আমাদের দেশে এখনো বাল্যবিবাহের প্রবণতা অনেক বেশি। আমরা মাতৃমৃত্যু কমাতে চাই, তবে আমাদের দেশে এখনো শিক্ষকরা ক্লাসে লিঙ্গ শিক্ষা পড়াতে চান না। আমরা যদি লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা কমাতে চাই তাহলে আমাদের বাল্যবিবাহও কমাতে হবে। যথাযথ শিক্ষা ও সেবা দেয়ার নিশ্চয়তা এবং ব্যবস্থা উন্নত করতে পারলে দেশে মাতৃমৃত্যুর হারও কমানো সম্ভব হবে। রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল ‘লঞ্জ অব সিভিল প্ল্যাটফর্ম থ্রিজিরো অ্যাকশন নেটওয়ার্ক’ শীর্ষক প্রারম্ভিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন বক্তারা। পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ইউএনএফপিএ যৌথভাবে এ আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশে লিঙ্গ বৈষম্য কমাতে হলে থ্রিজিরো অ্যাকশনের এ তিনটি নীতি অনুসরণ করতে হবে। দেশের গ্রামীণ অঞ্চলে নারীরা এখনো নিরাপদ নয়। এখনো বাল্যবিবাহের প্রথার প্রচলন রয়েছে। আমরা চাই সবার সহযোগিতায় থ্রিজিরো অ্যাকশনের হাত ধরে এ সমস্যা সমাধানে একটি বিপ্লব সংঘটিত হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ও পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, দৈনিক সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ক্রিস্টিন ব্লখাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক মো. মইনুল ইসলাম, পিপিআরসির সিনিয়র ফেলো মোহাম্মদ আবদুল ওয়াজেদ, অ্যাকশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবিরসহ অনুষ্ঠানে সুশীল সমাজ, বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি, এনজিও এবং আইএনজিও, শিক্ষাবিদ, উন্নয়ন সহযোগী, জাতিসংঘ সংস্থা এবং বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তারা সংগঠনের কার্যক্রমের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।
এর আগে সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিপিআরসি এবং ইউএনএফপিএ যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এ সময় জাতীয় ও তৃণমূল সংগঠন এবং অ্যাক্টরদের এক করে নতুন নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ঘোষণা করা হয়। নতুন এ সংগঠনের নাম রাখা হয়েছে থ্রিজিরো অ্যাকশন নেটওয়ার্ক, যা ‘বৃহত্তর ক্রস-সেক্টরাল ডায়ালগ এবং সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততা উন্নীত করা, জ্ঞান ব্যবস্থাপনা এবং অ্যাডভোকেসিকে শক্তিশালীকরণ এবং থ্রিজিরো এজেন্ডা বাস্তবায়নের অগ্রগতি ট্র্যাককরণ’ এ তিনটি এজেন্ডা অনুসরণ করবে।
সংবাদ সম্মেলনে ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, আমাদের একই সঙ্গে একটি বড় সমন্বিত ধাক্কা দরকার। একটি থ্রিজিরোস ট্র্যাকার তৈরি করতে চাচ্ছি, যার মাধ্যমে আমাদের নিজস্ব প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহসহ সব ধরনের ডাটা ধারণ সম্ভব। এ উপলক্ষে ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করা প্রয়োজন।
ইউএনএফপিএ বাংলাদেশেরর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ক্রিস্টিন ব্লখাস এ উদ্যোগ সম্পর্কে ইউএনএফপিএর একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, পিপিআরসি এবং ইউএনএফপিএর এ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ হ্রাস, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ এবং মাতৃমৃত্যু কমানোর লক্ষ্যে একটি জাতীয় আন্দোলন গড়ে তুলতে সহায়তা এবং এ কর্মশালার মাধ্যমে সংশ্লিষ্টরা উজ্জীবিত হবে। ফলে তারা বাংলাদেশের থ্রিজিরো বাস্তবায়নে আরো সুনির্দিষ্ট এবং টেকসই সমাধান উদ্ভাবন করবেন।
সংগঠনটি একটি জাতীয় আহ্বায়ক কমিটি, বিষয়ভিত্তিক উপদেষ্টা কমিটি, তৃণমূল কেন্দ্রবিন্দু পরিচালক এবং একটি সেক্রেটারিয়েটের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছাপূর্বক সদস্য হওয়ার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সংগঠনটি কাঠামো এবং পরিচালনা পদ্ধতি একটি পরামর্শমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে।