কোটা চাই না এবং শিক্ষকদের সঙ্গে বসা উচিত - দৈনিকশিক্ষা

কোটা চাই না এবং শিক্ষকদের সঙ্গে বসা উচিত

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

সাবেক সচিব, মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ও গবেষক এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করা এই সাবেক সচিবের ‘বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ইতিহাস’ বইটি বহুল পঠিত। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ছাত্ররা ভিন্ন ভিন্ন দাবিতে আলাদাভাবে আন্দোলনের মধ্যে রয়েছেন। যার সঙ্গে জড়িত রয়েছে সরকারি চাকরি সুবিধাদি এবং কোটার মতো বিষয়। রোববার (১৪ জুলাই) দেশ রূপান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সম্পাদকীয় বিভাগের সাঈদ জুবেরী।

প্রশ্ন : সর্বজনীন পেনশন স্কিম ঘোষণাকালে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে, যাদের কোনো অবসরভাতার ব্যবস্থা নেই এই ব্যবস্থা চালু হচ্ছে তাদের জন্য; যারা পেনশনের আওতাভুক্ত আছেন তাদের জন্য এটা প্রযোজ্য হবে না। এখানে তো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পড়ার কথা না। কিন্তু তাদের এই ব্যবস্থার আওতায় আনা কেন জরুরি হয়ে পড়ল সরকারের কাছে?

এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার : আমার মনে হচ্ছে এখানে কমিউনিকেশন গ্যাপ রয়েছে। যেটুকু বুঝলাম, এখানে মূলত দুপক্ষের মধ্যে কথা হয়নি। কথা না বলাতে এখানে একটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এখন যারা রাষ্ট্র চালায় তাদেরও একটা হিসাব আছে। আবার আমরা যারা রাষ্ট্রের থেকে সেবা নিই, আমাদেরও কিছু চাহিদা আছে, কিছু বিষয় আছে। যেমন- বিল ক্লিনটন যখন প্রেসিডেন্ট হয়ে দায়িত্ব নিলেন তখন আমি যুক্তরাষ্ট্রে জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তো উনি স্বাস্থ্যনীতি ঘোষণা করার আগে প্রায় দেড় বছর সময় নিলেন, পুরো আমেরিকা ঘুরে ঘুরে বক্তৃতা দিয়ে জনমত তৈরি করলেন এবং প্রথমে জন হপকিনস ইউনিভার্সিটিতে এলেন। যার ফলে সেখানে কোনো অসুবিধা হয়নি। আর আমাদের এখানে হঠাৎ করেই একটা কাজ করে ফেলি, যাদের জন্য করি তারাও এটার ভালোমন্দ বুঝতে পারে না। তো আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে সরকারের বসা উচিত। সরকারের উচিত তার বক্তব্য শিক্ষকদের কাছে তুলে ধরা এবং শিক্ষকদের বক্তব্য শোনা তাহলে এটার একটা সমাধানের রাস্তা বের হবে। আমি বলব যে ব্যাপারটা কিছুটা একতরফা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

প্রশ্ন : নতুন ব্যবস্থা যার জন্য, তাকে আস্থায় নেওয়ারও ব্যাপার আছে, সেখানে ঘাটতি আছে...

এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার : ডেফিনেটলি, আমি এই কথাটাই বোঝাতে চাচ্ছি। সেখানে চাপিয়ে দিয়েছে শব্দটা বললাম না, কিন্তু এটা একতরফা হয়েছে। ফলে অনাস্থা থাকবে এবং অবিশ্বাস থাকবে।

প্রশ্ন : শিক্ষকরা এটার প্রতিবাদ জানালে এবং আন্দোলনে যাওয়ার পরে অর্থ মন্ত্রণালয় একটা ব্যাখ্যা দিয়েছে। সেখানে মনে হচ্ছে ধীরে ধীরে অন্য পেশাজীবীরাও সর্বজনীন পেনশনের ভেতর আসবে, এমন একটা বার্তা কি আছে? যদি তাই হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে শিক্ষকদের কি টেস্ট কেস হিসেবে, মানে গিনিপিগ করা হচ্ছে?

এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার : এখন যদি সামগ্রিক ভাবে, মানে সবার জন্যই হয়, তাহলে কাকে দিয়ে শুরু করব? হ্যাঁ, এটা হতে পারে যে এটা ফেইজ বাই ফেইজ আসবে, একসঙ্গে হয়তো সবাইকে করবে না। তাহলে কিন্তু মহাপরিকল্পনাটা আগে প্রণয়ন করতে হবে, সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, প্রণয়ন করে তারপর যদি আংশিকভাবে শুরু করতে হয় তাহলে কাকে দিয়ে শুরু করব সেটা ধীরেসুস্থে চিন্তা করে তারপর শুরু করব। কিন্তু এখন আপনি একটা শুরু করে দিয়ে যদি বলেন যে, না অন্যদেরকেও এটার আওতায় আনব, তাহলে তো একটা গ্যাপ তৈরি হলো। যাদের দিয়ে শুরু করলেন তারা মানবে কেন?

প্রশ্ন : অচলাবস্থা শুরুর পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা ও এ বছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে তো মনে হয়েছে যে, সরকার সত্যিই একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে পেনশনের বিষয়ে। আপনি কী মনে করেন?

এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার : আমি মনে করি এটা এভাবে না করে আগে আলাপ-আলোচনার পর সেমিনার, ওয়ার্কশপ করে, অন্যদের কী বক্তব্য আছে শুনে, এটার ভালোমন্দ দেখে দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক মতামতের ভিত্তিতে হলে হয়তো ভালো হতো। এখন যে লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে, তার কী হবে?

প্রশ্ন : শিক্ষকরা আন্দোলনে যাওয়ার পরে সরকারের আমলা এবং মন্ত্রীরা বলছেন যে, এই ব্যবস্থা সম্পর্কে শিক্ষকরা ভুল ধারণা নিয়ে বসে আছে। তাদের কথায় মনে হচ্ছে যে, শিক্ষকরা আসলে ঠিক হিসাবটা করতে জানেন না। এই জায়গাগুলোতে কি কোনো সমস্যা মনে হয় আপনার? 

এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার : আমাদের তো একটা সমস্যা আছে। আমরা কেউ কাউকে সম্মানের চোখে দেখি না, এটা আমাদের জাতীয় সমস্যা। আমরা অন্যের দোষ বেশি দেখি, নিজের দোষ মোটেই দেখি না। আবার সরকারকেও একতরফা দোষ দেওয়া ঠিক হবে না! কারণ, আমরা অনেক সময় নিজের চাহিদার ক্ষেত্রে যুক্তি মানি না। এই ধরেন, আমি যদি আমেরিকার কথা বলি, সেখানে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ডিপার্টমেন্টে আপনিও ফুল প্রফেসর, আমিও ফুল প্রফেসর অর্থাৎ দুজনেই ফুল প্রফেসর। কিন্তু আমি বছরে বেতন পাই ২ লাখ টাকা আর আপনি পান ৪ লাখ টাকা। কারণ আপনার এক্সপোজার বেশি, আপনার রিসার্চ বেশি, আপনার ইন্টারন্যাশনাল রিকগনিশন বেশি, মার্কেটে আপনার চাহিদা বেশি। আপনাকে আরও বড় ইউনিভার্সিটি আরও বেশি টাকা দিয়ে নিতে চায়, কিন্তু আমার তেমন এক্সপোজার নেই। তো এখন আমাদের দেশে সে রকম কোনো বাছবিচার নেই। এখানে রেহমান সোবহান সাহেব এবং আমি যদি প্রফেসর হই তো দুজনই সমান। কিন্তু আমার ওজন তো রেহমান সোবহান সাহেবের মতো না। আসলে আমাদের এখানে সবক্ষেত্রেই সমস্যা আছে। আমরা অনেক সময় নিজেরটা এত বেশি বুঝি যে, আমরা যুক্তি মানতে চাই না। তবুও আমি বলব এখানে সরকারের দায় বেশি। তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে বসা উচিত। তাদের দলীয় শিক্ষকও তো আছেন, যারা তাদের রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস করেন, তাহলে তাদের সঙ্গেই আগে বসেন, তাদের সঙ্গে বসে তাদের কনভিন্স করেন এবং তাদের দায়িত্ব দেন যে, তোমরা অন্যদের সঙ্গে কথা বলো।

প্রশ্ন : বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন এমনিতেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন এবং এখানে এক রকম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার চাকরি করতে আগ্রহী হন না মেধাবীরা। অনেকে বলছেন, এই পেনশন প্ল্যান কার্যকর হলে মেধাবীরা শিক্ষকতায় একদমই আসবেন না। আপনার মত কী?  

এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার : এখানে একটা বিষয় আছে। যেমন, ৫০-এর দশকের দিকে শুরুতে একজন সিএসপি অফিসারের বেতন ছিল ৪৭৫ টাকা, আর একজন ইপিসিএস ডেপুটি মাজিস্ট্রেটের বেতন ছিল ২৫০ টাকা, ঢাকা ইউনিভার্সিটির লেকচারের বেতন ছিল ১৫০ টাকা। তবে একটা ফাঁক ছিল। সেটা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্র্তৃপক্ষ প্রত্যেকটা ফার্স্ট ক্লাসের জন্য একটা করে ইনক্রিমেন্ট যোগ করে দিত এবং কাউকে কাউকে বেশিও। যেমন ফার্স্ট ক্লাস তো চারটা হয়, মেট্রিক, ইন্টারমেডিয়েট, অনার্স ও মাস্টার্স। কিন্তু আবু সাইদ চৌধুরী যখন ভাইস চ্যান্সেলর তখন সৈয়দ আনোয়ার হোসেন সাহেবকে ৬টি ইনক্রিমেন্ট দিয়েছিলেন শুরুতেই। উনি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, তুমি তো থাকবা না সিএসপি হয়ে চলে যাবে। তো উনি বলেছিলেন যে, না, স্যার আমি গোলামি করতে চাই না; আমি শিক্ষকতা করব। তখন তিনি বললেন,  ঠিক আছে, আমি তোমাকে ৬টি ইনক্রিমেন্ট যোগ করে তোমার বেতন ফিক্সড করে দিলাম। এই সুযোগটা ছিল তখন মেধাবীদের আকৃষ্ট করার জন্য, মূল বেতন কম হলেও মেধাযোগ্যতা বুঝে সেখানে ইনক্রিমেন্ট যোগের সুযোগ ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আমরা সবাইকে এক করে ফেললাম। সবাইকে যেহেতু এক করেই ফেললাম কাজেই এখন যদি আমরা ভিন্নরকম সিদ্ধান্ত নেই যে, এই গ্রুপ এভাবে পেনশন পাবে আর ওই গ্রুপ সেভাবে পেনশন পাবে, তাহলে তো সেটা মেনে নেওয়া কঠিনই। 

প্রশ্ন : বলা হচ্ছে, প্রত্যয় স্কিমে শিক্ষকরা আড়াই কোটির বেশি পাবেন আর আগের ব্যবস্থায় যেখানে পেতেন দেড় কোটির মতো। প্রশ্নটা হচ্ছে যে, এই হিসাবের মধ্যে টাইম ভ্যালু অব মানি ধরা হয়নি। এটা নিয়ে আপনার মতামত কী?

এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার : আমি মনে করি, দুপক্ষ বসা উচিত। কি ফাঁকটা আছে সেটাই তো আমরা জানি না। যেমন, একটা টেলিভিশনে একজন শিক্ষক বলছিলেন যে, তারা নাকি ৭০-৮০ লাখ টাকা একসঙ্গে পেতেন, নতুন স্কিমে আর এটা পাবেন না। তো আমি বললাম যে, এটা কীসের টাকা? যেমন, আমরা সচিবরা যখন রিটায়ার করলাম আমরা ১৮ মাসের মূল বেতনের সমান পাই, সেটা ধরেন ১৪ লাখ টাকার মতো হয়। আর প্রভিডেন্ট ফান্ডে যেটা পাই সেটা তো আমার নিজের টাকা। এখন এটা মনে করেন কারও ৭০ লাখ হয়, কারও ২০ লাখ হয়। যেমন আমার নিজের ২১ লাখ টাকা ছিল, আমি কম জমাতে পেরেছি। তো এটা আমার নিজের টাকা। এখানে আমার যেটা জমা হয় সেটার ওপরে ইন্টারেস্ট দেওয়া হয়। আর আমরা ৫০% যেটা নিই সেটাও ধরেন একজন সচিবের ৬৫ বা ৭০ লাখ ম্যাক্সিমাম হবে। তাহলে ওনারা যে ৭০-৮০ লাখ টাকা আগে একসঙ্গে পেতেন এখন পাবেন না, সেটা কোন টাকা এটাই তো আমরা কেউ জানি না। এটা তো কেউ খোলাসা করেনি। তো ব্যাপারটা অস্পষ্ট।

