বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) নবনিযুক্ত ট্রেজারার (কোষাধ্যক্ষ) কর্নেল (অব.) আবু হেনা মোস্তফা কামাল খানকে অপসারণের দাবি জানিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাঁকে দুর্নীতিবাজ ও স্বৈরাচারের দোসর আখ্যা দিয়ে ১১৬ জন শিক্ষক প্রতিবাদলিপিতে স্বাক্ষর করেছেন।
এমনকি কোষাধ্যক্ষকে অপসারণ করা না হলে আগামীকাল মঙ্গলবার প্রশাসনিক ও একাডেমিক কাজ থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের একটি বৃহৎ অংশ। আজ সোমবার দুপুর ববির প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় ট্রেজারারের অপসারণ চেয়ে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।
কর্মসূচিতে কোস্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার কোনো আমলাকে ট্রেজারার হিসেবে মেনে নিতে পারছি না। আমাদের অধিকাংশ শিক্ষক এ দাবির সাথে একমত। আমরা সরকারকে অনুরোধ করব, যেন এই সাবেক সেনা কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিল করেন।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট একজন শিক্ষাবিদকে ট্রেজারার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হোক। যারা ফ্যাসিস্টদের দোসর বা দুর্নীতিগ্রস্ত তাদের পুনর্বাসন করা মানেই জুলাই বিপ্লবের রক্তের সাথে বেঈমানী করা। সাবেক সেনা এই কর্মকর্তাকে কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে অপসারণ করা না হলে আমরা শিক্ষকেরা সামনে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।’
মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. জামাল উদ্দীন বলেন, ‘আমরা শুনেছি রাতের আধারে ট্রেজারার এর দপ্তরে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁকে গাড়িও দেওয়া হয়েছে, এ ঘটনা দুঃখজনক। এমনকি তিনি নাকি ঢাকা থেকে অনলাইনে অফিসও করবেন। আমরা যে মানুষটিকে গ্রহণ করছিনা সেখানে কীভাবে তিনি অফিস করবেন সেটিই বোধগম্য নয়। আমরা অনতিবিলম্বে কোষাধ্যক্ষকে অপসারণ চাই। কারণ তিনি কলিমুল্লার সহযোগী হয়ে রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) অনেক অনিয়ম করেছেন।’
সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবু জিহাদ বলেন, ‘যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আমলা ও সাবেক সেনা কর্মকর্তার পুনর্বাসন হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় পারিচালিত হবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের শিক্ষাবিদদের দ্বারা। অথচ আমরা দেখতে পাচ্ছি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট না এমন একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’
অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সিরাজিস সাদিক, সৈয়দ আশিক-ই-ইলাহী, একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল আলিম বাসের ও সমাজকর্ম বিভাগের প্রভাষক মোস্তাকিম রহমান প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ নভেম্বর ববিতে ট্রেজারার হিসেবে নিয়োগ পান কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবু হেনা মোস্তফা কামাল খান। ওইদিন রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন তিনি। তার আগেই যোগদানে বা ক্যাম্পাসে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করার জন্য ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। পরে উপাচার্যের কার্যালয়ে আসেন সদ্য নিয়োগ পাওয়া ট্রেজারার। শিক্ষার্থীরা উপাচার্য কক্ষে ঢুকে ট্রেজারারের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ এনে তাকে যোগদানে বাধা দেন এবং ক্যাম্পাস থেকে তাকে চলে যেতে বলেন।
এদিকে গতকাল ববি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে কয়েক দফা হাতাহাতিতে জড়ান তাঁরা। উপাচার্য আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সভায় বসলেও সিদ্ধান্ত ছাড়াই হট্টগোলের মাধ্যমে তা শেষ হয়।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ফ্যাসিবাদের দোসর, বেরোবি সাবেক উপাচার্য ও জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর সহযোগী উপাচার্য শুচিতা শরমিন। কলিমুল্লাহর অনেক সহযোগীকে ববির গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করছেন উপাচার্য।