বর্তমানে দেশের ৪৮ শতাংশ স্কুল শিক্ষার্থী ও ৯৫ দশমিক ৪ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী চিনিযুক্ত কোমল পানীয় পান করে। দেশে এমন মাত্রায় চিনিজাতীয় খাবারসহ তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণের কারণে অসংক্রামক রোগের হার বাড়ছে। বর্তমানে দেশে মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশ অসংক্রামক রোগে ঘটে। ফলে স্বাস্থ্য কর নীতি আরোপের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ও ব্যক্তির চিকিৎসাব্যয় কমানো সম্ভব।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় রাজধানীর ফার্স হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের ব্রিস্টো সম্মেলন কক্ষে ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় কর নীতি’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়।
অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর) ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে দেশের ৪৮ শতাংশ স্কুলশিক্ষার্থী ও ৯৫ দশমিক ৪ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী চিনিযুক্ত কোমল পানীয় গ্রহণ করে। প্রতিদিন কেউ এসব চিনিযুক্ত খাবার গ্রহণ করলে বছরে তার ওজন ৫ পাউন্ড বাড়ে। পাশাপাশি তাদের টাইপ-টু ডায়বেটিসের ঝুঁকি ২৬ শতাংশ বাড়ে। ফলে চিনিযুক্ত খাবার মানব স্বাস্থ্যের মারাত্মক ঝুঁকি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইদুর রহমান। এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. এনামুল হক, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বকারী (অতিরিক্ত সচিব) হোসেন আলী খোন্দকার, ভাইটাল স্ট্রাটেজিসের হেড অব প্রোগ্রামস শফিকুল ইসলাম ও পরামর্শক ফাহিমুল ইসলাম। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক।
ড. রুমানা বলেন, প্রতিবছর দেশে তামাকজনিত রোগে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী তামাকজনিত রোগে চিকিৎসাব্যয় ছিল প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা বর্তমানে আরও বেড়েছে। চিনিযুক্ত খাবার, পানীয় ও তামাকজাত দ্রব্য ছাড়াও পরিবেশের ওপর ক্ষতি করে এমন যেকোনো কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর পরিবেশ কর আরোপ করতে হবে। সেই অর্থ জনস্বাস্থ্যসহ জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয় রোধে ব্যয় করতে হবে।
বক্তারা মনে করেন চিনিযুক্ত খাবার, পানীয় ও তামাকজাত দ্রব্য ছাড়াও পরিবেশের ওপর ক্ষতি করে এমন যেকোনো কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর পরিবেশ কর আরোপ করা প্রয়োজন। এখান থেকে উপার্জিত অর্থ জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয় রোধে ব্যয় করতে হবে। এতে পরিবেশ বিপর্যয়ের ঝুঁকি কমে আসবে।
এ সময় তাঁরা তামাকের সহজলভ্যতা কমিয়ে আনতে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি; তামাকে কর ফাঁকির জায়গাগুলো চিহ্নিত করে তা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, রাজস্ব আদায়ে ডিজিটাল ব্যবস্থা চালুসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়কে নিয়মের মধ্যে আনতে একটি শক্তিশালী তামাক কর নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের তাগিদ দেন।