প্রশ্ন : বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও মাঠে আছেন। তারা করছেন কোটা সংস্কার আন্দোলন চলছে। চলমান আন্দোলনটা এত জোড়ালো হচ্ছে কেন?

এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার : এটার বিষয়ে আমার নিজস্ব একটা অবস্থান আছে। কারণ যেহেতু আমি সিভিল সার্ভিসে বহুদিন ছিলাম, এখনো ঘাঁটাঘাঁটি করি। এখানে নিখিল ভারতে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা শুরু হলো ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে। ব্রিটেনেও এটা তখন চালু হয়নি। ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসের ওপরে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে একটা গবেষণা চালায়। ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে এটার ওপর বই বের হয়েছে। সেখানে দেখাচ্ছে আইসিএস ছিলেন তাদের ৫০% অক্সফোর্ডের সেরার সেরারা ২৫% ক্যামব্রিজের সেরার সেরারা আর বাকিরা ২৫টি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের। একইভাবে সিএসপিদের ক্ষেত্রে যদি আসেন তাহলে আপনি দেখবেন সেখানে টেকনিক্যালি কোটা ছিল, কিন্তু আমি মনে করি কোটা ছিল না। কারণ সেখানে ২০% ছিল ওপেন ফর অল পাকিস্তান। ৪০% পূর্ব পাকিস্তান আর ৪০% পশ্চিম পাকিস্তান। এখন এটা কিন্তু কোনো জেলার জন্য ছিল না। ঢাকা ইউনিভার্সিটি হলো ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে এবং প্রথম গ্র্যাজুয়েটরা বের হলো ১৯২৩, আইসিএস পরীক্ষা হলো ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে এই হিসেবে ঢাকা ইউনিভার্সিটি ২১টি পরীক্ষা পেল। কিন্তু ঢাকা ইউনিভার্সিটির একজন ছাত্র আইসিএস হতে পারেনি। ইভেন হুদা সাহেবের মতো এত বড় অর্থনীতিবিদ, হাফিজুর রহমান সাহেবের মতো মেধাবী ছাত্ররাও কিন্তু ঢুকেছেন বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসে, যেটা প্রাদেশিক। এখন সিএসএসের বেলায় আপনি দেখেন যারা সিএসপি হয়েছে তারা ঢাকা ইউনিভার্সিটির সেরার সেরারা এবং রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ১৬টি পরীক্ষা পেয়েছে, কিন্তু একজনও সিএসপি হতে পারেনি। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আমরা বিনা পরীক্ষায় প্রথমে নিলাম, তারপর কোটা করলাম, এসব করে দেখেন আজ আমাদের সিভিল সার্ভিসটা একেবারে ডুবে গেছে। আপনি যদি ইন্ডিয়ার সঙ্গে তুলনা করেন, ইভেন পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করেন দেখা যাবে আমাদের সিভিল সার্ভিসের কোয়ালিটি অনেক নিচে নেমে গেছে।

প্রশ্ন : এটা কি কোটার কারণে?

এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার : কিছুটা কোটার কারণে কিছুটা আবার প্রথম দিকে পরীক্ষা না নিয়ে নিয়ে নেওয়ার কারণে।

প্রশ্ন : ইন্ডিয়াতেও তো কোটা ব্যবস্থা রয়েছে।

এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার : সেখানে তো অনগ্রসরদের জন্য মাত্র ২ শতাংশ। ইন্ডিয়া এত বড় দেশ, আমাদের দেশের চেয়ে ২২ গুণ বড়, কিন্তু তারা এ পর্যন্ত কোনো ব্যাচে ১৮০ জনের বেশি নেয়নি এবং ৫০-৬০ তাদের স্ট্যান্ডার্ড। দু-একবার তারা বেশি নিয়েছে কিন্তু সেটাও ১৮০ সর্বোচ্চ। কিন্তু তাদের ২২ ভাগের ১ ভাগ হয়ে আমরা এক ব্যাচে ৫০০, ৬০০, ৪৫০ করে নিই;  আমাদের পরীক্ষাও ত্রুটিপূর্ণ। আমরা স্বাধীনতার পরে পরীক্ষা ছাড়া নিয়োগ দিছি, এসব কারণে আমরা নিচে পড়ে গিয়েছি। এখন কোটাটা উঠে যাওয়া উচিত। শুধু প্রতিবন্ধীদের জন্য থাকতে পারে আর কারও জন্য থাকা উচিত না।

প্রশ্ন : কোটা তো চিরস্থায়ী ব্যবস্থা হতে পারে না। বিভিন্ন হিসাবে মেয়াদি কোটার ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। আমাদের ৫৩ বছরে কোটার সংস্কার হলো না। আবার আলোচনার কেন্দ্রে আনা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা কোটার ব্যাপারটা। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার : আমি নিজেই একজন মুক্তিযোদ্ধা, আমার শ্বশুর মুক্তিযোদ্ধা, আমার ভাই মুক্তিযোদ্ধা; মুক্তিযুদ্ধে আমার চাচাতো ভাই শহীদ হয়েছে। তো আমার দুটি মেয়ে সম্প্রতি ডাক্তারি পাস করেছে তারাও বিসিএস হয়তো দেবে। কিন্তু তারপরও আমি কোটা চাই না। এটা আমার নৈতিক স্ট্যান্ডার্ড। ঢাকা ইউনিভার্সিটির একজন প্রফেসর নুর ইসলাম সাহেব, উনি কোন ডিপার্টমেন্টের সেটা মনে পড়ছে না। আমি দেখলাম, উনি খুব সুন্দরভাবে গুছিয়ে বলেছেন। তার বিষয়টা ছিল এ রকম যে, মুক্তিযুদ্ধের নাতি-নাতনিরা, তোমাদের দাদারা মুক্তিযুদ্ধ করে নিজেদের বীর প্রমাণ করেছেন, তুমি এখন ক্যারিয়ারের জন্য যুদ্ধ করে নিজের বীরত্বের প্রমাণ দাও। আর তুমি তোমার বাবারটা পেতে পারো, দাদার সম্পত্তি তো কেউ পায় না। কাজেই দাদারটা দাবি করা ঠিক হয়নি। আবেগ দিয়ে যদি আপনি বিবেচনা করেন তাহলে আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।

প্রশ্ন : কোটা বিতর্কের সমাধান কার হাতে? আদালত নাকি সরকারের হাতে? নাকি এটার রাজনৈতিকভাবে সমাধান হবে?

এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার : চিফ জাস্টিস সাহেব খুব আক্ষেপ করে বলেছেন যে, রাত্রে মনে হয় টকশওয়ালারাই সবকিছুই জানে পৃথিবীর, আমাদের মাথায় কিছুই নেই। আদালত সবকিছুর ওপরে, আমরা আদালতকে সম্মান করি, আদালতের ওপরে কিছু নেই পৃথিবীতে, সরকারও আদালতের ওপরে না, যদি বিচারের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেন; শাসনব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে আদালত ওপরে। তবে এটা আদালতে না গেলেই ভালো হতো, প্রশাসনিকভাবেই এটার সমাধান হওয়া উচিত ছিল।

প্রশ্ন : ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দেও শিক্ষার্থীরা কোটা নিয়ে মাঠে নেমেছিল। তারা তখনো সংস্কার চেয়েছিল, এবারও চাইছে। কিন্তু তাদের সংস্কার শব্দটিকে ফেলে দিয়ে বাতিল শব্দ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে তারা যেহেতু তরুণ, রাজনৈতিক সংগ্রামেও তাদের অভিজ্ঞতা কম, তাদের হাতে মিডিয়াও নেই, ফলে আমাদের বড় বড় পলিটিশিয়ানরা কি তাদের দাবির প্রকাশকে ম্যানিপুলেট করেছে?

এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার : এখানে যেটা হয়েছে, হ্যাঁ, হয়তো একটা মানসিকতা ছিল যে সংস্কার। কিন্তু এখন অধিকাংশই মনে হয় চায় যে বাতিল হোক। পত্র পত্রিকায় যেভাবে আসছে সেখানে বাতিলের কথাই মানে এটা যাতে পুনর্বহাল না করা হয়; বক্তব্যটা এমনই প্রমিন্যান্ট। এখানে দুই রকম তিন রকম হতে পারে। একটা হচ্ছে যে, কোর্ট যেহেতু একটা নির্দেশ দিয়েছে, ফলে বাতিলটা বহাল আছে এবং এখন ছেলেমেয়েরা ঘরে ফিরে যেতে পারে। এখন পিএসসির নিয়োগ হতে তো এক বছর লাগবে। এর মধ্যে সরকার রাতারাতি কোনো উলটপালট কিছু করতে পারবে না বা করবে না।

প্রশ্ন : সরকারের ভুলনীতি একই সময়ে শিক্ষক এবং ছাত্রসমাজকে মাঠে নামিয়েছে কিনা?

এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার : সিদ্ধান্তে সমন্বয়হীনতা তো কিছুটা আছে। আমি ভুলনীতি শব্দটা হয়তো বলব না। যেমন শিক্ষকদের সঙ্গে ডিসকাশন ছাড়া, ক্লারিফিকেশন ছাড়া বিষয়টা হয়েছে। আবার ছাত্রদের সঙ্গেও ধরেন, কোর্টের পর্যায়ে যেতে দেওয়া হয়েছে। এখন দুটি বিষয় তো আলাদা। এখন এই দুটি হয়তো যে কোনোভাবে হোক একসঙ্গে রাস্তায় চলে এসেছে। কিন্তু একটার সঙ্গে একটার কোনো সম্পর্ক আমি খুঁজে পাই না, টোটালি আলাদা।

প্রশ্ন : আগে যেমন ছাত্ররা শ্রমিকদের ডাকলে তারা সাড়া দিত বা শ্রমিকদের ডাকেও শিক্ষার্থীদের সাড়া দিতে দেখেছি আমরা। এখন ছাত্র ও শিক্ষকদের ক্ষেত্রে কি তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখেন?

এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার : সে অবস্থা এখন আছে বলে আমি মনে করি না। ছাত্র ও শিক্ষকদের এক হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ’৬৮, ৬৯, ৭০-এ আমাদের যে ঐক্য ছিল, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ছিল, ত্যাগের যে মনোভাব ছিল সেটা আর এখন নেই।

অনুলিখন : মোজাম্মেল হৃদয়

স্থগিত এইচএসসি পরীক্ষা ১১ সেপ্টেম্বর শুরু হতে পারে - dainik shiksha স্থগিত এইচএসসি পরীক্ষা ১১ সেপ্টেম্বর শুরু হতে পারে বিসিএস প্রশ্নফাঁসকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাইলেন সারজিস - dainik shiksha বিসিএস প্রশ্নফাঁসকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাইলেন সারজিস ইএফটিতে এমপিও শিক্ষকদের বেতন অক্টোবরে - dainik shiksha ইএফটিতে এমপিও শিক্ষকদের বেতন অক্টোবরে সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড় - dainik shiksha সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড় ‘সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছেন’ সন্দেহে বাড়ি ঘেরাও - dainik shiksha ‘সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছেন’ সন্দেহে বাড়ি ঘেরাও নিউইয়র্ক দিয়েই বিদেশ সফর শুরু করতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা - dainik shiksha নিউইয়র্ক দিয়েই বিদেশ সফর শুরু করতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা মতিঝিল আইডিয়ালের স্কুল ড্রেসে বাধ্যতমূলক হলো টুপি-স্কার্ফ - dainik shiksha মতিঝিল আইডিয়ালের স্কুল ড্রেসে বাধ্যতমূলক হলো টুপি-স্কার্ফ বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর ড. এইচ মনসুর - dainik shiksha বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর ড. এইচ মনসুর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003242015838623