন, জয়, সোমা, মৌ, সুরুপা, মাওয়া, মুনমুন। এ ছাড়া প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করেন আহনাফ শাহরিয়ার রিকি। এদিকে প্রজেক্ট বাস্তবায়নের পর ‘এক লাখ’ টাকা দেওয়ার কথা বলা হলেও কনসালটেন্সির এমডি নাঈমুর রহমান শিক্ষার্থীদের পারিশ্রমিকসহ ৭০ হাজার টাকার বেশি দিতে পারবেন না বলে জানান।
তিনি বলেন, প্রজেক্টটি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে শিক্ষার্থীদের সম্মানে অতিরিক্ত ২০-৩০ হাজার টাকা দেব বলে জানাই। তবে ছাত্র পরামর্শক ও প্রজেক্ট বাস্তবায়নকারীদের অসহযোগিতায় আমাদের অনেক স্যাম্পল বাদ পড়ে যায়। তাই আমরা অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। তবে প্রজেক্ট বাস্তবায়নে অসহযোগিতার বিষয়ে শিক্ষার্থীরা আপত্তি জানান। তাদের ভাষ্য, প্রজেক্ট চলাকালে ফার্মের প্রতিনিধি হিসেবে সার্বক্ষণিক একজন নিয়োজিত ছিলেন। যিনি সে সময় শিক্ষার্থীদের কিছু জানাননি। কনসালটেন্সি ফার্ম ও শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বর ছাত্র পরামর্শক ও নির্দেশনা কার্যালয়ের অ্যাকাউন্টে ৭০ হাজার টাকা পাঠানো হয়। যেখান থেকে শিক্ষার্থীদের পারিশ্রমিক বাবদ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা এবং প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটরের ৫ হাজার টাকা পাওয়ার কথা রয়েছে।
কো-অর্ডিনেটর আহনাফ শাহরিয়ার রিকি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি জব ফেয়ার আয়োজনের জন্য স্পন্সর হিসেবে প্রজেক্টটি ক্যাম্পাসে আনার ব্যবস্থা করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে আমরা কম টাকায় প্রজেক্টটি করে দিই। যেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের লাভ হওয়ার পাশাপাশি জুনিয়ররাও যেন গবেষণার হাতেখড়ি করতে পারে। তবে পরে ছাত্র পরামর্শক দপ্তরের অসহযোগিতার কারণে আমাদের বেগ পোহাতে হয়। এতকিছুর পর কোম্পানি আমাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিলেও স্যার তা গোপন করেন, যা অর্থ আত্মসাতের শামিল।
তথ্য সংগ্রহকারী তন্ময় সরকার বলেন, আমরা এ বিষয়ে স্যারের সঙ্গে পাঁচবারের বেশি দেখা করি। শুরুর দিকে স্যার বলতেন, কনসালটেন্সি ফার্ম তার কাছে টাকা দিলে আমাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেবে। তবে ওই প্রজেক্টের প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও স্যার আমাদের অর্থপ্রাপ্তির বিষয়ে কিছু জানাননি। ৪-৫ মাস আগেও আমরা স্যারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি সময় নেই বলে এড়িয়ে যান।
ড. হাবিবুর রহমান বলেন, আমার সঙ্গে কেউ দেখা করেনি এ বিষয়ে। একজন এসেছিল তাকে বলেছি, তোমরা প্রজেক্ট ফেল করেছ।
এদিকে ফার্মের এমডি অর্থ প্রেরণের বিষয়ে বলেন, আমরা যখন টাকা দিতে চাই ওই শিক্ষক প্রথমে হ্যান্ড ক্যাশ নিতে চান কিন্তু আমরা ডকুমেন্ট ছাড়া দেব না বলে জানাই।পরে তিনি বলেন, তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে দিতে আমরা তাতেও আপত্তি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট দেওয়ার কথা বলি। তারপর তিনি ছাত্র পরিচালনা দপ্তরের নামে জনতা ব্যাংকের একটি নম্বর দিলে আমরা স্টুডেন্টদের পারিশ্রমিকসহ ৭০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেই।
অর্থপ্রাপ্তির বিষয়টি ছাত্র উপদেষ্টা ড. মোহা. হাবিবুর রহমান নিশ্চিত করলেও প্রাপ্ত অর্থ শিক্ষার্থীদের নয় বলে জানান। তিনি বলেন, ফার্ম কর্তৃপক্ষ আমাকে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা প্রজেক্টে ফেল করেছে। তারা কাজ ঠিকভাবে করেনি। তাই তারা শুধু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে টাকা দিয়েছে। তবে ফার্মের এমডি বিষয়টিকে অস্বীকার করে বলেন, কাজ করেছে শিক্ষার্থীরা। আমি কেন বিশ্ববিদ্যালয়কে শুধু শুধু টাকা দেব। যেহেতু ছাত্র পরামর্শক এর সঙ্গে যুক্ত তাই তাকেই পুরো টাকা দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, শিক্ষক হয়ে শিক্ষার্থীদের অর্থ আত্মসাৎ করাটা অগ্রহণযোগ্য। যদি এ ধরনের কিছু হয়ে থাকে তাহলে ওই শিক্ষককে বিচারের আওতায় আনা উচিত।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, বিষয়টি আমি মাত্রই শুনলাম। ওই শিক্ষকের সঙ্গে আমি কথা বলব। যদি বিষয়টি সত্যি হয় তাহলে দ্রুত এর সমাধান করে নিতে বলব।