কোটা সংস্কার এবং আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করেছেন কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা। এবার তাদের সঙ্গে এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থায় নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এই বিক্ষোভ থেকে বলা হয়, গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন থেকে আসা ‘অপমানজনক’ বক্তব্যের প্রতিবাদে তারা এই বিক্ষোভ করছেন। তারা গতকাল মধ্যরাতে প্রায় ২ ঘণ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন।
এদিকে সরকারি চাকরিতে কোটার বিরোধিতা করে রাজধানীর প্রগতি সরণির নতুন বাজার এলাকার সড়কে অবস্থান নিয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে নতুন বাজার এলাকায় যানচলাচল বন্ধ রয়েছে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকা, বুয়েট, সায়েন্সল্যাব, নীলক্ষেত এলাকায় অবস্থায় নিয়েছেন ঢামেক, বুয়েট, ঢাকা কলেজসহ ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আসার পথে ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ও বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এ নিয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ইডেন কলেজে ছাত্রলীগ আন্দোলনকারী ছাত্রীদের ওপর হামলা করেছে। হামলায় আহত হয়েছেন, ছাত্রফ্রন্টের ঢাকা নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক সায়মা আফরোজ, ইডেন কলেজ শাখার সভাপতি শাহিনুর সুমি, সাংগঠনিক সম্পাদক সুমাইয়া সাইনা, অর্থ সম্পাদক সানজিদা হক এবং গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের ঢাকা নগরের সংগঠক স্কাইয়াসহ অনেকে।
গতকাল রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জেরে মাঝরাতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ১০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে মিছিল করেন।
শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলগুলো থেকে মিছিল নিয়ে রাজপথে নেমে আসেন। এ সময় তাদের মুখ থেকে শোনা যায়, ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার-রাজাকার’, ‘কে বলেছে কে বলেছে, সরকার-সরকার’, ‘রাজাকার আসছে, রাজপথ কাঁপছে’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’সহ বিভিন্ন স্লোগান।
এদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ উঠে। হামলার ঘটনায় ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ নাজমুল হাসান তালুকদার সোমবার পদত্যাগ করেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভঙ্গ করা হলে তা শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান।
সোমবার (১৫ জুলাই) রাজধানীর এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, চলমান কোটা আন্দোলনের সমাধান আদালতের বিষয়। আদালত যে আদেশ দেবেন তার প্রতি শ্রদ্ধা থাকা এবং তা মেনে নেওয়া প্রতিটি নাগরিকের একান্ত কর্তব্য। আদালতের নিয়ম মানতে আমরা বাধ্য। আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে তৎপরতা কেউ চালালে সেটি যেই হোক, শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হবে।