আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সন্তান এবং একজন নাগরিক হিসেবে আমি কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র ছাত্রী হত্যার এবং নির্যাতনের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল এমন একটি দেশ/রাষ্ট্র যেখানে ন্যায় বিচার থাকবে, নারী/পুরুষ, গরিব/ধনী সকলের থাকবে সমান অধিকার, মেধা এবং যোগ্যতাই হবে সবচেয়ে বড় মাপকাঠি।
আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি, কোটা ব্যবস্থা একটি সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করে এবং মেধাবীদের অনুৎসাহিত করে। যার ফলে অনেক মেধাবী ছাত্ররাই দেশ ত্যাগ করে আর বঞ্চিত হয় দেশ।
আমি বিশ্বাস করি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা কিছু পাবার জন্য জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করেননি আর সেটা ফুটে উঠেছিল তাজউদ্দীন আহমদের কিছু কথা থেকে:
১) আমাদের একজন আত্মীয় যিনি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন আমার বাবা তাজউদ্দীন আহমদকে একদিন দুঃখ করে বলেছিলেন যে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করলাম কিন্তু কিছুই পেলাম না। তাজউদ্দীন আহমদ একটু রেগেই উত্তর দিলেন " আমরা কিছু পাবার জন্য দেশ স্বাধীন করি নাই কিন্তু আমাদের সকলের এখন দায়িত্ব দেশ গড়ার। "
২) ১৯৭৩/১৯৭৪সালের একটি ঘটনা-তাজউদ্দীন আহমদ তখন অর্থমন্ত্রী। ওনার টেবিলে একটি প্রোমোশনের ফাইল বেশ কিছুদিন ধরে পরে আছে যা কখনও হয়না আর তাই ওনার একান্ত সচিব সাহস করে একদিন জানতে চাইলেন কেন। তাজউদ্দীন আহমদ কিচ্ছুক্ষন চিন্তা করে বললেন যে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় যখন পাকিস্তানিরা আমাদেরকে এবং আমাদের পরিবারকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল তখন আমার স্ত্রী আমাদের সন্তানদেরকে নিয়ে তার বাসায় আশ্রয় খুজতে গিয়েছিল কিন্তু তিনি তাদেরকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন I তারপর তিনি সেই ফাইলটা সই করে বললেন যে এই ব্যাক্তি এই প্রোমোশনের জন্য যোগ্য এবং আমার তার সাথে ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা প্রভাব ফেলতে পারে না I
৩) বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরবর্তীকালে তাজউদ্দীন আহমদ বারবার সতর্ক করেছিলেন যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে সমাজে বিভেদ সৃষ্টি হবে এবং আমাদের দেশ/জাতি হিসেবে একতা নষ্ট হবে। তিনি বলছিলেন যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকলকে প্রতিহিংসা বর্জন করে মার্জিতভাবে সবাইকে সাথে নিয়ে দেশ গড়তে হবে।
তিনি আরো বলেছিলেন আমরা যদি ব্যর্থ হই তাহলে এমন দিনও আসতে পারে যখন সাধারণ মানুষ আমাদেরকে ছি ছি করবে।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হয়ে গেল কিন্তু দুঃখ লাগে আমরা এখনও একই বেড়াজালে আটকে আছি।