মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে তিন শিশুসহ ১৩ জনকে আটক করেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। বাকিদের মধ্যে চারজন পুরুষ ও ছয়জন নারী রয়েছে। এ অপারেশনের নাম দেয়া হয়েছে ‘অপারেশন হিল সাইড’।
শনিবার (১২ আগস্ট) সকাল ৭টার দিকে বাড়িটিতে সিটিটিসি অভিযান শুরু করে বলে কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুছ ছালেক বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জেলা পুলিশ ও কুলাউড়া উপজেলা পুলিশের সমন্বয়ে ৪ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযান শেষে বেলা ১১টায় ব্রিফিং করেন কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। তিনি জানান, এ অভিযানে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। অভিযানে বাড়িটি থেকে বিপুল জিহাদি বই, ৩ কেজি বিস্ফোরক, নগদ ৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা ও জিহাদের প্রশিক্ষণ সামগ্রী জব্দ করা হয়েছে। আটককৃতরা নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র সদস্য।
আটকদের মধ্যে শুধু পুরুষদের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- রফিক উদ্দিন, আব্দুল হাফিজ, খায়রুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম। তাদের বাড়ি সাতক্ষীরা, কিশোরগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে। জানা যায়, আটক ওই ৬ জন নারীর মধ্যে ২ জন তাদের পরিবারের সদস্য না।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান বলেন, কোনো ধরণের হতাহতের ঘটনা ছাড়াই চার ঘণ্টার সফল অভিযান শেষ হয়েছে। কিছু বিস্ফোরক দ্রব্য ও জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়েছে। এটি একটি নতুন জঙ্গি সংগঠন যার নাম ইমাম মাহমুদের কাফেলা। জেলা পুলিশ ও কুলাউড়া উপজেলা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। দেশের বিভিন্নপ্রান্তে সংগঠনের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে অভিযান পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা পুলিশ সুপার মনজুর রহমান বলেন, আটকদের এখন ঢাকায় নেয়া হচ্ছে। সেখানে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের আদালতে নেয়া হবে।
এর আগে শুক্রবার (১১ আগস্ট) রাত ৮টার পর থেকে বাড়িটি ঘিরে রাখা হয় বলে নিশ্চিত করেন কুলাউড়ার কর্মদা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদ।
ইউপি চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদ জানান, তার ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টি উলি গ্রামের বাইশালী বাড়ি নামক এলাকায় একটি টিলার উপর নতুন স্থাপিত বাড়িটি ঘিরে রেখেছে আইশৃঙ্খলা বাহিনী।
ইউপি চেয়ারম্যান আরও জানান, ঢাকা থেকে আইশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি টিম এসেছে ও তাদের সাহায্য করতে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ ও কুলাউড়া থানা পুলিশও রয়েছে ঘটনাস্থলে। নিরাপত্তাজনিত কারণে কোনও মানুষকে ওই এলাকায় যেতে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
কর্মদা ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার মাহমুদা আক্তার বলেন, যে বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে ওই বাড়ির বাসিন্দারা স্থানীয় নয়। কয়েকদিন আগে ভাড়া নিয়ে সেখানে অবস্থান করছে তারা।
মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার মঞ্জুর রহমান জানান, বিষয়টি এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসান জানান, মৌলভীবাজারে কুলাউড়া থানায় দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে অভিযান চালাচ্ছে সিটিটিসি। বিস্তারিত ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জানানো হবে।